ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আলোকচিত্র প্রদর্শনী দৃকে

পাহাড় অরণ্যের রূপ, কঠিন জীবন খণ্ড চিত্র

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৭ জুলাই ২০১৬

পাহাড় অরণ্যের রূপ, কঠিন জীবন খণ্ড চিত্র

মোরসালিন মিজান ॥ রূপের যে তার নেইকো শেষ, বাংলাদেশ...। বাংলাদেশের রূপের সত্যি কোন তুলনা হয় না। বিশেষ করে পার্বত্য এলাকার সৌন্দর্য মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে। মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়ের দিকে তাকালে মন ভাল হয়ে যায়। ঘন অরণ্য যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে। বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ঘুরে সম্প্রতি এ সৌন্দর্যের সন্ধান করেছেন কিছু আলোকচিত্রী। কেউ সৌখিন। শখের বসে ছবি তুলেন। কারও কাজই ছবি তোলা। ধানম-ির দৃক গ্যালারিতে এখন সেসব ছবির প্রদর্শনী। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া প্রদর্শনীতে পাহাড়ের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবন ও সংগ্রামের আলেখ্য। প্রদর্শনীর জন্য ছবি আহ্বান করা হয়েছিল অনেক আগেই। আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা আলোকচিত্রীরা ছবি জমা দেন। সেখান থেকে ৬৭ আলোকচিত্রীর ৯৯ আলোকচিত্র নির্বাচিত হয়েছে প্রদর্শনীর জন্য। এসব ছবি দিয়ে সাজানো গ্যালারি। যে যার মতো করে ক্লিক করেছেন। প্রতিটি ক্লিক যেন কথা বলে। পার্বত্য তিন জেলার সবুজ সুন্দরে চোখ যেন আটকে যায়। বারবার দেখা দৃশ্য নতুন করে দেখতে হয়। উদাহরণ হতে পারে সুবিনয় খিসার তোলা নদীর ছবিটি। হ্যাঁ, পাহাড় চিড়ে বয়ে চলা নদী। নদী এবং নারীও! কোন এক তরুণী তার একলা তরী বাইছেন। অবশ্য একলা ঠিক বলা যাবে না। সঙ্গে তার পোষা কুকুরটিও। এ কারণেই হয়ত ছবিটির নামকরণ করা হয়েছে- ফ্রেন্ডশিপ। আলোকচিত্রটির দিকে তাকিয়ে একই সঙ্গে অনুভব করা যায় নারী ও নদীর মধ্যকার সম্পর্কটি। নদীর যেখানে শেষ সেখানে অপেক্ষা করে আছে সবুজ পাহাড়। সেখানে পৌঁছতে যেন বদ্ধপরিকর নারী। প্রদর্শনীতে পাহাড়ে বসবাস করা বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতিদিনের জীবনের অনেক খুঁটিনাটি তুলে আনার প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়। কঠিন পাহাড়ে যে জীবন, তার সঙ্গে মিলেমিশে আছে সংগ্রাম। এ সংগ্রামে যথারীতি খুঁজে পাওয়া যায় নারীদের। ঘরে বসে নেই কেউ। আলোকচিত্রে ওঠে আসে জীবিকার প্রয়োজনে পাহাড়ী পথ ধরে ছুটে চলা নারীদের মুখ। অবশ্য ওই মংয়ের তোলা একটি আলোকচিত্রে নারীর সে মুখও পুরোপুরি দৃশ্যমান হয় না। কঠোর পরিশ্রমী নারী তার পিঠে কলাভর্তি ঝুড়ি বহন করছেন। সামনের দিকে নুয়ে থাকা শরীর। মুখটি তাই ভাল দেখা যায় না। বেশকিছু আলোকচিত্রে পুরুষের পাশাপাশি সমান শক্তি সামর্থ্যরে নারী। সবজি ফলমূল নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষা করছেন। তন্ময় দাসের একটি আলোকচিত্রে তেমন এক নারীকে খুঁজে পাওয়া যায়। নিজের কাজে যারপরনাই সাবলীল এই নারী বাঁশে তৈরি বিশেষ হুকোটাতে ঠোঁট গুঁজে দিয়েছেন। ঠিক তখনই ক্যামেরার ক্লিক। এভাবে একই আলোকচিত্র হরেক গল্প নিয়ে হাজির হয়। হাসানুজ্জামান প্রিন্সের আলোকচিত্রে যে নারী মুখ সেখানে বলিরেখা। বয়সের ভারে ন্যুব্জ প্রবীণ। আলোকচিত্রী বয়স আমলে নেননি। তুলে এনেছেন ‘সঙ অব এক্সপেরিয়েন্স।’ প্রদর্শনীর আলোকচিত্রে পাহাড়ের কঠিন জীবন। খ-চিত্র হয়ে সামনে আসে। হাত ধরে নিয়ে চলে। গভীরে। আরও গভীরে। তখন দেখা যায়, এ জীবন সংগ্রাম করে টিকে থাকার। সংগ্রামী জীবনে নির্মল আনন্দেরও যোগ আছে। ক্যামেরার ক্লিকে ওঠে আসা হাসিমুখগুলো সে কথা জানিয়ে দেয়। সবুজ প্রকৃতির মতোই স্নিগ্ধ হাসি। হাসিগুলো বেঁচে থাক। বাংলাদেশ এ্যাডভেঞ্চার ক্লাব আয়োজিত প্রদর্শনী চলবে মঙ্গলবার পর্যন্ত।
×