ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

কাল থেকে ট্রেনের আগাম টিকেট

অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু দক্ষিণ-পূর্ব ও উত্তরের বাসযাত্রীদের

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২১ জুন ২০১৬

অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু দক্ষিণ-পূর্ব ও উত্তরের বাসযাত্রীদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঈদ-উল ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের জন্য দূরপাল্লা বাসের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে। সোমবার সকাল ছয়টা থেকে রাত পর্যন্ত রাজধানীর টিকেট কাউন্টার-গুলোতে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের যাত্রীদের সুবিধার্থে অগ্রিম টিকেট বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি প্রতি বছরের মতো এবারও বাড়তি অর্থ নেয়া, দেরিতে টিকেট বিক্রি, টিকেট সংগ্রহে ভোগান্তি, টিকেট না পাওয়াসহ নানা অভিযোগ ছিল যাত্রীদের। এদিকে আজ মঙ্গলবার থেকে লঞ্চের টিকেট বিক্রির কথা থাকলেও এ নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ বলছে, ২৬ রোজার বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত। লঞ্চ মালিক সমিতি বলছে ২০ রোজা থেকে বিক্রি হবে কেবিনের টিকেট। এদিকে বুধবার থেকে শুরু হবে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি। কল্যাণপুরে টিআর পরিবহনের কাউন্টারে ভোর পাঁচটা থেকে টিকেটের জন্য ভিড় জমান অনেকে। তাদের অভিযোগ, সকাল ছয়টা থেকে টিকেট বিক্রি শুরুর কথা থাকলেও দেড় ঘণ্টা পর কাউন্টার খোলা হয়েছে, টিকেট দেয়াও হচ্ছে খুব ধীরগতিতে। টিআর পরিবহনের বাসের আগাম টিকেটের দাম বেশি নেয়ার অভিযোগ তুললেন রাজশাহীর টিকেট কিনতে আসা জাহিদুল ও শামীম। তারা জানান, ঢাকা থেকে রাজশাহীর ভাড়া আগে ৪৫০-৫০০ টাকা নেয়া হতো। সেটা আজকে ৫৬০ টাকা নেয়া হচ্ছে। তবে টিআর পরিবহনের কল্যাণপুর কাউন্টারের ব্যবস্থাপক মোতাহার হোসেন টিকেট দিতে দেরির কথা স্বীকার করলেও ভাড়ার বেশি নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলে, কাউন্টারের স্টাফদের আসতে দেরি হওয়ায় গুছিয়ে উঠতে একটু সময় লেগেছে। তবে আমরা বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়াই নিচ্ছি। পোশাককর্মী আবু সাইদ গাবতলীর হানিফ কাউন্টারে এসেছিলেন রাজশাহীর টিকেট নিতে। তিনি বললেন, সাড়ে পাঁচটার কাউন্টার টিকেট পেলাম ১০টায়। তাও ৪ তারিখের টিকেট চেয়েছিলাম পেলাম ৫ তারিখের। বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি ও শ্যামলী পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, আজ সকাল থেকে বাসের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত যে ভাড়া আছে তাই নেয়া হবে। এর চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করা হবে না। যদি কেউ বেশি ভাড়া নেয়, তাহলে সমিতির পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, ঈদযাত্রায় ৩০ জুন ও আগামী ৪ জুলাইয়ের টিকেটের চাহিদা থাকছে সবচেয়ে বেশি। এবারের ঈদে সরকারী চাকরিজীবীদের অনেকেই ৬ জুলাইকে সম্ভাব্য ঈদের দিন ধরে ৩০ জুন শেষ কার্যদিবস হিসেবে বাড়ি যাওয়ার টিকেট চাইছেন। উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ৬০টির বেশি রুটে ঈদের অগ্রিম টিকেট সংগ্রহ করছেন বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা। আগামী ২৩ জুন পর্যন্ত বাসের টিকেট বিক্রি করার কথা জানান তিনি। এরপর টিকেট থাকা সাপেক্ষে যাত্রীরা সংগ্রহ করতে পারবেন। ঈদে বাড়ি ফেরা নিশ্চিত করতে ভোর থেকে রাজধানীর গাবতলী, কল্যাণপুর ও শ্যামলীর, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় দূরপাল্লার কাউন্টারগুলোতে যাত্রীদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়ে। তবে বাস কাউন্টারের কর্মীরা বলছেন, ১৫ রমজানের পর থেকে অর্থাৎ মঙ্গলবার থেকে যাত্রীদের অগ্রিম টিকেট সংগ্রহের চাপ আরও বাড়বে। পরিবহন মালিকরা বলছেন, চলতি সপ্তাহের মধ্যেই ট্রেন ও লঞ্চের টিকেট বিক্রি শুরু হবে। তাই অন্যান্য বছরের মতো এবার বাসে যাত্রী চাপ কম হতে পারে। তারা বলছেন, বেসরকারী চাকরিজীবীরা ৪ জুলাই সর্বশেষ কার্যদিবস ধরে বাড়ি যাওয়ার দিন ঠিক করেছেন। এজন্যই এই দুদিনের টিকেটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। টিকেট বিক্রেতাদের মত হচ্ছে, এই দুদিনের টিকেটের চাহিদা মেটাতে সবচেয়ে বেশি হিমশিম খেতে হবে। তবে ১ ও ৫ জুলাইয়ের টিকেটের চাহিদাও বেশি থাকবে। হানিফ পরিবহনের মহাব্যবস্থাপক আবদুস সামাদ বলেন, বাস মালিকদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সোমবার সকাল ছয়টা থেকে কাউন্টারগুলোর সামনে ঈদের অগ্রিম টিকেট বিক্রি চলছে। প্রথমদিনে যাত্রীদের বেশিরভাগই টিকেট পেয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তিনি আরও বলেন, ধরে নেয়া হচ্ছে ৬ জুলাই ঈদ হবে। সে অনুসারে সরকারী কর্মজীবীরা বেশির ভাগই একদিনের আগাম ছুটি নিয়ে ৩০ জুন শেষ অফিস করবেন। ওই দিন পরিবারসহ অনেকে ঢাকা ছাড়বেন। তাই এদিনের টিকেটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এছাড়া বেসরকারী চাকরিজীবীরা ঈদের শেষ কর্মদিবস ৪ জুলাই মনে করে ওই দিনের অগ্রিম টিকেট চাইবেন বলেই আমাদের ধারণা। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ট্রেনের অগ্রিম টিকেট দেয়া হবে বুধবার সকাল ৮টা থেকে। ফিরতি যাত্রার টিকেট বিক্রি হবে ৪ থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত। ২২ জুন বিক্রি হবে ১ জুলাই যাত্রার টিকেট। ২ জুলাই যাত্রার টিকেট বিক্রি হবে ২৩ জুন। একইভাবে ৩, ৪ ও ৫ জুলাইয়ের ট্রেনের টিকেট বিক্রি হবে যথাক্রমে ২৪, ২৫ ও ২৬ জুনের। এবার ঢাকার কমলাপুর থেকে দৈনিক প্রায় ৪৩ হাজার অগ্রিম টিকেট বিক্রির পরিকল্পনা রয়েছে। এর ২৫ শতাংশ অনলাইনে বিক্রি হবে। অনলাইনের নিশ্চিত করা টিকেটও সংগ্রহ করতে হবে কমলাপুর থেকে। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য (ভিআইপি) ও রেলওয়ে কর্মীদের জন্য ৫ শতাংশ করে কোটা সংরক্ষণ করা হবে। কমলাপুর ছাড়াও চট্টগ্রাম ও সিলেটে ঈদের অগ্রিম টিকেট বিক্রি হবে। আর ফিরতি টিকেট বিক্রি হবে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, লালমনিরহাট, খুলনা, রংপুর, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন স্টেশনে। ঢাকা নদী বন্দরের বিআইডব্লিউটিএ যুগ্ম পরিচালক গুলজার আলী সোমবার জনকণ্ঠকে বলেন, ১৫ রোজা থেকে লঞ্চের অগ্রিম টিকেট বিক্রির কথা থাকলেও এ নিয়ে কিছুটা জটিলতা দেখা দিয়েছে। তিনি জানান, এ ব্যাপারে ২৬ রোজায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বৈঠক ডাকা হয়েছে। এ বৈঠকে অগ্রিম টিকেট বিক্রির সিদ্ধান্ত হবে বলে জানান তিনি। লঞ্চ মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, ২০ রোজা থেকে লঞ্চের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হবে। এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআরটিসি) বাসের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হবে ২৬ জুন থেকে। সোমবার বিআরটিসি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক শেষে বিআরটিসির পরিচালক প্রশাসন মোঃ শামসুল আলম জনকণ্ঠ’কে জানান, ২৬ তারিখে থেকে ১-৫ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন রুটের অগ্রিম টিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন যাত্রীরা। তিনি জানান, বিশেষ করে বেশি দূরত্বের রুটগুলোতে অগ্রিম টিকেট বিক্রির বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। মতিঝিল, কল্যাণপুর ও জোয়ারসাহারা বাস ডিপো থেকে টিকেট বিক্রির কথা জানান তিনি। বলেন, যাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধা নিশ্চিত করতে ৫০টি গাড়ি ডিপোতে স্টেনবাই রাখা হবে। কোন রুটে যাত্রী বেশি হলে এসব গাড়ি দিয়ে যাত্রী পরিবহন করা হবে। নিয়মিত গাড়ির বাইরে আরও ৪৫০টি বাস বিভিন্ন ডিপো থেকে ছেড়ে যাবে।
×