ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১

৯০-এ পদার্পণ

মুস্তাফা নূরউল ইসলামকে নাগরিক সংবর্ধনা

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৫ জুন ২০১৬

মুস্তাফা নূরউল ইসলামকে নাগরিক সংবর্ধনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ত্রিকালদর্শী এক কীর্তিমান মানুষ জাতীয় অধ্যাপক মুস্তাফা নূরউল ইসলাম। খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ, লেখক ও গবেষক হিসেবে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন সমাজ ও রাষ্ট্রে। গত পয়লা মে তিনি পদার্পণ করেন ৯০ বছরে। নব্বইতম জন্মদিন উপলক্ষে বরেণ্য এই ব্যক্তিত্বকে প্রদান করা হলো নাগরিক সংবর্ধনা। ৯০তম জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছার মাধ্যমে তার শতায়ু কামনা করা হলো। তার বর্ণাঢ্য জীবনের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করলেন বিশিষ্টজনরা। গানের সুরে ও কবিতার ছন্দে জানানো হলো ভালবাসা। শনিবার বিকেলে বাংলা একাডেমির আবদুল কারিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যৌথভাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলা একাডেমি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও জাতীয় কবিতা পরিষদ। সংবর্ধনাপ্রাপ্তির অনুভূতি প্রকাশ করে অধ্যাপক মুস্তাফা নূরউল ইসলাম বলেন, জীবনে এগিয়ে যেতে হলে কাউকে হিরো হিসেবে অনুসরণ করতে হয়। আমার ঘরের দেয়ালেও তেমনি তিন আদর্শ মানুষের প্রতিকৃতি ঝোলানো রয়েছে। তারা হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমার জীবনে আমি এই তিনজনকে অনুসরণ করেছি। তাদের দেখানো আদর্শের পথে এগিয়েছি। তাই আমার আহ্বান অন্যরাও যেন তাদের দেয়ালে এই তিনজনের ছবিটি রাখেন। তাহলে এই তিন আদর্শিক ব্যক্তিত্বকে দেখে অনুপ্রাণিত হবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। তিনি আরও বলেন, আমার হাতেখড়ি হয়েছিল নজরুলের কোলে বসে। কখনও ভাবিনি যে আমি একদিন ৯০ বছরে পদার্পণ করব। রবীন্দ্রনাথ প্রসঙ্গে বলেন, এই সোনার বাংলার প্রকৃত রূপটি ধরতে পেরেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। আর বঙ্গবন্ধুর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় দিয়েই যেন ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটিকে আমাদের জাতীয় সঙ্গীত করেছিলেন। তার মতো আমাদের বাংলা ও বাঙালিত্বকে চিহ্নিত করতে হবে। জীবনের অর্জন প্রসঙ্গে মুস্তাফা নূরউল ইসলাম বলেন, আমাদের জীবনে কোন অতৃপ্তি নেই। আমি যা কিছু চেয়েছি তাই পেয়েছি। মাত্র ১০ মাস সময়ের জন্য বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছিলাম। আজ সেই বাংলা একাডেমিতে আমাকে নাগরিক সংবর্ধনা দেয়া হলো। এটাও আমার জীবনের এক অনন্য প্রাপ্তি। সভাপতির বক্তব্যে ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, মুস্তাফা নূরউল ইসলামের জীবন কেবল সময়ের দিক থেকে দীর্ঘ নয়; উল্লেখযোগ্য কর্মের অর্জনেও বিশিষ্ট। তরুণ বয়সে তিনি এবং তার সমসাময়িক লেখক বন্ধুরা অগত্যা পত্রিকার মাধ্যমে সমকালীন নানা অসঙ্গতিকে ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপে বিদ্ধ করেছেন এবং একই সঙ্গে বাঙালী সংস্কৃতির পক্ষে জোরালো অবস্থান গ্রহণ করেছেন। সুদীর্ঘ কর্মময় জীবনে নিজের গবেষণা-কাজের পাশাপাশি শিক্ষকতা, প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে যেমন সাফল্যের পরিচয় রেখেছেন তেমনি সামগ্রিকভাবে আমাদের সাহিত্যরুচি নির্মাণেও রেখেছেন তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা। বিশিষ্ট শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার কণ্ঠে রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। সম্মাননাপত্র পাঠ করেন প্রাবন্ধিক মফিদুল হক। শিল্পী শাহজাহান আহমেদ বিকাশ অঙ্কিত প্রতিকৃতি এবং উত্তরীয় প্রদান করে সংবর্ধিত করা হয় তাকে। রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের কবিতার সমন্বিত আবৃত্তিতে মুস্তাফা নূরউল ইসলামকে শুভেচ্ছা জানান আবৃত্তিশিল্পী হাসান আরিফ। মুস্তাফা নূরউল ইসলামকে নিবেদিত সৈয়দ শামসুল হকের সদ্যরচিত কবিতা পাঠ করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। এছাড়াও নিবেদিত কবিতা পাঠ করেন কবি তারিক সুজাত। সংবর্ধনা উপলক্ষে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে সময়ের মুখ মুস্তাফা নূরউল ইসলাম শীর্ষক একটি সংবর্ধনা-স্মারক প্রকাশিত হয়। মুস্তাফা নূরউল ইসলামকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন। এছাড়াও ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয় বাংলা একাডেমি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর, সোনারগাঁও লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদ, জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি, এটিএন বাংলা, চ্যানেল আই, গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদ, দনিয়া সাংস্কৃতিক জোট, সুন্দরম পত্রিকা, সায়েন্স ফিকশন সোসাইটি, কণ্ঠশীলন, উজান, আবৃত্তি একাডেমি, মূলধারা, ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষে। স্বাগত বক্তব্যে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, মুস্তাফা নূরউল ইসলামকে সংবর্ধনা জ্ঞাপনের অর্থ ধর্মান্ধতা ও সমূহ অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলোর পথের যাত্রাকে অভিনন্দিত করা। তিনি তার সারা জীবন লেখনী, পত্রিকা সম্পাদনা এবং টেলিভিশন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যেভাবে বাংলা ও বাঙালিত্বের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করেছেন তা আমাদের সমকালীন বুদ্ধিবৃত্তিক ইতিহাসে বিশেষভাবে স্মরণীয়। সংবর্ধনায় মুস্তাফা নূরউল ইসলামের বর্ণাঢ্য জীবন ও কর্ম বিষয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ, জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি ড. মুহাম্মদ সামাদ, রাজনীতিবিদ নূহ-উল আলম লেনিন, প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম, প্রাবন্ধিক আহমাদ মাযহার, এটিএন বাংলার পক্ষে তাসকিন আহমেদ প্রমুখ। তারা বলেন, মহান ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী মুস্তাফা নূরউল ইসলাম এ দেশের প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংগ্রামের এক অগ্রণী যোদ্ধা। বাংলা ও বাঙালিত্বের পক্ষে তিনি চিরকাল আপোসহীন। সাময়িকপত্র গবেষণা, নজরুল গবেষণা এবং বাঙালী মুসলিম-মানসের আধুনিকায়ন বিষয়ে তার গবেষণাকর্ম আমাদের সাহিত্যক্ষেত্রে যোগ করেছে বুদ্ধিবৃত্তিকতার নবতর মাত্রা। তারা বলেন, অধ্যাপক মুস্তাফা নূরউল ইসলাম কয়েক প্রজন্মের ছাত্রছাত্রীদের কাছে একজন প্রিয় ও সফল শিক্ষকের নাম। সবাইকে তিনি মানুষ ও বাঙালী হওয়ার দীক্ষা দিয়ে চলেছেন। নব্বই বছর বয়সেও তিনি এক দীপ্ত তরুণ। তারুণ্যের ধর্ম যদি সৃজন ও উদ্ভাবন হয় তবে মুস্তাফা নূরউল ইসলামের মতো সদাসক্রিয় তরুণ আমাদের সমকালে সত্যিই বিরল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. এম সাইদুজ্জামান, ইতিহাসবিদ ড. মুনতাসীর মামুন, ভাষাতাত্ত্বিক ড. মনিরুজ্জামান, জাতীয় সংসদ সদস্য কবি কাজী রোজী, রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুভাস সিংহ রায়, কবি রবীন্দ্র গোপ, নাট্যব্যক্তিত্ব ঝুনা চৌধুরী, আবৃত্তিশিল্পী মোহাম্মদ আহ্্কামউল্লাহ্্, প্রকাশক ওসমান গণি, মাজহারুল ইসলাম প্রমুখ। সুচারুভাবে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ।
×