ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদ কারুশিল্প মেলা

দেশী কাপড়, ঐতিহ্য আধুনিকতা ও রুচির অনিন্দ্য প্রকাশ

প্রকাশিত: ০৫:১১, ২০ জুন ২০১৬

দেশী কাপড়, ঐতিহ্য আধুনিকতা ও রুচির অনিন্দ্য প্রকাশ

মোরসালিন মিজান ॥ ঈদ মানেই পছন্দের কেনাকাটা। যে সে পছন্দ নয়। সবচেয়ে ভাল আর সুন্দর পোশাকটি চাই। রোজার প্রথম দিন থেকে সেই পোশাকের খোঁজে মানুষ হন্যে। রাজধানী ঢাকার বিখ্যাত সব মার্কেটে উপচেপড়া ভিড়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে বেচাকেনা। তবে, ঈদ মেলার স্বতন্ত্র আবেদন। এখন শহরের বিভিন্ন প্রান্তে এ ধরনের মেলা ও প্রদর্শনীর আয়োজন করা হচ্ছে। দেশী পোশাক ও এক্সক্লুসিভ ডিজাইনের কারণে অনেকেই মেলা ঘুরে দেখছেন। পছন্দের পোশাক খুঁজে নিচ্ছেন। ঈদ সামনে রেখে এবারও আগেভাগে মেলার আয়োজন করা হয় অফিসার্স ক্লাবে। মহিলা সমিতির সদস্যরা এই মেলার আয়োজন করেন। বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া মেলা শনিবার শেষ হয়। তিনদিনব্যাপী মেলা ঘুরে দেখা যায়, দেশীয় ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সুন্দর একটি সমন্বয় ঘটানোর চেষ্টা করা হয়েছে। উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের সব পোশাক ঘরে তৈরি। মেলার পরিবেশটাও ছিল ঘরোয়া। ৫০টির মতো স্টল। সকলেই নারী উদ্যোক্তা। নারীদের যত ধরনের পোশাক, এখানে দেখা যায়। স্ক্রীনপ্রিন্ট, এম্ব্রয়ডারি, বুটিক, বাটিক, এ্যাপ্লিকের কাজ ছিল নজরকাড়া। প্রতিটি পোশাকে যতেœর ছাপ। আফরিন নামের এক উদ্যোক্তা জানান, তাদের পোশাক সংখ্যায় কম। সীমিত ডিজাইন। একই কারণে খুব এক্সক্লুসিভ। বিক্রিও ভাল। রুচিশীল ক্রেতারা পছন্দ হওয়া মাত্রই কিনে নিয়েছেন। মেলায় ছিল দরজা ও জানালার বাহারি পর্দা, শৌখিন পণ্য, গৃহসজ্জা সামগ্রী। প্রায় একই দৃশ্য দেখা গেল বিসিক আয়োজিত কারুশিল্প প্রদর্শনীতে। রবিবার থেকে মতিঝিলের নিজস্ব ভবনে এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের উদ্যোক্তারা নিজেদের তৈরি কারুপণ্য নিয়ে মেলায় যোগ দিয়েছেন। সকালে কারুশিল্প প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বিসিকের পরিচালক মোঃ মোস্তফা কামাল। মোঃ শফিউর রহমানের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রধান নক্সাবিদ বশীর আহমেদ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর মেলা ঘুরে দেখা যায়, ভবনের ঠিক নিচে ৬০টির মতো স্টল। পাশাপাশি সাজানো। প্রতিটি স্টলে বিভিন্ন ধরনের হস্ত ও কুটির শিল্পপণ্য। ঈদ উপলক্ষে আছে শাড়ি থ্রিপিস। বাচ্চাদের পোশাক। এ্যাপ্লিক স্ক্রীনপ্রিন্ট ব্লক বুটিক বাটিকের কাজ মুগ্ধ করে রাখে। প্রদর্শনীতে আছে অহংকারের নক্সিকাঁথা। বিছানার চাদর, পর্দা, বালিশ কভার, কুশন কভারও স্বতন্ত্র সৌন্দর্যকে তুলে ধরছে। বাঁশ এবং বেত শিল্পেরও চমৎকার প্রদর্শনী। শহুরে জীবনের সঙ্গে যায় এমন অনেক কিছু তৈরি করেছেন কারিগররা। চামড়া শিল্পের নিদর্শন হিসেবে আছে ভ্যানিটি ব্যাগ, মানিব্যাগ, কোমরের বেল্ট। এসব মেলায় সব সময়ই থাকে পাটপণ্য। এক সময়ের সোনালি আঁশ নিয়ে নতুন করে গবেষণা হচ্ছে। প্রদর্শনীতে আছে হরেকরকমের চটের ব্যাগ। বিসিকের চীফ ডিজাইনার এসএম শামসুদ্দীন জানান, তাঁরা নিয়মিতভাবে আগ্রহী ছেলেমেয়েকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। প্রশিক্ষণ নেয়া ছেলেমেয়েদের ক্লাসের কাজ দিয়ে সাজানো হয়েছে দ্বিতীয় তলার প্রদর্শনী। এখানে কোন পণ্য বিক্রির জন্য নয়। তবে নিচতলার সব স্টলে চলছে বেচাকেনা। আগে প্রশিক্ষণ নেয়া উদ্যোক্তারা এখানে নিজেদের তৈরি বিভিন্ন পণ্য সাজিয়ে বসেছেন। আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশব্যাপী ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প খাতের উন্নয়নে দীর্ঘদিন যাবত উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন ধরনের সেবা-সহায়তা প্রদান করে আসছে বিসিক। লক্ষ্যÑ উক্ত খাতের উন্নয়ন ও বিকাশ ঘটিয়ে উৎপাদন, আয়বৃদ্ধি ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি। এ লক্ষ্য অর্জনে বিসিক কর্তৃক অন্যান্য কাজের পাশাপাশি নক্সা কেন্দ্রের মাধ্যমে ব্লক, বাটিক প্রিন্টিং, পুতুল তৈরি, স্ক্রীনপ্রিন্টিং, প্যাকেজিং, বাঁশ-বেতের কাজ, পাটজাত হস্তশিল্প, চামড়াজাত পণ্য, ধাতব শিল্প, বুনন শিল্প ও ফ্যাশন ডিজাইন ইত্যাদি ১২টি ট্রেডে এ পর্যন্ত ২৭ হাজার ৯৬ উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। নক্সা ও নমুনা উদ্ভাবন ও বিতরণ করা হয়েছে যথাক্রমে ৩১ হাজার ২৯৬ এবং ৬২ হাজার ৭৮৯টি। মেলা চলবে আগামী ২৩ জুন পর্যন্ত। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মেলা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। একই দিন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শনী গ্যালালিতে উদ্বোধন করা হয়েছে ঐতিহ্যবাহী জামদানি প্রদর্শনীর। বাংলার মসলিনের একটি উল্লেখযোগ্য ধারা জামদানি। বিভিন্ন স্টল ঘুরে মন সত্যি ভরে যায়। কত নামের জামদানি! যেমনÑ তেরছা, জলপাড়, আঙ্গুরলতা, কাউয়ার ঠ্যাঙ-পাড়, বাঘনলি, জুঁইবুটি, ময়ূরকণ্ঠী। আছে পান্না-হাজরা, করোলা, দুবলাজাল, বুটিজাল, জালার, কলারফানা, আদারফানা। আরও আছে সাবুরগা, বলিহার, শাপলাফুল, ময়ূরপ্যাঁচপাড়, কলমিলতা, চন্দ্রপাড়, ঝুমকা। দশদিনব্যাপী প্রদর্শনীর প্রথম দিনেই এসব জামদানি দেখতে ভিড় করেছিলেন শৌখিন ক্রেতা। না, এমন দু’একটি নয়। ঈদ উপলক্ষে চলছে আরও বেশ কয়েকটি মেলা। দেশীয় পোশাকের প্রতি যাদের টান, যারা রুচির প্রশ্নে আপোসহীন তাদের জন্য এই মেলার সত্যি তুলনা হয় না। রোজার প্রথম দিন থেকে শুরু হওয়া এসব মেলা ঈদের আগের দিন পর্যন্ত চলবে।
×