ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব পানি দিবসের ভাবনা

প্রকাশিত: ০৪:২০, ২৬ এপ্রিল ২০১৬

বিশ্ব পানি দিবসের ভাবনা

পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি দূষিত পানি পান করার ফলে সম্প্রতি ভয়াবহ হারে বেড়ে গেছে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ। দূষিত পানি পানে নানা জটিল রোগের উৎপত্তি হতে পারে। হেপাটাইটিস, টাইফয়েড, ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়, জন্ডিসের মতো মারাতড়বক ব্যাধির উৎসে থাকে দূষিত পানি। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের অভিমত, এ রকম দূষিত পানি দীর্ঘদিন পান করতে থাকলে আরো জটিল রোগ, এমনকি মরণব্যাধি ক্যান্সারও হতে পারে। কিডনি রোগ, আলসার, রক্তচাপ, অ্যাজমা, যক্ষ্মা ইত্যাদি রোগের প্রকোপ বাড়তে পারে। এক্ষেত্রে অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে বিশুদ্ধ পানির নিশ্চয়তা দিতে না পারলে জনস্বাস্থ্যকে স¤পূর্ণভাবে হুমকিমুক্ত করা যাবে না। বিশুদ্ধ পানি নিশ্চয়তা বিধান করে বহুরোগ থেকে আত্মরক্ষা করা যায়।... * ১.৮ বিলিয়ন মানুষ নিরাপদ পানি বঞ্চিত * ২.৪ বিলিয়ন যথার্থ নিরাপদ স্বাস্থ্য সুরক্ষা বঞ্চিত * প্রতিদিন শিশুরা ৪ ঘণ্ঠা ব্যয় করে পানি সাথে * ৮৪০.০০০ শিশু প্রতিবছর পানি বাহিত রোগে মারা যায় ঢাকা ওয়াসা এবং সাপ্লাই/ সরবরাহকৃত পানির গুণগত মান রাজধানী ঢাকায় দৈনিক পানির দরকার হয় ২২০ থেকে ২৩০ কোটি লিটার। ঢাকার পানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে দিনের চাহিদার পুরোটাই সরবরাহও করে। তবে নগরবাসীর দীর্ঘদিনের অভিযোগ, ওয়াসার পানিতে মাত্রাতিরিক্ত দুর্গন্ধ ও ময়লা থাকে। দীর্ঘ সময় ধরে ফোটানো হলেও কিছু এলাকায় সরবরাহকৃত পানি থেকে দুর্গন্ধ যাচ্ছে না, তা পানযোগ্যও করা যাচ্ছে না। কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরবরাহকৃত পানির ১৫ শতাংশ আসে সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার থেকে। শীতলক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গা থেকে পানি এনে শোধন করে তা নগরবাসীর জন্য সরবরাহ করা হয়। কিন্তু এ দুই নদীর পানি এতটাই দূষিত যে তা শোধন করেও পানযোগ্য করা যাচ্ছে না। কারণ, নদীদূষণের কারণে নদীর অবস্থা বেশ খারাপ। এসব নদীতে এখনো পানি আছে বটে, কিন্তু সে পানি এতই দূষিত যে তা মানুষের পানের উপযোগী করার জন্য মূল শোধনাগারে নেয়ার আগে একটি প্রাক-শোধনাগারে নিয়ে একবার শোধন করতে হয়। অর্থাৎ এসব নদীর পানি এক দফায় শোধনযোগ্য নয়। দুটি পৃথক শোধনাগারে দুই দফায় শোধন করার পরেই কেবল তা মানুষের পানের উপযোগী হয়।... ঢাকার বেশির ভাগ এলাকায় পানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান যে পানি সরবরাহ করে, তা সরাসরি পান করা তো চরম ঝুঁকিপূর্ণ, এমনকি ফুটিয়ে, ফিল্টার করেও গন্ধমুক্ত পানের উপযোগী করা যায় না। আর বিশুদ্ধ খাবার পানির এই সংকটের সুযোগ নিয়ে অসাধু ব্যক্তিরা রমরমা বাণিজ্য করছে। বিশুদ্ধ পানির নামে বোতলজাত পানি অথবা জেরি-ক্যানে বিল্ডির ব্যবসা এখন রমরমা। কিন্তু রাজধানীসহ সারা দেশে নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকিরা জেরি-ক্যানে করে যে পানি বিল্ডি করে তার বেশির ভাগই বিশুদ্ধ নয়। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তরের নিম্নগামিতা এবং পানিতে ভারি ধাতু এবং দূষিত পর্দাথের প্রকট উপস্থিতি পানি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. এম আশরাাফ আলী বলেন, “স্বাভাবিক নিয়মে ভূগর্ভস্থ পানির যে স্তরটুকু খালি হয় তা পরবর্তী সময়ে প্রাকৃতিকভাবেই পূরণ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু ঢাকাসহ আরো কিছু এলাকায় তা হচ্ছে না। ভূগর্ভের পানি শুধু কমছেই, বাড়ছে না। আগে থেকেই অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে অতিমাত্রায় নলকূপ বসিয়ে ইচ্ছামতো পানি তুলে ফেলায় অবস্থা এমন হয়েছে যে এখন আর পানি আমাদের নাগলে পাওয়া যাচ্ছে না। সরকার বিভিনড়বভাবে চেষ্টা করলেও ওয়াটার ট্রিটমেন্ট পান্ট দিয়ে পানি সঠিক মাত্রায় নিরাপদ করা যাচ্ছে না মারাতড়বকভাবে নদীদূষণের ফলে।” এছাড়াও বিভিন্ন দূষিত পর্দাথের প্রকট উপস্থিতির কারণে গভীর নলকূপের পানিও আর নিরাপদ নেই। এতে ঢুকে পড়েছে পানিবাহিত রোগের উপাদান ব্যাকটেরিয়া, সেটাও ভয়াবহ মাত্রায়। এছাড়াও এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেলথ পরিচালিত ওয়াটার কোয়ালিটি টেস্টিং ল্যাবরেটরির (ডাব্লিউকিউটিএল) এক গবেষণায় বাংলাদেশের অধিকাংশ নলকূপের পানিতে ব্যাকটেরিয়া ছাড়াও ম্যাঙ্গানিজ নামের একটি ভারী ধাতুর উপস্থিতিও পাওয়া গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ভারী এ ধাতুটি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। গবেষকরা বলছেন, মাটির নিচে পানির স্তরে ভারী ধাতুর উপস্থিতির কারণে তা পানের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। পানি কি শুধুমাত্র ফোটানোর মাধ্যমে বিশুদ্ধকরণ সম্ভব? পানিতে মিশে থাকা বিষাক্ত কেমিক্যাল, ভারী ধাতু, মরিচা, সিসা, বিভিনড়ব দূষিত পদার্থ ইত্যাদি শুধুমাত্র ফোটানোর মাধ্যমে দূর করা যায় না। ব্যাকটেরিয়াসহ অন্যান্য ক্ষতিকর জীবাণু ধ্বংসের জন্য পানি সঠিক তাপমাত্রায় ৩০ থেকে ৪০ মিনিট ফোটাতে হয়। কিন্তু সঠিক তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট সময় ধরে পানি ফোটানোর বিষয়টি সবার পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। তাই পানি ফোটালেও ঝুঁকি রয়েই যায়। তাই সবাইকে পানি বিশুদ্ধকরণের জন্য বিকল্প পথ বেছে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে তাই বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, পরিপূর্ণ বিশুদ্ধ পানির জন্য নির্ভর করা যেতে পারে পারে উন্নতমানের পানিশোধন যন্ত্রের ওপর। সাধারণ ফিল্টার কি পানি থেকে ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া দূর করতে পারে? সাধারণ ফিল্টার পানি থেকে ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া দূর করতে পারে না। তাই বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন উন্নতমানের পানিশোধন যন্ত্রের মাধ্যমে পানি শোধন করে পান করার জন্য। জনকণ্ঠ স্বাস্থ্য প্রতিবেদন
×