ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এনালগ সমস্যা! ডিজিটাল সমাধান!!

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ৭ মে ২০১৬

এনালগ সমস্যা! ডিজিটাল সমাধান!!

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ নগরীসহ জেলার প্রতিটি উপজেলার পূর্বের এনালগ সমস্যাগুলো এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে (সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে) সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন বরিশালের ডিজিটাল জেলা প্রশাসক ড. গাজী মোঃ সাইফুজ্জামান। ইতোমধ্যে বেশ স্বল্প সময়ে তিনি অসংখ্য সমস্যার সমাধান করে রীতিমতো আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। বর্তমান সরকারের ডিজিটাল সেবা প্রতিটি জনসাধারণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া ও প্রত্যেক সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জবাবদিহিতার জন্যই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সূত্রমতে, গত ২০ এপ্রিল জেলা প্রশাসনের ফেসবুক ‘বরিশালের সমস্যা ও সম্ভাবনা’ পেজে নগরীর জেল খাল নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন মোমেনা সিফা রুমকী। দীর্ঘদিন ধরে ঐতিহ্যবাহী জেল খাল অবৈধ দখলে থাকলেও কেউ দখলমুক্ত করতে পারেনি। জনপ্রতিনিধিরা একাধিকবার কথা দিয়েছিলেন কিন্তু কাজের বেলায় শূন্যের কোটায় গিয়ে ঠেকেছেন। কারণ দখলকারীরা সকলেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা। কিন্তু রুমকীর একটি পোস্টে পাল্টে গেছে পুরো চিত্র। আর পাল্টিয়েছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক ড. গাজী মোঃ সাইফুজ্জামান। ওই পোস্টটি দেখার পরে জেলা প্রশাসক লিখেছিলেনÑ ‘২০ এপ্রিল ২০১৬ তারিখের এক পোস্টে জানানো হয়েছিল যে, বরিশাল মহানগরীর খালগুলো পাবলিক ইজমেন্ট। অর্থাৎ খালগুলো জনগণের ব্যবহার্য সম্পত্তি। এসব খাল সচল করে ভেনিস শহরের মতো নৌ-চলাচল সম্ভব।’ পরবর্তীতে কোন আইনী কিংবা প্রশাসনিক লোক দিয়ে হয়রানিও নয়; জেলা প্রশাসক নিজেই সরেজমিন দখলদারদের সাথে কথা বলে গত ২৫ এপ্রিল থেকে শুরু করেন জেল খাল দখলমুক্ত অভিযান। জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে চার দিন ধরে চলা অভিযানে পাল্টে যায় জেল খালের পুরো চেহারা। জেল খাল ফিরে পেতে শুরু করেছে তার হারিয়ে যাওয়া যৌবন। শুধু জেল খাল উদ্ধারই নয়; জেলা প্রশাসনের একটি পেজ পাল্টে দিচ্ছে পুরো বরিশালের চিত্র। দীর্ঘদিনে পুঞ্জীভূত সমস্যা দূর হচ্ছে মুহূর্তের মধ্যেই। জেল খাল দখলমুক্ত করতে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা শ্রমিকদের চিত্র ধারণ করে সাইদ বারী একটি পোস্টে লিখেছেনÑ ‘অবাক করার বিষয় হলো যাদের কারণে বাস্তবিক পক্ষে আমরা অবৈধ স্থাপনা মুক্ত জেল খাল পেতে চলছি তাদের নিরাপত্তাটা কোথায়। আসুন সবকিছু জেলা প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশনের ওপর ছেড়ে না দিয়ে শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তার স্বার্থে ১৫ জন শ্রমিকদের ১৫টি হেলমেট কিনে দেই। যাতে কোন প্রকার দুর্ঘটনার হাত থেকে কিছুটা হলেও শ্রমিকেরা নিজেদের নিরাপদ রাখতে পারেন।’ পোস্ট দেয়ার পর পরই জেলা প্রশাসক শ্রমিকদের হেলমেটের ব্যবস্থা করেন। বছরের পর বছর ধরে যে সমস্যা সমাধান হয়নি সেই সমস্যা মিটছে চোখের পলকে। কোথাও ছুটছেন জেলা প্রশাসক নিজে, আবার কোথাও তার প্রতিনিধি। শাহরিয়ার মাহফুজ লিখেছেনÑ ‘বঙ্গবন্ধু উদ্যানের দক্ষিণ পাশ সংলগ্ন আনসার অফিসের একদম পূর্ব পাশে একটি বহুতল ভবনের পাইলিংয়ের কাজ চলছে। উক্ত পাইলিংয়ের সমুদয় কাদামাটি মিশ্রিত পানি একটি পাইপ দিয়ে রাস্তার পূর্বপাশের ড্রেনে ফেলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ড্রেনের তিন ভাগের দুই ভাগ মাটি ও বালি দ্বারা ভরাট হয়ে গেছে। ড্রেন এভাবে ভরাট হয়ে গেলে আগামী বর্ষা মৌসুমে কোনভাবেই জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব হবে না।’ পোস্ট দেয়ার সাথে সাথেই হয়েছে সমস্যার সমাধান। জেলা প্রশাসক বিসিসির প্রধান প্রকৌশলীর সাথে কথা বলে, দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেন। সমাধানও হয়। প্রতিদিন এভাবে একের পর এক সমস্যার কথা উঠে আসছে ফেসবুক পেজে আর সমাধান দিচ্ছেন জেলা প্রশাসক ড. গাজী মোঃ সাইফুজ্জামান। শাহরিয়ার হোসাইন লিখেছেনÑ ‘বরিশাল সদর হাসপাতালের সামনে আগা মরা ৫টা পাম গাছ যেন মরণফাঁদ, যেকোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের বিপদ, ডিসি সাহেবের নজর কামনা করছি।’ একজন লিখেছেনÑ ‘বর্তমানে বিদ্যুত সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে। প্রাইমারি হতে শুরু করে বড়দের পরীক্ষা একসাথে চলছে। প্রচ- গরমে লোডশেডিংয়ে ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ায় মারাত্মক বিঘœ হচ্ছে। সকল ছাত্রছাত্রীদের পক্ষ থেকে এ সমস্যা সমাধানের জন্য সুদৃষ্টি কামনা করছি। তানভির হোসাইন লিখেছেনÑ ‘আমরা প্রশাসনে অনেক ক্ষেত্রেই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু স্যার ঘুষের চরম কারখানা বরিশাল পাসপোর্ট অফিস। বরিশাল পাসপোর্ট আফিসে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে পাসপোর্ট প্রতি ২ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেয়া হচ্ছে। যদি কেউ সাধারণভাবে ফরম জমা দিতে যায় তার ফরমে ১০১টা ভুল তারা বের করবে। কিন্তু ঘুষ দিলে সব ঠিক হয়ে যায়। খোরশেদ আলম ফারুক ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করেছেনÑ ‘শের-ই-বাংলা মেডিক্যালের মাঝ গেটে বড় একটা বস্তা নিয়ে মানসিক রোগী দেখার কেউ নাই।’ এর পরপরই জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উল্লেখিত সমস্যার সমাধানসহ ওই মানসিক রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। প্রতিদিন কমপক্ষে ২০টি সমস্যার কথা পোস্ট হচ্ছে জেলা প্রশাসনের জনপ্রিয় ‘বরিশালের সমস্যা ও সম্ভাবনা’ ফেসবুক পেজে। আর তাৎক্ষণিক প্রতিটি সমস্যার সমাধান করে দিচ্ছেন জেলা প্রশাসক। আর এতে বরিশালবাসীর ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটতে শুরু করলেও অনেকটা বেকায়দায় পড়েছেন দীর্ঘদিনের ঘাপটি মেরে থাকা সরকারী সম্পত্তি দখল করে রাখা ভূমিদস্যু থেকে শুরু করে নামেমাত্র কাজ করা কতিপয় সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ড. গাজী মোঃ সাইফুজ্জামান বলেন, একটি ফেসবুক পেজ নতুন নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচন করছে। বর্তমান সরকারের ডিজিটাল সেবা প্রতিটি জনসাধারণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া ও প্রত্যেক সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জবাবদিহিতার জন্য ২০১৫ সালে আমরা এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এক বছরের মধ্যে ব্যাপক সাড়াও মিলেছে। তিনি আরও বলেন, নগরীসহ জেলার প্রতিটি উপজেলার পূর্বের এনালগ সমস্যাগুলো এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে (সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে) সমাধানের এ উদ্যোগ চলছে ও চলবে।
×