আজাদ সুলায়মান ॥ জঙ্গী, সন্ত্রাসী, গোলাবারুদ, অস্ত্র ও মাদকের সন্ধানে শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক চিরুনি অভিযান অপারেশন আইরিন। বাংলাদেশসহ এশিয়া প্যাসিফিকের ৩৩ দেশের বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ও সমুদ্রবন্দরে একযোগে চলছে এ অপারেশন। গত ৮ জুলাই থেকে এ অপারেশন শুরু হলেও শুক্রবার থেকে এ অভিযান আরও জোরদার করা হয়েছে। শুল্ক গোয়েন্দার এ অভিযানে সহায়তা দিচ্ছে র্যাব-বিজিবি ও কোস্টগার্ড। আন্তর্জাতিক পরিম-লে সন্ত্রাসী হামলাসহ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ও চোরাচালান প্রতিরোধে ‘এনফোর্সমেন্ট কমিটি অব দ্য কাস্টমস অপারেশন কাউন্সিল’-এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ অভিযান। বৃহস্পতিবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো হাউজে ডগ স্কোয়াডের মাধ্যমে চালানো হয় সাঁড়াশি অভিযান। একই কায়দায় দেশের প্রত্যেকটি বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ও সমুদ্রবন্দরেও অপারেশন আইরিন চালানোর বিশেষ প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। শুক্রবার ঢাকার বাইরে বেনাপোল স্থলবন্দরে চালানো হয় এ অভিযান। ডগ স্কোয়াডের পাশাপাশি থাকছে তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর বিশেষ অভিযান।
শুল্ক ও গোয়েন্দা অধিদফতরের মহাপরিচালক ডক্টর মইনুল খান জনকণ্ঠকে জানান, বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসী হামলার কারণে জননিরাপত্তা বিঘিœত হওয়া ছাড়াও সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘœকারী এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ, বিস্ফোরক ও মাদক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত। অনেক ক্ষেত্রেই মিথ্যা ঘোষণা ও ঘোষণা ছাড়া চোরাকারবারিরা নানা কৌশলে এসব অবৈধ পণ্যের পাচার করছে। মূলত এসব কারণেই এশিয়া প্যাসিফিক দেশগুলোতে একযোগে শুরু হয় এ অভিযান। এতে জঙ্গী ও সন্ত্রাসীদের ভিতে কাঁপন ধরবে।
শুল্ক গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, গত তিন বছরে বিভিন্ন দেশের কাস্টমস প্রশাসন হাজারেরও বেশি অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরকের চালান আটক করেছে। ‘এনফোর্সমেন্ট কমিটি অব দ্য কাস্টমস অপারেশন কাউন্সিল’-এর পর্যালোচনায় দেখা যায়, আসিয়ান ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এ ধরনের ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউসিও) অধীনে ‘রিজিওনাল ইন্টেলিজেন্স লিয়াজোঁ অফিস ফর এশিয়া এ্যান্ড প্যাসিফিক’ এ অভিযানের সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করছে। বাংলাদেশ এ সংগঠনের সক্রিয় সদস্য হিসেবে ‘অপারেশন আইরিন’ নামের অভিযানে অংশ নিচ্ছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর ৩৩ সদস্যবিশিষ্ট ন্যাশনাল কনট্যাক্ট পয়েন্টের (এনসিপি) সদস্য হিসেবে অভিযানের বিষয়টি সার্বিকভাবে সমন্বয় করছে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর এ অভিযানের অংশ হিসেবে পোস্টাল এবং কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে নিয়ে আসা পার্সেলগুলোর স্ক্যান কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
জানা যায়, এ অভিযান জোরদার করার লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার দুপুরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ফ্রেইট ইউনিটের পোস্টাল ও কুরিয়ার শাখায় আগত পার্সেলগুলো র্যাবের ডগ স্কোয়াড দিয়ে বিশেষভাবে তল্লাশি করা হয়। ডগ স্কোয়াড সন্দেহজনক একটি প্যাকেট শনাক্ত করে। যার মধ্যে একটি প্লাস্টিকের কৌটায় ক্যাপসুল জাতীয় দ্রব্য পাওয়া যায়, যা রাসায়নিক পরীক্ষাসহ পরবর্তী আইনী পদক্ষেপের জন্য সাময়িকভাবে আটক করা হয়েছে।
এদিকে এ অভিযানের অংশ হিসেবে বুধবার জিপিও’র বিমানবন্দরের কার্যালয় থেকে ৩০ কেজি ওজনের একটি পার্সেলে ভায়াগ্রাসহ বিভিন্ন ধরনের সাত হাজার ৪০০ পিস যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট আটক করা হয়। এছাড়াও ছয় পিস ধারালো ছুরি ও ১৫ লাখ টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আটক করা হয়। অপারেশন আইরিনের অংশ হিসেবে গত ৮ জুলাই থেকে কাস্টমসের কয়েকটি দল এ অভিযান পরিচালনা করে আসছিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শুক্রবার ডক্টর মইনুল খান জনকণ্ঠকে বলেন, অপারেশন আইরিন যদি সফল হয় তাহলে অনেক কিছু ধরা পড়বে, যা রাষ্ট্র ও জননিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। কেননা ইতোমধ্যে শাহজালাল বিমানবন্দরে ধরা পড়েছে নকল ভায়াগ্রা ও কিছু মেডিসিন, যা রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। আরও আছে যৌন উত্তেজক কেমিক্যাল। যেগুলো বিশ্বব্যাপী জঙ্গী, সন্ত্রাসী ও চোরচালানিরা ব্যবহার করে। এরই অংশ হিসেবে শুক্রবার বেনাপোলে অভিযান চালিয়ে ধরা হয়েছে বিপুল পরিমাণ বিদেশী মুদ্রা। এ সময় মোহাম্মদ ফরিদ নামের এক যাত্রীকে আটক করা হয়। পরে তার কাছ থেকে জব্দ করা হয় ৮২ লাখ টাকার সমমূল্যের সৌদি, ভারতীয় ও মালয়েশিয়ার মুদ্রা। এসব মুদ্রা হয় চোরাচালান, নয়ত জঙ্গী ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যেই আনা হয়েছে। এভাবে যদি দেশের অন্যান্য বন্দরগুলোতেও ধরা পড়ে মুদ্রার চালান, তাহলে সেটা হবে বড় বিপজ্জনক। এর আগের দিনও এক যাত্রীর কাছ থেকে জব্দ করা হয়েছে ১৫ লাখ টাকার সমপরিমাণ বিদেশী মুদ্রা। এসব কিসের ইঙ্গিত? অপারেশন আইরিন সফল হলে অবশ্যই এ ধরনের চোরাচালান ও সন্ত্রাসীদের সিন্ডিকেটের ভিত নাড়িয়ে দেবে।
তিনি জানান, আগামী ২৩ জুলাই এ অপারেশন শেষ হওয়ার পর রিজিওনাল ইন্টেলিজেন্স লিয়াজোঁ অফিস ফর এশিয়া প্যাসিফিকের কাছে ঢাকা থেকে প্রতিবেদন পাঠানো হবে। কাজেই এ অভিযানকে সফল করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: