ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

ধ্যানে করারোপ করায় মুন্সীগঞ্জে ক্ষোভ

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৪ জুন ২০১৬

ধ্যানে করারোপ করায় মুন্সীগঞ্জে ক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ প্রস্তাবিত বাজেটে ধ্যানে (মেডিটেশন) কর আরোপ করায় বিক্রমপুর তথা মুন্সীগঞ্জে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সুশীল সমাজ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেখানে ধ্যানকে উৎসাহিত করার জন্য সরকারী অর্থ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে, সরকারী ব্যবস্থাপনায় ধ্যানের ট্রেনিং করা হচ্ছে সেখানে বাংলাদেশে ধ্যানে কর আরোপের প্রস্তাব বিস্ময়কর। অথচ এর আগেও অর্থমন্ত্রী এই (মেডিটেশন) খাতে কর আরোপ করলেও পরে তা প্রত্যাহার করে নেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ২০১৪ সালে এই কর প্রত্যাহার বক্তব্যে বলেন, ‘মেডিটেশন সেবা গ্রহণ করে হতাশাগ্রস্ত অনেক মানসিক ও শারীরিক ব্যাধিগ্রস্ত মানুষ মুক্তির প্রয়াস পায়। সে কারণে মেডিটেশন সেবার ওপর প্রযোজ্য মূসক প্রত্যাহারের প্রস্তাব করছি।’ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অভিজিৎ দাস ববি বলেন, মেডিটেশনের উপকারিতা দীর্ঘ এক বছর ধরে পর্যবেক্ষণ শেষে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটি দেশব্যাপী মেডিটেশন প্রশিক্ষণের জন্য ১০ মিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দের প্রস্তাব করে। শুধু তাই নয় টেক্সের দেশ হওয়া সত্ত্বেও তারা ২০১১ সাল থেকেই যোগ-মেডিটেশনের উপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করে নেয়। এখন জানা মতে পৃথিবীর কোথাও মেডিটশনের কোন ধ্যানেই ভ্যাট নেই বরং উৎসাহিত করা হচ্ছে। প্রবীণ শিক্ষক গিয়াসউদ্দিন ভূইয়া বলেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণা অনুযায়ী যেখানে ৭৫ ভাগ রোগ মনোদৈহিক। এর নিরাময়ে মেডিটেশনই সহজ উপায়। আর মেডিটেশন মানুষের সক্ষমতা এবং মেধার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সেখানে এই করারোপ গ্রহণযোগ্য নয়। ডাঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ২০১৩ সালে প্রণীত উচ্চ রক্তচাপ চিকিৎসা নীতি মালায় বলা হয়েছে- চিকিৎসক যেন স্ট্রেজ-আক্রান্ত ও উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের নিয়মিত যোগ, মেডিটেশন, শিথিলায়ন, দমচর্চা ইত্যাদির পরামর্শ দেন। সেখানে এই মেডিশনের করারোপ গ্রহণযোগ্য নয়। বিক্রমপুর তথা মুন্সীগঞ্জ হচ্ছে ধ্যানের এবং জ্ঞানের পুণ্যভূমি। এখানকার প্রাচীন সভ্যতায় যেমন ধ্যানের প্রমাণ মিলে আবার এখনও ধ্যান শুরু হয়েছে অতীশ দিপঙ্করের জন্মভূমি বজ্রযোগিনীতে। মুন্সীগঞ্জের রঘুরামপুরে হাজার বছরের প্রাচীন বিক্রপুর বৌদ্ধ বিহার আবিষ্কার হয়েছে। সেখানে ধ্যানঘর। আর টঙ্গিবাড়ী উপজেলার নাটেশ্বরের মাটির নিচে সদ্য আবিষ্কৃত বৌদ্ধ নগরীতেও বেশ কয়েকটি ধ্যানঘর পাওয়া যায়। এতে প্রমাণ মিলে বাঙালীদের সফলতার মূলে ছিল ধ্যান। তাই তো বলা হয় ধ্যানের দেশ ধ্যানীর দেশ বাংলাদেশ। ধর্মীয় ধ্যান ছাড়াও অনেকেই মেডিটেশন কোর্স করে ধ্যান শিখে নিজেরা আত্মপ্রত্যয়ী হচ্ছে সমাজের বোঝার পরিবর্তে আশীর্বাদ হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটাচ্ছে। বজ্রযোগিনীর কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান ধ্যান বা মেডিটেশন প্রশিক্ষণ দেয়। তাও ধাতব্য প্রতিষ্ঠান। সেখানে টেক্স আরোপ করলে সরকার কয়টা মাত্র টাকা পাবে। বরং এর থেকে সরকারের বদনাম এবং ধ্যানের মতো ভাল কাজে সাধারণ মানুষ নিরুৎসাহিত হবে। মিডিয়া কর্মী মোখলেসা আক্তার বলেছেন, চর্চার মাধ্যমে জাতি পুরনো ঐতিহ্য ফিরে পেতে যাচ্ছিল।
×