ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ;###;অভিযোগ সরকার উৎখাতের চেষ্টা

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হচ্ছে ॥ মোসাদের সঙ্গে ষড়যন্ত্রকারী আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২৪ মে ২০১৬

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হচ্ছে ॥ মোসাদের সঙ্গে ষড়যন্ত্রকারী আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে

শংকর কুমার দে ॥ বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার অনুমোদন দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দিল্লীতে বসে ইসরাইলের লিকুদ পার্টির সদস্য মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠক করে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হচ্ছে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা ছাড়াও তার বিরুদ্ধে ঢাকা ও চট্টগ্রামে মোট ১৮ মামলা দায়ের হয়েছে যার বেশিরভাগই নাশকতার মামলা। আজ মঙ্গলবার তাকে সাত দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে পাঠিয়ে আবারও রিমান্ডের আবেদন জানাবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ডিবি সূত্রে এ খবর জানা গেছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ডিসি শেখ নাজমুল আলম সোমবার দৈনিক জনকণ্ঠের সঙ্গে আলাপে জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত রবিবার বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা অনুমোদন করেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাটি অনুমোদন করার পর এখন তার বিরুদ্ধে তদন্ত করবে ডিবি। ডিবি তদন্ত করে রিপোর্ট দিলেই রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে তার বিচার শুরু হবে আদালতে। রাষ্ট্রদ্রোহের বিষয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে বিদেশে বসে বিদেশী অর্থাৎ ইসরাইলের নাগরিকের সঙ্গে গোপন বৈঠক করে সরকার পরিবর্তন বা উৎখাতের চেষ্টার। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার তদন্ত হচ্ছে বলে জানান এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা। ডিবি সূত্র জানান, সাত দিনের রিমান্ড শেষে আজ মঙ্গলবার আদালতে পাঠানো হবে আসলাম চৌধুরীকে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি আবারও রিমান্ডের আবেদন জানাবে আদালতে। রিমান্ড পাওয়া গেলে দেশের ভেতরে কার সঙ্গে কোথায় এবং বিদেশে যেসব বৈঠক হয়েছে সেইসব বৈঠকে কারা ছিল ও কি আলাপ হয়েছে তার বিশদ জানার সুযোগ হবে। তাকে সাত দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে, যার সত্যতা যাছাই বাছাই করার জন্যও তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন। ডিবি সূত্র জানান, আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ঢাকা ও চটগ্রামে ১৮টি মামলা দায়ের হওয়ার তথ্য হাতে পেয়েছে ডিবি। এসব মামলার বেশির ভাগই নাশকতার মামলা, যা সরকারের বিরুদ্ধে ঘটানো হয়েছে। গত ২০১৪ ও ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম অঞ্চলে পেট্রোলবোমার আগুন ও সন্ত্রাসের তা-বলীলা চালানোর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সরকারের বিরুদ্ধে নাশকতা চালানোর জন্য অর্থায়ন করেছে আসলাম চৌধুরী। ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাইলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পাটির সদস্য মেনদি এন সাফাদি ও গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে দিল্লীতে গোপন বৈঠকে মিলিত হওয়ার অভিযোগে গত ১৫ মে বিকেলে খিলক্ষেত এলাকা থেকে ডিবি গ্রেফতার করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে। সঙ্গে তার এক সহকারী ও চালককেও আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দফতরে আনার পর ৭ দিনের রিমান্ডে এনে গোয়েন্দা হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। দেশের বাইরে অন্য কোন রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে সরকার উৎখাতের অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। গোয়েন্দাদের দাবি- মোসাদের সঙ্গে বৈঠকের খবর আসার পর থেকে বিএনপির এই নেতা নজরদারিতে ছিলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার পর তিনি গা ঢাকা দেন। তবে তার গতিবিধি সবসময় গোয়েন্দা নজরদারিতে ছিল। মোসাদের এজেন্ট (লিকুদ নেতা) সঙ্গে বৈঠকের খবর প্রকাশ হওয়াকে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র হিসাবে দেখছে প্রশাসন। তার ওই বৈঠকের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। এরপর তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এখন তার বিরুদ্ধে সরকার উৎখাতের অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার অনুমোদন দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, বিএনপি যে ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত এর যথেষ্ট প্রমাণ তাঁদের কাছে আছে এবং যা দিয়ে তাঁরা বিএনপিকে নিষিদ্ধও করতে পারেন। সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের কোন নাগরিকের ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক, রাজনৈতিক কিংবা বাণিজ্যিক কোন সম্পর্ক রাখাই দ-নীয় অপরাধ। ডিবি সূত্র জানায়, বিএনপির নেতা আসলাম চৌধুরী এ বছরের ৫ মার্চ ভারতে গিয়ে ৯ মার্চ পর্যন্ত দিল্লীতে অবস্থান করেন, সেখানে ইসরাইলের নাগরিক মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে দেখা করে বৈঠকে মিলিত হন। ইসরাইলের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোমেসি এ্যান্ড এ্যাডভোকেসির প্রধান ও ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্ট মেন্দি এন সাফাদির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা-সাক্ষাতের বেশ কিছু ছবি প্রথমে ফেসবুকে প্রকাশিত হয়, যা পরে এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছবিসহ রিপোর্ট প্রকাশ হয়। ইসরাইলের অনলাইন সংবাদ মাধ্যম জেরুজালেম অনলাইন ডট কম-এ বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, সেখানে মেন্দি এন সাফাদি বলেছেন, শীঘ্রই সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দরজা ইসরাইলীদের জন্য খুলে দেয়া হবে। এতে আরও বলা হয়, আমি (মেনদি এন সাফাদি) গর্বিত যে, অনেক বাংলাদেশী ইসরাইলের প্রতি সহানুভূতিশীল। যদিও বাংলাদেশের নাগরিকদের পাসপোর্টেও লেখা থাকে, ইসরাইল ছাড়া সারা বিশ্বে তারা ভ্রমণ করতে পারবে, সেটাও আমি শীঘ্রই পরিবর্তন করতে যাচ্ছি। ডিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, দিল্লীতে আসলাম চৌধুরী ইসরাইলের মেনদি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠক করার বিষয়ে বিএনপির হাইকমান্ডের নির্দেশ ছিল কিনা এবং থাকলে কার নির্দেশ ছিল সেই বিষয় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাকে। ইসরাইলের মেনদি এন সাফাদি লন্ডনে মি. রহমান নামে যার সঙ্গে বৈঠকের কথা বলেছেন তিনিই বিএনপির হাইকমান্ড কিনা সেই বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী এখনও মুখ খোলেননি। দিল্লী বৈঠকে বাংলাদেশ সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের ছক কষা হয়েছে লন্ডনে এবং লন্ডনে অবস্থানরত মি. রহমানই তার নেপথ্যের প্রধান হোতা। লন্ডনের মি. রহমানের সঙ্গে মেনদি এন সাফাদির বৈঠক হয়েছে কিনা সেই বিষয়েও আসলাম চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ডিবি। মেনদি এন সাফাদিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা গেলে বাংলাদেশের শেখ হাসিনার সরকার উৎখাতের জন্য লন্ডনে যে নীলনকশা তৈরি করা হয়েছে সেই সঙ্গে বাংলাদেশের আর কে কে জড়িত সেই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ জানার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। এ জন্যই বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীকে ডিবি মঙ্গলবার আবারও আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজনে আবারও আদালতে রিমান্ডের আবেদন জানাবে।
×