ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

রাঙ্গাবালীতে দুর্ভোগে মানুষ

চরাঞ্চল প্লাবিত

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ২১ জুন ২০১৬

চরাঞ্চল প্লাবিত

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগের প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ। সামুদ্রিক লোনা পানিতে দফায় দফায় প্লাবিত হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। ভেসে যাচ্ছে বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল। চলতি পূর্ণিমা তিথির প্রভাবে যা আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। জোয়ারের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় বসতবাড়ি, ধানিজমি ও গবাদিপশু নিয়েও মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ মেরামত, পুনর্নির্মাণ ও সংস্কার না করায় এ দুরবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মানুষের দুর্ভোগের সত্যতা স্বীকার করলেও অর্থ বরাদ্দের অভাবকে এজন্য দায়ী করছে। এলাকাবাসী জানান, চরমোন্তাজ ইউনিয়নের অবস্থান জেলার সর্বশেষ দক্ষিণ প্রান্তে এবং সাগর ঘেঁষে। চরমোন্তাজের দক্ষিণে আর কোন জনপদ নেই। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, মহাসেন এবং সর্বশেষ রোয়ানুর প্রভাবে প্রবল জলোচ্ছ্বাসে ইউনিয়নের নয়ারচর, চরআন্ডা ও চরবেষ্টিন এলাকায় তিন কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ পুরোপুরি বিলীন হয়ে গেছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও দুই কিলোমিটার বাঁধ। সরেজমিন দেখা গেছে, ইউনিয়নের নয়ারচর এলাকায় প্রায় এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে। ভাঙ্গা অংশ দিয়ে জোয়ারে সমুদ্রের লবণ পানি এলাকার ভেতর ঢুকছে। আবার ভাটায় নেমে যাচ্ছে। তবে কোথাও কোথাও ভাটায় পানি নেমে যাওয়ার আগেই আবার জোয়ারের পানি ঢুকে তলিয়ে যাচ্ছে গোটা এলাকা। ঘরবাড়ির চারপাশে পানি থই থই করে। দেখা দেয় বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট। নয়ারচরের বাসিন্দা সিরাজ ফকির বলেন, ‘পোলা-মাইয়া লইয়া ভয়ে থাহি। বাড়ির চাইর ধারে নদী। রক্ষা করণের লাইগা আছিল বাঁধ, তা ভাইঙ্গা গ্যাছে। এহন ভয় আরও বেশি। কখন যে পানি আমাগোরে ভাসাইয়া লইয়া যায় কে জানে। এহন আল্লাহর ওপর ভরসা কইরা এই চরে আছি।’ স্থানীয়রা জানান, সামুদ্রিক জোয়ার-ভাটা অব্যাহত থাকায় ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ দিয়ে লবণাক্ত পানি ঢুকে চরমোন্তাজ ইউনিয়নের নয়ারচর, চরবেষ্টিন, চরআন্ডা, উত্তর চরমোন্তাজসহ অন্তত ৬টি গ্রাম দফায় দফায় প্লাবিত হচ্ছে। এর সাথে পূর্ণিমার প্রভাবে সমুদ্রে জোয়ারের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। রবিবার থেকে শুরু হয়েছে পূর্ণিমার প্রভাব। এতে জোয়ারে স্বাভাবিকের চেয়ে তিন-চার ফুট পানি বেড়ে গেছে। জোয়ারের পানি বেড়ে পেলে চরের বাসিন্দারা ঘরবাড়ি ছেড়ে গবাদিপশু ও সাংসারিক প্রয়োজনীয় মালামাল নিয়ে উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে। উত্তর চরমোন্তাজ গ্রামের কৃষক নাসির খান জানান, ইউনিয়নটির চারপাশে নদী ও সাগর। চরের মানুষ এমনিতেই ঝড়-বন্যায় কাবু। তার ওপর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় নতুন করে জলোচ্ছ্বাস আতঙ্ক বিরাজ করছে সবার মধ্যে। চরআন্ডা গ্রামের শহিদুল মাঝি জানান, একের পর এক ঘূর্ণিঝড়ে চরআন্ডার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে। ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুতেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বাঁধ সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। চরমোন্তাজ ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ হানিফ মিয়া জানান, ঝড়-বন্যাসহ নানা ধরনের বৈরী প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে এ চরের মানুষ বেঁচে আছে। এরপর আবার বেড়িবাঁধ ভাঙ্গায় নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বেশ কয়েকটি গ্রাম হুমকির মধ্যে রয়েছে। যখন তখন বড় ধরনের জলোচ্ছ্বাস হলে এলাকার বাসিন্দাদের বাঁচার উপায় থাকবে না। খুব দ্রুত বাঁধ মেরামত করা দরকার। বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধের কারণে এলাকা প্লাবিত হচ্ছে এবং মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছেÑ বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের জানান, জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধগুলো পরিদর্শন করে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার, পুনর্নির্মাণ ও মেরামতের কাজ করা হবে।
×