ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১

রোনাল্ডোদের অপেক্ষার অবসান

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১২ জুলাই ২০১৬

রোনাল্ডোদের অপেক্ষার অবসান

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এক যুগ আগেও কেঁদে ছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। এক যুগ পরও কাঁদলেন। কিন্তু উপলক্ষ দুটির মধ্যে ব্যবধান আকাশ-পাতাল। ২০০৪ সালে ইউরোর শিরোপা হারিয়ে কেঁদেছিলেন; এবার ২০১৬ সালে কাঁদলেন ইউরোর ট্রফি ছুঁয়ে। রবিবার রাতে প্যারিসে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে স্বাগতিক ফ্রান্সকে অতিরিক্ত সময়ের গোলে ১-০ ব্যবধানে পরাজিত করে পর্তুগাল। নির্ধারিত ৯০ মিনিট গোলশূন্য থাকার পর অতিরিক্ত সময়ে ১০৯ মিনিটে পর্তুগীজদের হয়ে জয়সূচক গোলটি করেন বদলি হিসেবে নামা এডার। নিজেদের ইতিহাসে প্রথম ইউরো ট্রফি জিতে ইতিহাস গড়েছে পর্তুগীজরা। এই জয়ে ২০০৪ সালে নিজ দেশে অনুষ্ঠিত আসরের ফাইনালে গ্রীসের কাছে হারের কষ্ট ভুলতে পেরেছেন রোনাল্ডো। ফাইনালে স্বাগতিক ফ্রান্সকেই ফেবারিট হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন ফুটবল প-িতরা। ফরাসীদের সৌরভ ছড়ানো ফুটবলের পাশাপাশি অতীত পরিসংখ্যান এগিয়ে রেখেছিল গ্রিজম্যান, পোগবাদের। তার ওপর ম্যাচের ২৫ মিনিটে পর্তুগালের সেরা তারকা রোনাল্ডোকে উঠে যেতে হয় আঘাত পেয়ে। তখন কে ভেবেছিল শেষ হাসি হাসবে পর্তুগীজরা? কিন্তু বিধাতার নিয়তি খ-াবে কে! অধিনায়ককে হারিয়ে শোকে কাতর না হয়ে পর্তুগালের ফুটবলাররা দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করেছে। ফরাসীদের একের পর এক সাঁড়াশি আক্রমণ রুখে দিয়ে শেষ পর্যন্ত বিজয়ীর হাসি হেসেছে ফার্নান্ডো সান্টোসের দলই। ইউরোর মুকুট পরা পর্তুগাল এখন তাই ইউরোপের সেরা দল। ইতিহাস গড়া এই সাফল্যের পর বিজয়ী বীরদের বরণ করে নিয়েছে পর্তুগীজরা। ট্রফি নিয়ে দেশে ফিরেছেন রোনাল্ডো, ন্যানি, এডাররা। রাজধানীর লিসবন বিমানবন্দরে পর্তুগাল দল পৌঁছার পর হাজার হাজার ভক্ত-সমর্থক উষ্ণ ভালবাসায় বরণ করে নেন জাতীয় বীরদের। সোমবার সকাল থেকেই লিসবন বিমানবন্দরে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। স্থানীয় সময় দুপুরে রোনাল্ডোদের বহন করা বিশেষ বিমান রানওয়ে স্পর্শ করতেই উল্লাসে ফেটে পড়েন হাজার হাজার জনতা। বিমান থেকে স্বপ্নের ট্রফি নিয়ে সবার আগে বেরিয়ে আসেন অধিনায়ক রোনাল্ডো ও কোচ সান্টোশ। এরপর ফাইনালের সেরা খেলোয়াড় পেপেকে সঙ্গে নিয়ে বিমান থেকে নেমে আসেন অন্য সদস্যরা। বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে ছাদখোলা দোতলা বাসে করে বিজয় মিছিল করে প্রেসিডেন্ট মার্সেলো রেবেলো ডিসুজার সঙ্গে দেখা করেন ইউরোপের নতুন চ্যাম্পিয়নরা। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর দলকে অভিনন্দন জানিয়ে পর্তুগাল প্রেসিডেন্ট ডিসুজা বলেন, ইউরোপে আমরাই এখন সেরা। আমরা সবাইকে দেখিয়ে দিয়েছি যে আমরা কী ধাতুতে গড়া। আমরা বলিষ্ঠ, ঐক্যবদ্ধ, সব ধরনের প্রতিকূলতা মোকাবেলায় সক্ষম। এমনকি রোনাল্ডোকে ফাইনালে হারিয়েও আমরা ভেঙ্গে পড়িনি। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করে সেই বাসেই পুরো লিসবন শহর প্রদিক্ষণ করেন বিজয়ী বীরেরা। অথচ ম্যাচের শুরুর দিকে চোটের কারণে কাঁদতে কাঁদতে উঠে যেতে হয় পর্তুগালের সেরা তারকা রোনাল্ডোকে। গোটা ম্যাচেই তিনি ডাগআউটে অস্থির পায়চারি করেন। ম্যাচ শেষে শিরোপা জয়ের আনন্দে আবারও কাঁদেন। এটা ছিল আনন্দ অশ্রু। অথচ কে জানত, এই পর্তুগাল হবে চ্যাম্পিয়ন। যারা গ্রুপ পর্বে জিততে পারেনি একটি ম্যাচও। তিন ম্যাচই ড্র করে গ্রুপের তৃতীয় হয়ে কোনমতে উঠে এসেছিল নকআউট পর্বে। সেই পর্তুগীজরাই শেষ পর্যন্ত জয় করল ইউরোপের চ্যাম্পিয়ন মুকুট।
×