ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

সম্মিলিত নাগরিক সমাজের আলোচনা

জঙ্গীদের সমূলে উৎপাটন করতে সামাজিক আন্দোলন গড়তে হবে

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ১২ জুন ২০১৬

জঙ্গীদের সমূলে উৎপাটন করতে সামাজিক আন্দোলন গড়তে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের ১৬ কোটি মানুষকে পুলিশ বা সরকারের একার পক্ষে সুরক্ষা দেয়া সম্ভব নয়। তাই জঙ্গীদের সমূলে উৎপাটন করতে সর্বদলীয় সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্টজনরা এমন অভিমত ব্যক্ত করেন। ‘সন্ত্রাসবাদ, নৈতিকতা ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার : জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিত’ শীর্ষক আলোচনা সভাটির আয়োজন করে সম্মিলিত নাগরিক সমাজ। বক্তারা এ সময় পাঠ্যসূচীতে মুক্তিযুদ্ধের ওপর আলাদা বিষয় যুক্ত করার জন্যও গুরুত্বারোপ করেন। তাদের মতে, বর্তমানে অনেক স্কুলে জাতীয় সঙ্গীতও গাওয়া হয় না। নৈতিক শিক্ষামূলক শপথ করানো হয় না। এসব বিষয়ে সরকারের নজর দেয়ার প্রতি জোর দেন তারা। পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জমানের সভাপতিত্বে বৈঠকে ব্যাংকার খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মেজর জেনারেল (অব) আব্দুর রশিদ, সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সহ-সভাপতি ম. হামিদ, সাংবাদিক আবেদ খান, ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য একেএম নূর-উন-নবী, সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির, শহীদ সন্তান ডাঃ নুজহাত চৌধুরী, বিআইএসএসের চেয়ারম্যান মুন্সি ফয়েজ আহমেদ, ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের সভাপতি একেএমএ হামিদ, উন্নয়নকর্মী রঞ্জন কর্মকার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। ড. কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, জঙ্গীদের সমূলে আঘাত করতে হবে। এজন্য তিনটি পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবেও তাদের আঘাত করতে হবে। রাজনৈতিকভাবে প্রতিহত করতে দলগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। আর অর্থের উৎস বন্ধ করতে হবে। আবার সামাজিকভাবে আন্দোলন গড়ে তুলে সামাজিক শক্তিও দাঁড় করাতে হবে। আমরা যদি এভাবে মূলে আঘাত করতে পারি তবে দীর্ঘমেয়াদী ভাল ফল পাওয়া যাবে। তিনি আরও বলেন, সামাজিক আন্দোলন গড়ার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ১১টি জেলায় নাগরিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সারাদেশেই তা করা হবে। ইব্রাহীম খালেদ বলেন, ধর্মকে ব্যবহার করে জঙ্গীবাদের বিস্তার করা হচ্ছে। কোন কোন শক্তি জঙ্গীবাদকে মদদ দিচ্ছে। তবে সরকার ও তার গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যেহেতু এদের মোকাবেলা করতে পারছে না, তাই রাজনৈতিকভাবে এদের মোকাবেলা করতে হবে। প্রতিটি পাড়ায়, মহল্লায় সর্বদলীয় কমিটি করে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তবে যারা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে থাকবে তাদের স্থান এখানে হবে না। ম. হামিদ বলেন, জঙ্গীদের তৎপরতা আগেও ছিল। তবে এখন তারা কৌশল পাল্টেছে। বর্তমানে তারা সাধারণ মানুষকে আক্রমণ করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। তাই প্রতিরোধের দায়িত্ব প্রত্যেককেই নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, সরকার ভাবছে পুলিশ মোকাবেলা করবে। পুলিশ ভাবছে জনগণ মোকাবেলা করবে। আর জনগণ ভাবছে সরকার মোকাবেলা করবে। সবাই যার যার জায়গা থেকে চেষ্টা করছে। কথা বলছে। কিন্তু দলগুলো এগিয়ে আসছে না। তাই জঙ্গীবাদ ঠেকাতে দলগুলোকে নিয়ে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এছাড়া পাঠ্যসূচীতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সঠিকভাবে তুলে ধরে আগামী প্রজন্মের ভেতর দেশপ্রেম জাগ্রত কারার প্রতি জোর দেন তিনি। আবেদ খান বলেন, জঙ্গীবাদের পেছনে পাকিস্তানের আইএসআই এ দেশে সক্রিয় রয়েছে। তাই জঙ্গীবিরোধী কার্যক্রমে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। প্রতিটি সংগঠনের ভেতরেই সরকারের শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে। ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, চাপাতিতন্ত্রও কিন্তু একটা আদর্শের ভিত্তিতে চলছে। তাই আমাদেরও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। একে শক্তি হিসেবে নিয়েই ওদের ওপর পাল্টা আঘাত করতে হবে। প্রয়োজনে আরও বেশি ফোর্স মোতায়েন করে কঠিনহস্তে সমূলে উৎপাটন করতে হবে।
×