ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পান্থ আফজাল

মে দিবসে বাতিঘরের ‘ঊর্নাজাল’

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ২৮ এপ্রিল ২০১৬

মে দিবসে বাতিঘরের ‘ঊর্নাজাল’

বিদেশ থেকে শিক্ষাজীবন শেষ করে নিজ গ্রামে ফেরে খালেদ। দীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর শেষ হয় গ্রামবাসীর। স্কুলের জন্য রেখে যাওয়া বাবার স্বপ্নের একখণ্ড জমিতে মাদ্রাসা গড়ে তোলে সে। অন্যদিকে, সাঁইজির আখড়ায় বেড়ে ওঠা গায়েন সয়ফুল খালেদের বাল্যবন্ধু। ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত হতে শিল্পের মনঃসংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয় শিল্পী। ঘুণে কাটে একতারাটি। চোখ দান করে যাওয়া জয়নাল গাতকের জানাজা পড়ানোর দায়ে ইমামের জিব কেটে নেয় কে বা কারা। সুযোগে ধর্মীয় মতবাদের আশ্রয়ে ঢুকে পড়ে অপকৌশল-কূটনীতি। এভাবেই এগিয়েছে বাতিঘরের নাটক ‘ঊর্নাজাল’ এর কাহিনী। আগামী ১ মে নাট্যদল ‘বাতিঘর’ মহান মে দিবস পালন এবং সংস্কৃতিকর্মী তনু ও তনয় হত্যার বিচার দাবিতে প্রতিবাদ সংহতির আয়োজন করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় বিকেল ৪ টায়। এই আয়োজনে দেশের স্বনামধন্য কয়েকটি নাট্যদলের অংশগ্রহণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এই আয়োজন সবার জন্য উন্মুক্ত। আবার ঐ একইদিন সন্ধ্যা ৭টায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় বাকার বকুলের নির্দেশনায় নাটক ‘ঊর্ণাজাল’ এর ৯ম প্রদর্শনী আয়োজন করেছে ‘বাতিঘর’ থিয়েটার। দর্শনীর বিনিময়ে এই নাটক দেখার ব্যবস্থা করেছে এই নাট্যদল। বাতিঘরের ‘ঊর্নাজাল’ নাটক দেখার টানে বার বার নাট্যপ্রেমীদের সমাগম ঘটেছিল বিগত কয়েকটি মঞ্চায়নে। যার রেশ ছড়িয়ে পড়েছিল বাতিঘরের প্রতিটি নাট্যকর্মীর ধ্যানে আর স্বপ্ন চয়নে। অবশ্য এর সিংহভাগ কৃতিত্বের দাবিদার নির্দেশক বাকার বকুলের আর বাকিটা বাতিঘর নাট্যকর্মীবৃন্দের। বিশেষ করে দলের মধ্যমণি মুক্তনীল এই উদ্দীপনা আর কর্মীদের অভিজ্ঞতাকে নতুন রূপদান প্রদানের লক্ষ্য উদগ্রীব ছিলেন নতুন কিছু করে দেখানোর। যেন প্রতিটি নাট্যাঙ্গন একনামেই চিনতে পারে ‘বাতিঘর’ আর তার উদ্যমী নাট্যপ্রেমীদের। এক সময় মনে জিইয়ে থাকা স্বপ্নকে বাস্তবে রূপদান করলেন দলীয় প্রধান মুক্তনীল এবং সহযোদ্ধা মনিরুজ্জামান লিপন। উপহার দিলেন একটি সফল নাট্যমেলার। বাতিঘর তার থিয়েটার জগতে ৫ বছর পদার্পণ উপলক্ষে কয়েকদিন আগে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি জুড়ে লোকজ আবহে এবং বিশালভাবে রঙে-বর্ণে উদযাপন করল ‘বাতিঘর নাট্যমেলা ২০১৫’। নির্দেশকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গল্পটি তাঁরই জীবনের একটি বিশেষ ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। নিজস্ব সংস্কৃতিকে চিনতে না পারার কারণেই ব্যক্তির অধঃপতন এ নাটকে ঘুরেফিরে এসেছে। কথা প্রসঙ্গে বললেন, ‘কৈশোরে লালনগীতি শুনতাম এক বন্ধুর কাছে। আখড়াই ঢংয়ে বাদ্যযন্ত্রহীন কণ্ঠে অসাধারণ গাইত সে। লালন দর্শনতত্ত্ব নিয়ে আড্ডাবাজি হতো। বন্ধুটি শিক্ষক হয়ে উঠেছিল আমাদের। তারপর বন্ধুটির হঠাৎ পরিবর্তন। সঙ্গীতকে সে পাপ হিসেবে দেখতে শুরু“ করে। এই নাটকে সয়ফুল চরিত্রটি কৈশোরের বন্ধুটিকে আশ্রয় করেই নির্মিত। মানুষের সুশিক্ষায় স্থির থাকতে না পারা, অশিক্ষাকে শিক্ষা বলে গ্রহণ করা এবং নিজস্ব সংস্কৃতিকে চিনতে না পারার দৃষ্টিহীনতা এই নাটকে ঘুরেফিরে এসেছে।’ নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন মুক্ত নীল, সজীব তানভীর, সাদ্দাম রাহমান, সাবরিনা শারমিন, মনিরুজ্জামান লিপন, সাফিন আহমেদ অশ্রু, সঞ্জয় গোস্বামী, সঞ্জয় হালদার, ফিরোজ মুনীর, শিশির সরকার, সাদিয়া ইউসুফ, নিকুল কুমার মন্দল, শাহানা জয়, লাবণী লুবনা, তানজিম আহমেদ শাফি, রুম্মান শারু, তারানা তাব্বাসুম চেরী প্রমুখ। প্রসঙ্গত, একে একে ছয় বছর অতিক্রম করতে চলেছে প্রয়াত নাট্যব্যক্তিত্ব খালেদ খানের দেয়া নামের নাট্যদল ‘বাতিঘর’। তার অনুপ্রেরণায় উৎসাহিত হয়ে ‘বাতিঘর’ গত কয়েক বছরে দৃঢ়তার সঙ্গে নাট্যচর্চা করে আসছে। আর এমন একটি সৃজনশীল নাট্যদলের মে দিবস আর তনু-তনয় হত্যা প্রতিবাদ নিয়ে আয়োজন উদযাপন সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে!
×