ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গী ও শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ওপর নজরদারি বাড়ানোর উদ্যোগ

ওয়েববেজড ক্যামেরাযুক্ত বিশেষ ভ্যান কিনছে কারা কর্তৃপক্ষ

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৪ মে ২০১৬

ওয়েববেজড ক্যামেরাযুক্ত বিশেষ ভ্যান কিনছে কারা কর্তৃপক্ষ

মশিউর রহমান খান ॥ কারাগার থেকে জঙ্গী, শীর্ষ সন্ত্রাসী, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার আসামিসহ আদালতের নির্দেশে ও ডিভিশনপ্রাপ্ত অসুস্থ আসামিদের আদালতে হাজিরা দিতে এবং এক কারাগার থেকে অন্য কারাগারে স্থানান্তর করতে ওয়েববেজড ক্যামেরাযুক্ত বিশেষ ভ্যান কিনছে কারা অধিদফতর। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যয় মঞ্জুরি প্রাপ্তির পরই এসব প্রিজন্স ভ্যান কেনা হবে বলে জনকণ্ঠকে নিশ্চিত করেছে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন। বর্তমানে এসব ভ্যান কেনার প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বিশেষ করে শীর্ষ সন্ত্রাসী ও গুরুত্বপূর্ণ মামলার বন্দীদের আদালত বা অন্য কোন কারাগারে আনা-নেয়ার সচিত্র দৃশ্য দেখতেই এমনটা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনার ভিত্তিতে এটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে এসব ভ্যান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি প্রিজন্স ও কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী আনা-নেয়ার কাজে ব্যবহার করা হবে। বর্তমানে কারাগার থেকে প্রিজন্স ভ্যানে বন্দী আনা-নেয়ার মূল দায়িত্ব পালন করে পুলিশ। এই প্রথমবারের মতো কারা অধিদফতরকে বিশেষ প্রযুক্তিসম্পন্ন প্রিজন্স ভ্যান কেনার অনুমতি দিয়েছে সরকার। যার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করবে কারা কর্তৃপক্ষ। প্রিজন্স ভ্যানের আসামিদের এক কারাগার থেকে অন্য কারাগারে আনা-নেয়ার সময় পথিমধ্যে অবৈধভাবে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে হোটেল কিংবা নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ করে দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এমন অভিযোগের তদন্তে প্রমাণও মিলেছে বলে শোনা গেছে। বিশেষ প্রযুক্তিসম্পন্ন ভ্যানে আনা-নেয়ার মাধ্যমে যাতায়াতের পথে কারাবন্দীর প্রতি সর্বোচ্চ নজরদারি করতে সক্ষম হবে। কারা সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে ২টি অত্যাধুনিক সুবিধাসম্পন্ন প্রিজন্স ভ্যান কেনা হবে। এর একটিতে ৮ থেকে ১০ বন্দীকে বহন করা সম্ভব হবে অপরটিতে ৪০ জন বন্দীকে বহন করা যাবে। দুটি ভ্যান কিনতে ব্যয় হবে প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ টাকা। কারাগারে আটক বন্দীদের বিভিন্ন সময় আদালত থেকে নির্দেশ দেয়া হয় যে, অসুস্থ আসামিকে আদালতে হাজিরা দিতে আরামদায়ক যানবাহনের ব্যবস্থা করা হোক। এক্ষেত্রে কারাগারের আরামদায়ক ও নিরাপদ কোন নিজস্ব যানবাহন না থাকায় কারা কর্তৃপক্ষকে বাধ্য হয়ে অধিক খরচে এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে হয়। এছাড়া সবসময় নিরাপদ এ্যাম্বুলেন্স না পাওয়া যাওয়ায় অনেক সময় আসামিকে নির্দিষ্ট সময়ে আদালতে হাজির করতে সমস্যার সৃষ্টি হয়। ফলে বিচার কাজে এর প্রভাব পড়ে। অপর একটি সূত্র জানায়, পুলিশের সাহায্য নিয়ে আদালত থেকে কারাগারে অথবা এক কারাগার থেকে অন্য কারাগারে আসামি স্থানান্তর করতে গেলে সময়মতো পুলিশের এস্কর্ট না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে দেরিতে বা অধিক রাতেও আসামিদের কারাগারে আনা-নেয়া করতে হয়। এতে পুলিশকে রাস্তায় বন্দীদের নিয়ে অনেকটা ঝুঁকিতে থাকতে হয়। এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে বা আদালতের নির্দেশ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে কারা অধিদফতর পুলিশের বাইরে নিজস্ব উদ্যোগে বিশেষ প্রযুক্তির ভ্যান কিনতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায়। সরকার বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে এ প্রস্তাব অনুমোদন করে। বর্তমানে বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যয় মঞ্জুরির অপেক্ষায় রয়েছে। মঞ্জুরির সঙ্গে সঙ্গে কেনার প্রক্রিয়া শুরু করতে সংশ্লিষ্টদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়ে রেখেছে কারা অধিদফতর। প্রাথমিকভাবে দুটি ভ্যান কেনা হলেও পরবর্তীতে এর কার্যকারিতার ওপর নির্ভর করে প্রযুক্তিসম্পন্ন আরও এসব প্রিজন্স ভ্যান কেনার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে। কারা অধিদফতর সূত্র জানায়, দুটি ভ্যানের প্রতিটিতে ওয়েববেজড ক্যামেরা লাগানো থাকবে। আটক বন্দীদের বহনকারী ভ্যানটি কোন্ পথে যাচ্ছে, রাস্তায় কোন স্থানে ট্রাফিক জ্যামে আটকে আছে কি না, আদালতে ভ্যান পৌঁছতে ইেরর কারণ জানতে, রাস্তায় পালানোর জন্য কোন বন্দী চেষ্টা করে কি না, কারও সঙ্গে অবৈধ উপায়ে মোবাইল ফোনে কথা বলে কি না কিংবা ভ্যানের ভেতরে বন্দীরা একে অপরের সঙ্গে ঝগড়ায় লিপ্ত হয় কি না মোটকথা বন্দীকে সার্বিক নজরদারিতে রাখতেই প্রিজন্স ভ্যানে ওয়েববেজড ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে। এসব ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণ থাকবে সরাসরি কারা মহাপরিদর্শকের হাতে ও সংশ্লিষ্ট কারাগারের সার্ভার রুম থেকে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে। পাশপাশি এর মাধ্যমে রাস্তা থেকে কোন আসামি ছিনতাই করার পথ বন্ধ হবে। কারা সূত্র জানায়, ছোট আকৃতির একটি ভ্যানে জঙ্গী, শীর্ষ সন্ত্রাসী, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার বন্দী, ভিআইপি, অসুস্থ, আদালতের বিশেষ নির্দেশপ্রাপ্ত বন্দিদের বহন করতে কাজে লাগানো হবে। এ ভ্যানটিতে সর্বোচ্চ ১০ জন বন্দী ধারণ করতে পারবে ও একটি মাত্র দরজা থাকবে। এছাড়া অপর ভ্যানটিতে ৪০ জন বন্দীকে রাখা যাবে। এ ভ্যানটিতে ৩ দিক দিয়ে ৩টি দরজা থাকবে। এ ভ্যানটিতে ৩টি আলাদা কম্পার্টমেন্ট থাকবে। জঙ্গী, সন্ত্রাসী ও সাধারণ মামলার আসামিরা যেন মিশতে না পারে সেজন্য পৃথক পৃথক স্থানে রাখতে এ ৩টি ভাগ করা হবে। কারণ হিসেবে জানা গেছে রাস্তায় চলাচলে দীর্ঘ সময় ব্যয় হওয়ায় একসঙ্গে সকল জঙ্গীকে রাখলে ভ্যানে বসেই নানা প্রকার ষড়যন্ত্র করতে পারে। তা রুখতেই এ বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত উচ্চপর্যায়ের কমিটি প্রিজন্স ভ্যানে ওয়েববেজড ক্যামেরা লাগানোর সুপারিশ করেছে। সুপারিশে বলা হয়, প্রিজন ভ্যানে ওয়েববেজড ক্যামেরা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হলে তা পরিচালনার ডিসপ্লে বোর্ডটি বাংলাদেশ পুলিশের নিয়ন্ত্রণাধীন নবাব আব্দুল গনি রোডে অবস্থিত সেন্ট্রাল কমান্ড এ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার, ডিএমডি, ঢাকা কার্যালয়ে স্থাপন করা যেতে পারে। ওয়েববেজড ক্যামেরা স্থাপিত প্রিজন ভ্যান পরিচালনার জন্য পুলিশের সংশ্লিষ্ট খাতে প্রতি অর্থবছরে অর্থ বরাদ্দ রাখতে হবে। এসব ক্যামেরা স্থাপিত প্রিজন ভ্যানের গতিবিধি নজরদারিতে রাখতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, মহাপুলিশ পরিদর্শক, কারা মহাপরিদর্শকের অফিসিয়াল মোবাইল ফোনে কানেক্টিভিটি রাখা যেতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উচ্চপর্যায়ের কমিটির এ সুপারিশের ভিত্তিতে কাজ শুরু করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কারা অধিদফতর। অতি দ্রুত এটি বাস্তবায়ন করা হবে। এ জন্য নিরাপত্তাহীন নানা ইস্যুর বিষয়গুলো মাথায় রাখা হচ্ছে। এছাড়া পরীক্ষামূলকভাবে দুটি প্রিজন্স ভ্যানে এ প্রযুক্তি কার্যকর করা সম্ভব হলে সকল ভ্যানেই এটি কার্যকর করা যায় কি না তার পরিকল্পনা রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা আদালতের নির্দেশ দ্রুত প্রতিপালনে ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ মামলার আসামিদের বহনসহ জঙ্গী সন্ত্রাসী আসামিদের বহনের জন্য ওয়েববেজড ক্যামেরা প্রযুক্তিসহ বিশেষ প্রিজন্স বহনকারী ভ্যান কেনার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম। এসব ভ্যানে বহনকারী বন্দীদের ও রাস্তায় ভ্যানটি চলাচলে সার্বিক নজরদারি করতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। সরকার এসব ভ্যান কেনার অনুমোদন দিয়েছে। বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ে ব্যয় মঞ্জুরির অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমতি পেলেও অতি দ্রুত এসব ভ্যান কেনার প্রক্রিয়া শুরু হবে। প্রযুক্তির মাধ্যমে রাস্তায় কোন দুর্ঘটনা হয় কি না, সর্বশেষ আসামিদের ভ্যানটি কোথায় আছে তা জানা, কোন বন্দী মোবাইল ফোনে অবৈধ উপায়ে কথা বলেন কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা হবে। এছাড়া এসবই নিয়ন্ত্রণ কারা মহাপরিদর্শক ও সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় কারাগারের সার্ভার রুম থেকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। প্রাথমিকভাবে ২টি ভ্যান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কাশিমপুরের হাই সিকিউরিটি প্রিজন্স ও কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দীদের স্থনান্তরের জন্য ব্যবহার করা হবে। পরবর্তীতে এটি কার্যকর হলে আরও প্রিজন্স ভ্যান কেনার পরিকল্পনা রয়েছে।
×