ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সাক্ষাতকালে প্রধানমন্ত্রী

আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সশস্ত্রবাহিনীর সক্ষমতা বাড়াতে চাই

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৩১ মে ২০১৬

আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সশস্ত্রবাহিনীর সক্ষমতা বাড়াতে চাই

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ রাখতে আধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ একটি শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে তাঁর সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, আমরা সশস্ত্র বাহিনীতে আধুনিক প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটিয়ে তাঁদের সক্ষমতা আরও বাড়াতে চাই। এটা যে শুধু যুদ্ধের জন্যই দরকার তা নয়, প্রতিরক্ষা বাহিনীর সার্বিক উন্নয়নের জন্যও এর প্রয়োজন রয়েছে। সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে চীনের সফররত প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জেনারেল চ্যাং ওয়ানকুয়ান সৌজন্য সাক্ষাত করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বৈঠকের পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে প্রতিরক্ষা খাতসহ নানা বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে ‘ওয়ান চায়না পলিসি’ বিষয়ে বাংলাদেশের সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, দ্বিপাক্ষিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই যে কোন দেশের সঙ্গে সমস্যা মিটিয়ে ফেলা সম্ভব। চীনকে বাংলাদেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্র উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরের উন্নয়ন কাজে বেজিং বরাবরই সহযোগিতা প্রদান করে আসছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বাংলাদেশ এবং চীনের কৃষি খাতের মধ্যে সহযোগিতা সম্প্রসারণে গুরুত্বারোপ করে বলেন, এতে করে কৃষিনির্ভর দুই দেশেরই বিপুল পরিমাণ জনগোষ্ঠী লাভবান হবে। বিপুল জনগোষ্ঠীর এ দুটি দেশের কৃষি খাতই পারস্পরিক সহযোগিতার অন্যতম ক্ষেত্র হতে পারে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এই ঘনিষ্ঠতা উত্তরোত্তর আরও বৃদ্ধি পাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন। আঞ্চলিক সংযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-চায়না-ইন্ডিয়া-মিয়ানমার (বিসিআইএন) অর্থনৈতিক করিডর চালুর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের পদক্ষেপের ফলে সহযোগিতার একটি নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে এবং এতে করে এই চার দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা- ও বিস্তৃতি লাভ করবে। প্রধানমন্ত্রী চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর মাধ্যমে চীনের রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এ সময় বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশে এখন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজমান রয়েছে এবং দেশের অর্থনীতিও ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যত রয়েছে উল্লেখ করে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এবং চীনের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদ্যমান পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে এবং ভবিষ্যতে আরও সুদৃঢ় হবে। জেনারেল চ্যাং ওয়ানকুয়ান এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০১৪ সালে চিন সফরের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, সেই সফরেই দুই দেশ ‘স্টেট টু স্টেট’ এবং ‘মিলিটারি টু মিলিটারি’ সম্পর্ক উন্নয়নে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের তিন বাহিনী প্রধানের সঙ্গে বৈঠকের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের মধ্যে খুবই ফলপ্রসূ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়েও মতবিনিময় হয়। প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয়ে তাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠক নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এ সময় বলেন, দুপক্ষই মনে করে এক্ষেত্রে ‘হাই লেভেল’ এক্সচেঞ্জের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তিনি সেনাবাহিনীর মধ্যম সারির এবং জুনিয়র অফিসারদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বাংলাদেশ এবং চীনের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্কের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হবার পর থেকেই উভয়ের মধ্যে অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, সংস্কৃতি এবং সেনা সহযোগিতা চলমান রয়েছে এবং দুটি দেশই আঞ্চলিক শান্তি স্থাপন এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখে চলেছে। বাংলাদেশের ‘ওয়ান চায়না পলিসি’তেও এ সময় চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন। সাক্ষাতকালে এ সময় অন্যান্যের মধ্যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহফুজুর রহমান এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিংজিয়াং উপস্থিত ছিলেন।
×