ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

দু’এক দিনের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডের রায়ের রিভিউ আবেদন করবেন মীর কাশেম

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ১৮ জুন ২০১৬

দু’এক দিনের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডের রায়ের রিভিউ আবেদন করবেন মীর কাশেম

আরাফাত মুন্না ॥ একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীর মৃত্যুদ- বহাল রেখে সুপ্রীমকোর্টের দেয়া রায়ের রিভিউ চেয়ে দু’এক দিনের মধ্যে আবেদন দাখিল করেছেন তার আইনজীবীরা। আগামী ২০ জুন সোমবার শেষ হবে মীর কাশেমের রিভিউ আবেদন দাখিলের শেষ দিন। মীর কাসেমের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তারা রিভিউ আবেদন দাখিল করবেন। এর আগে মীর কাসেমের মৃত্যুদ- বহাল রেখে সুপ্রীমকোর্টের দেয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি গত ৬ জুন প্রকাশ করা হয়। পরে ওইদিনই কুখ্যাত এই যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুপরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আইন অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে আপীলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করার সুযোগ পাবেন মীর কাশেম আলী। তবে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পরই দ- কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু করবে কারা কর্তৃপক্ষ। আর আসামি রিভিউ আবেদন করলে ওই দ- কার্যকর প্রক্রিয়া স্থগিত থাকবে। গত ৬ জুন পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, নিয়ম অনুযায়ী মীর কাশেম আলী ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ করার সুযোগ পাবেন। তিনি (মীর কাশেম) রিভিউ না করলে দ- কার্যকরের পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু করবে কারা কর্তৃপক্ষ। এদিকে, গত ১১ জুন কাশিমপুর কারাগারে ছেলে ও আইনজীবীরা সাক্ষাত করলে রায়ের রিভিউ আবেদন করতে নির্দেশ দেন মীর কাশেম আলী। সে হিসেবে আগামী ২০ জুনের আগে যে কোনো রিভিউ করা হতে পারে বলে জানান তার আইনজীবীরা। এ বিষয়ে মীর কাসেমের আইনজীবী মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, মীর কাশেম আলীর রিভিউ আবেদনের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। দু’একদিনের মধ্যেই আপীল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আমরা আবেদন দাখিল করবো। বহু প্রতীক্ষার পর ২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর আপীলের সপ্তম মামলা এটি। যার আপীলের চূড়ান্ত রায়ের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। তবে রায় কার্যকরে আগে রিভিউ আবেদন এবং রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষার চাওয়ার সুযোগ পাবে এই যুদ্ধাপরাধী। এ বিষয়ে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, দ-ের বিষয়ে বিচারিক আদালত অর্থাৎ ট্রাইব্যুনাল থেকে মৃত্যুপরোয়ানা জারি করলেও রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়া আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। রিভিউ আবেদনে রায়ে মৃত্যুদ- বহাল থাকলে রাষ্ট্রপতির কাছে অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা চাইতে পারবেন মীর কাশেম আলী। গত ৬ জুন সুপ্রীমকোর্ট মীর কাশেম আলীর মৃত্যুদ- সংক্রান্ত ২৪৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করে। এর আগে গত ৮ মার্চ সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ মীর কাশেম আলীকে ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদ-ের রায় বহাল রেখে সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করেন। চট্টগ্রাম অঞ্চলে মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মূল হোতার বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শহীদ কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিনসহ ছয়জনকে হত্যা-গণহত্যার দায় (১১ নম্বর অভিযোগ) প্রমাণিত হওয়ায় তাকে সর্বোচ্চ দ-াদেশ দেয়া হয়েছে আপীল মামলার রায়ে। ১১ নম্বর ছাড়াও ১২ নম্বর অভিযোগে রঞ্জিত দাস লাতু ও টুন্টু সেন রাজুকে হত্যার দায়েও কাসেমের মৃত্যুদ-াদেশ দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। তবে চূড়ান্ত রায়ে প্রমাণিত না হওয়ায় এ অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দিয়েছেন আপীল বিভাগ। ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত মোট ১০টি অভিযোগের মধ্যে আরও ৬টি অভিযোগে মীর কাসেমের সাজা বহাল এবং আরও ২টি থেকে অব্যাহতি ও খালাস দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে চূড়ান্ত রায়ে ফাঁসির পাশাপাশি ৫৮ বছরের সশ্রম কারাদ-াদেশ পেয়েছেন তিনি। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পাকিস্তানী বাহিনীর সহযোগী কিলিং স্কোয়ার্ড আলবদর বাহিনীর তৃতীয় শীর্ষনেতা ছিলেন জামায়াতের বর্তমান কর্মপরিষদ সদস্য মীর কাশেম আলী। সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটি (উর্ধতন নেতৃত্বের দায়) ও জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজ (যৌথ দায়বদ্ধতা) হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে আলবদর বাহিনী ও ছাত্রসংঘের অপরাধের দায়ও তাই বর্তেছে তার ওপরে। ট্রাইব্যুনালে আটজনকে নির্যাতনের পর হত্যা ও মরদেহ গুম এবং ২৪ জনকে অপহরণের পর চট্টগ্রামের বিভিন্ন নির্যাতনকেন্দ্রে আটকে রেখে নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী ১৪টি অভিযোগে অভিযুক্ত হন মীর কাশেম আলী। এ ১৪টি অভিযোগের মধ্যে ১০টি প্রমাণিত হয় ট্রাইব্যুনালের রায়ে। বাকি ৪টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পারেননি প্রসিকিউশন। ১৪টি অভিযোগের মধ্যে ১০টি অর্থাৎ ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৯, ১০, ১১, ১২ ও ১৪ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয় এবং ৪টি অর্থাৎ ১, ৫, ৮ ও ১৩ নম্বর অভিযোগ প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে পারেননি বলে ট্রাইব্যুনালের রায়ে উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে ১১ নম্বর অভিযোগে সর্বসম্মত ও ১২ নম্বর অভিযোগে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ফাঁসির রায় দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিরা। ফাঁসি ছাড়াও প্রমাণিত অন্য ৮টি অভিযোগে আরও ৭২ বছরের কারাদ-াদেশ পান মীর কাশেম আলী। এর মধ্যে প্রমাণিত ফারুককে অপহরণ-নির্যাতনে (২ নম্বর অভিযোগ) ২০ বছর ও নাসির উদ্দিন চৌধুরীকে অপহরণ করে ডালিম হোটেলে নিয়ে নির্যাতনের (১৪ নম্বর অভিযোগ) দায়ে ১০ বছরের কারাদ- পান তিনি। এছাড়া অপহরণ, আটক ও নির্যাতন সংক্রান্ত ৩, ৪, ৬, ৭, ৯ ও ১০ নম্বর অভিযোগে ৭ বছর করে কারাদ-াদেশ দেয়া হয়। অভিযোগগুলোর মধ্যে ৪, ৬ ও ১১ নম্বর বাদে বাকি ৭টিতেই সাজা বহাল রেখেছেন আপীল বিভাগ। ফলে একটিতে ফাঁসি ও দু’টিতে ৭ বছর করে ১৪ বছরের কারাদ- কমেছে মীর কাসেমের। ২০১৪ সালের ০২ নবেম্বর মীর কাশেম আলীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ-াদেশের ওই রায় দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ৩০ নবেম্বর খালাস চেয়ে মীর কাশেম আলী আপীল করেন। সাত কার্যদিবসে এ আপীল মামলার শুনানি শেষে সর্বোচ্চ আদালত গত ২৪ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের এ যুদ্ধাপরাধী নেতার রায়ের দিন ধার্য করেন ৮ মার্চ। মীর কাশেম আলীর মামলাটির মাধ্যমে সর্বোচ্চ আদালতে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলো ৭ম আপীল মামলার।
×