ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

এপ্রিলে দৈনিক লেনদেন ৬০৬ কোটি টাকা

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক সাড়ে ৩ কোটি ছাড়াল

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ৭ জুন ২০১৬

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক সাড়ে ৩ কোটি ছাড়াল

রহিম শেখ ॥ মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক সাড়ে তিন কোটি ছাড়িয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিল শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আওতায় খোলা এ্যাকাউন্ট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন কোটি ৫৬ লাখ ৩৩ হাজার। এর আগে গেল বছরের অক্টোবরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক তিন কোটি অতিক্রম করেছিল। তবে এ সেবায় গ্রাহক বৃদ্ধির সঙ্গে নিষ্ক্রিয় এ্যাকাউন্টের সংখ্যাও বাড়ছে। বর্তমানে মোট গ্রাহকের অর্ধেকেরও বেশি এ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। তার পরও এ সেবায় দৈনিক লেনদেন বাড়ছে। মূলত কম সময়ে টাকা পাঠানোর সুযোগের ফলে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার দ্রুত প্রসার হচ্ছে। জানা গেছে, কোন এ্যাকাউন্ট থেকে টানা তিন মাস কোন ধরনের লেনদেন না হলে তা ইন-এ্যাকটিভ বা নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্ট হিসেবে বিবেচিত হয়। আর তিন মাসের মধ্যে একটি লেনদেন হলেও তা সক্রিয় হিসেবে বিবেচিত। অবশ্য বড় কোন অনিয়ম না পাওয়া গেলে এ্যাকাউন্ট বন্ধ করে না ব্যাংক। নিয়ম অনুযায়ী শুধু মোবাইল ব্যাংকিং এ্যাকাউন্ট রয়েছে এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এ মাধ্যমে লেনদেন করবে। কিন্তু বেশিরভাগ এজেন্ট এ নিয়ম না মেনে নামে-বেনামে এ্যাকাউন্ট খুলে টাকা পাঠায়। এর ফলে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে ঘুষ-দুর্নীতিসহ অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ ওঠে। এর প্রেক্ষিতে এ সেবায় বেশ কড়াকড়ি আরোপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে কয়েক লাখ এ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয় বিভিন্ন এজেন্ট। বাতিল করা হয় অনেকের এজেন্টশিপ। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভংকর সাহা বলেন, গ্রাহকসংখ্যা বাড়ানোর চেয়ে এখন সঠিক গ্রাহক ও লেনদেনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সুবিধাবঞ্চিতদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং চালুর অনুমতি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলো বিভিন্ন মোবাইল ফোন অপারেটরের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে এ সেবা দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ২৯টি ব্যাংক এ সেবার অনুমোদন নিয়েছে। এর মধ্যে ১৯টি ব্যাংক এ সেবা চালু করেছে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক প্রথম এ সেবা চালু করলেও এখন সবচেয়ে এগিয়ে আছে ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিকাশ। বর্তমানে মোট লেনদেনের উল্লেখযোগ্য অংশ হয় বিকাশের মাধ্যমে। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিয়ে ৬০০ কোটি টাকার ওপরে দৈনিক লেনদেন হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল মাসজুড়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে মোট লেনদেন দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ২০৯ কোটি টাকা। ফলে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৬০৬ কোটি টাকা। আগের মাস মর্চে দৈনিক লেনদেন হয়েছিল ৬০৮ কোটি টাকার। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, গত মার্চ পর্যন্ত মোট তিন কোটি ৪৮ লাখ ৪৫ হাজার এ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল। এপ্রিল মাসে তা ২ দশমিক ১৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৫৬ লাখ। তবে এসব এ্যাকাউন্টের মধ্যে চালু রয়েছে ১ কোটি ৩৭ লাখ। আগের মাস পর্যন্ত চালু এ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৪২ লাখ। ব্যাংকগুলো সরাসরি মোবাইল ব্যাংকিং করতে পারে না বিধায় এ কার্যক্রমের জন্য এজেন্ট নিয়োগ করে। নির্ধারিত কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এজেন্ট নিয়োগ দেয় ব্যাংকগুলো। এপ্রিল মাস শেষে ব্যাংকগুলোর মনোনীত এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৭৭ হাজার ৫৮৮ জন। মার্চ পর্যন্ত এজেন্টের সংখ্যা ছিল পাঁচ লাখ ৮৪ হাজার ৯১২ জন। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, এপ্রিল মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ক্যাশ ইন ট্রানজেকশন হয়েছে সাত হাজার ৭৫১ কোটি টাকা। এ সময়ে ক্যাশ আউট ট্রানজেকশন হয়েছে সাত হাজার ২০ কোটি টাকা। মার্চ মাসে ক্যাশ ইন ও ক্যাশ আউট ট্রানজেকশন হয়েছিল যথাক্রমে সাত হাজার ৭৩৩ কোটি ও সাত হাজার ৫০ কোটি টাকা। এ সময়ে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি পর্যায়ে ট্রানজেকশন হয়েছে দুই হাজার ৭৬২ কোটি টাকা, যা আগের মাসে ছিল দুই হাজার ৮১২ কোটি টাকা। অন্যদিকে, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এপ্রিল মাসে ১৫৩ কোটি টাকার বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। আগের মাসের তুলনায় যা ২ দশমিক ৬৫ শতাংশ কম। এ সময় ইউটিলিটি বিল পরিশোধ প্রায় ১২ শতাংশ বেড়ে ২০৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা হয়েছে। অন্যান্য বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ৩১২ কোটি টাকা। তবে আগের মাসের তুলনায় গত এপ্রিলে এ সেবার মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাঠানো রেমিটেন্স সুবিধাভোগীর কাছে পৌঁছে দেয়ার হার ১০ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ২৯ লাখ টাকায়।
×