ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ১৭ জুন ২০১৬

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ শুধু ঘরে নয়, বাইরেও এখন বিপুল আয়োজন ইফতারের। বিকেল হতেই শুরু হয়ে যায় প্রস্তুতি। অলি গলি ফুটপাথে ইফতার সামগ্রী তৈরি হয়। চলে বেচাবিক্রি। পাশাপাশি বহু মানুষ খোলা জায়গায় বসে ইফতার করেন। সঙ্গত কারণেই জায়গাগুলো নোংরা হয়। কিন্তু খাওয়া দাওয়া শেষে জায়গাটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কথা একদমই কেউ ভাবেন না। বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকায় এমন উদাহরণ অজস্র আছে। নিত্য দিন দেখা যাচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকার কথা বলা যেতে পারে। অত্যন্ত প্রিয় ও পছন্দের জায়গাটিতে সব সময়ের মতো রমজানেও প্রচুর মানুষের আসা যাওয়া। মেরাথন আড্ডা গল্প চলে। দুই দশজন বন্ধু একসঙ্গে ইফতার করেন। আবার প্রতিদিনই থাকে বড়সড় ইফতার পার্টি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, সাংস্কৃতিক সংগঠন, সাবেক ছাত্রছাত্রীরা ইফতারকে উপলক্ষ করে পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হন। হাসা-হাসি হৈ হুল্লোড় বেশ লাগে দেখতে। কিন্তু সমস্যা এই যে, খাওয়ার সময় একে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে জায়গাটি ময়লা করেন। গত কয়েকদিন ইফতারের পর ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ময়লার ভাগাড়। এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পরিত্যক্ত খাবার, ছেঁড়া প্যাকেট, প্ল্যাস্টিকের বোতল। একবার ব্যবহারযোগ্য থালা গ্লাস চামচও কেউ আর সঙ্গে করে নিয়ে যান না। সেগুলো চেটেপুটে খেতে ভিড় করে পিঁপড়া ও পোকামাকড়। হাত ধুয়ার পানিতে ভিজে মাটি নরম হয়ে যায়। এখানেই শেষ নয়, গত বুধবার টিএসসি সংলগ্ন একটি ফুটপাথ দিয়ে হাঁটার সময় হতবাক হয়ে যেতে হলো। ডাস্টবিনও এত নোংরা হয় না, যতটা হয়েছে ফুটপাথ। বাংলা একাডেমি থেকে টিএসসির দিকে আসতে কয়েক দফা ফুটপাথ ছেড়ে মূল রাস্তায় নামতে হলো। ডাচ্ বাংলা এটিএম বুথের পাশে তো আবজর্নার স্তূপ! কুকুর যেমন ঘাটছিল, তেমনি ঠোঁটে নিয়ে উড়ছিল কাক। অসতর্ক পথিকের গা নোংরা করে দিচ্ছিল। টিএসসি এলাকার এমন শ্রীহীন অবস্থা যে কাউকে কষ্ট দেবে। কষ্ট দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা প্রবীণ শিক্ষার্থী ড. মারুফ হাসান বললেন, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাটি এখনও আমাদের খুব প্রিয়। সময় পেলে চলে আসি। এক সময় গোটা এলাকায় কত শত গাছ ছিল। এখন গাছ কাটা হয়। অযতেœ গাছ মরে যায়। কেউ আর লাগাতে আসেন না। উল্টো পরিবেশ নষ্ট করেন। একটু সচেতন হলে, সদিচ্ছা থাকলে রমজানেও টিএসসি এলাকা একই রকম সুন্দর রাখা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। সংশ্লিষ্টরা কি তা মনে করবেন? ঢাকার পরিবেশের আলোচনায় আরও একটি এলাকা খুব প্রাসঙ্গিক। ঘুরে ফিরেই আসে। এলাকাটির নাম হাজারীবাগ। এখানকার পরিবেশের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন ট্যানারি মালিকরা। সেই কবে বারোটা বাজিয়েছেন। তবু থামতে রাজি নন। ট্যানারি শহরের বাইরে নিয় যাওয়ার সব ব্যবস্থা সরকার করার পরও, মানছেন না ট্যানারি মালিকরা। এবং অতঃপর বৃহস্পতিবার আদালতের একটি উল্লেখ করার মতো রায়। পূর্ব নির্দেশ অমান্য করে কারখানা না সরানোয় আদালত নতুন রায় শুনিয়েছেন। ১৫৪ ট্যানারিকে প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা করে সরকারী কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সাভারে না যাওয়া ট্যানারিগুলোর তালিকা দাখিলের পর হাইকোর্ট এ নির্দেশ দেন। অবশ্য অভিযুক্ত ট্যানারি মালিকরা এখনও ‘আইনী লড়াই’ চালিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন। এখন দেখার বিষয়, আইনী লড়াইয়ের নামে কত সময় তারা নষ্ট করতে পারেন! এবার আশাবাদী হওয়ার গল্পটি বলা যাক। এরই মাঝে অনেকে জেনে গেছেন যে, প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা ক্লিন নামে একটি কর্মসূচী পরিচালিত হচ্ছে। একদল উদ্যমী তরুণ দ্বায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে রাস্তা ঝাড়ু দিচ্ছেন। ছড়িয়ে থাকা ময়লা ট্রলিতে তুলে নিয়ে ডাস্টবিনে ফেলছেন। কর্মসূচীটি রোজার মধ্যেও অব্যাহত আছে। বৃহস্পতিবার রাতে বিভিন্ন বয়সী মানুষ সমবেত হন ফার্মগেটে। এখানে প্রচুর ময়লা। অনেকক্ষণ ধরে কাজ করতে হয়। এরপর তারা পরিষ্কার করতে করতে যান বিজয় সরণি পর্যন্ত। রোজার মাঝেও এদিন আরও অনেক নতুন মুখ দেখা যায়। রাস্তা পরিষ্কার করার কাজে তাদের কোন লজ্জা নেই। বরং গর্ব বোধ করেন বলে জানান ঢাকা ক্লিনের মূল উদ্যোক্তা মিলন। বর্ষা শুরু হলো। এবার আনুষ্ঠানিক শুরু। গত বুধবার ছিল ১ আষাঢ়, ১৪২৩ বঙ্গাব্দ। প্রতিবারের মতোই দারুণ উৎসব অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রিয় ঋতুকে বরণ করে নিয়েছে রাজধানীবাসী। এদিন সকালে বাংলা একাডেমির বটতলায় চমৎকার অনুষ্ঠানের আয়োজন করে উদীচী। বর্ষাবরণ অনুষ্ঠানে ছিল গান কবিতা নাচসহ হরেক আয়োজন। বর্ণাঢ্য সব পরিবেশনার মধ্য দিয়ে বর্ষা বন্দনা করেন শিল্পীরা। বর্ষা বৃক্ষরোপণেরও উৎকৃষ্ট সময়। এ সময় মাটি থাকে অনেক রসাল ও উর্বর। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, ঢাকায় ভূমির সঙ্কট চরমে। খাল বিল নদীও দখল হয়ে যাচ্ছে। শুকিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় প্রয়োজনে ছাদে গাছ লাগানোর আহ্বান জানিয়েছেন নিসর্গবিদরা। একই আহ্বানে বর্ষার প্রথম দিবসে গণভবনে বৃক্ষরোপণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নগরবাসী বার্তাটি নিজেদের প্রয়োজনেই গ্রহণ করবেনÑ এমন আশা করা যায়। ঈদের প্রস্তুতিটাও এখন চোখে পড়ার মতো। এখনও অনেক সময় বাকি বটে। কিন্তু সবচেয়ে বড় উৎসব যে! দীর্ঘ প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। অনেকেই একেবারে প্রথম রোজা রেখে শপিংমল ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বিশেষ করে মহিলারা এ কাজে প্রচুর সময় দিচ্ছেন। প্রতি মার্কেটেই মোটামুটি জমে উঠেছে কোনাকাটা। বরাবরের মতোই পোশাকের দোকানগুলোতে ভিড় লেগে আছে। গত কয়েকদিন পান্থপথের বসুন্ধরা সিটি শপিংমল ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকেই জমজমাট অবস্থা। প্রতি ফ্লোর নতুন করে সেজেছে। ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে উদ্যোগের অভাব নেই দোকানিদের। এখানে অনেক বিদেশী ব্র্যান্ড। সবকটিতেই চলছে ঈদের বেচাবিক্রি। ইনফিনিটিতে কেনাকাটা করছিলেন রুবেল ও সঙ্গীতা দম্পতি। কথা প্রসঙ্গে তারা জানালেন, পরিবারের অন্যদের জন্য পোশাক কেনা হয়ে গেছে। স্বামী স্ত্রী ম্যাচ করে পোশাক কিনবেন। তাই নতুন করে খোঁজাখুঁজি। আগেভাগে কেনাকাটায় মনোযোগী হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে আরিসা নামের এক তরুণী বললেন, এখন সব ফ্যাশন হাউসের নতুন ডিজাইনগুলো পাওয়া যাচ্ছে। সারা বছর যে যত ভাল ডিজাইন করেছেন, শোরুমে তুলেছেন। ফলে অনেক দেখে পছন্দেরটি কেনা যাবে। আর কয়েকদিন পর একই দোকানে আসলে ভাল পোশাকগুলো আর পাওয়া যাবে না বলে জানান তিনি। তার কথা কিছুটা যে সত্য, সে তো বলাই বাহুল্য।
×