ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

ভাতা ও বেতনের জন্য আজ ছাড় ৪৮ কোটি টাকা;###;বেতন ও পাটকল আধুনিকায়নে বরাদ্দ এক হাজার কোটি টাকা

আজই পাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১২ এপ্রিল ২০১৬

আজই পাচ্ছে

তপন বিশ্বাস ॥ দেশের পাট শ্রমিকদের সকল পাওনা মিটিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সচিবালয়ে সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে তিনি এই নির্দেশ দেন। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনকে (বিজেএমসি) মোট এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। চলতি বছরেই এই টাকা ছাড় করা হবে। এর মধ্যে আজ মঙ্গলবার ৪৮ কোটি টাকা ছাড় হচ্ছে বলে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মন্ত্রিসভা বৈঠকে দেশের পাটকলগুলোকে আধুনিকায়ন করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। আধুনিকায়ন করার বিষয়ে বস্ত্র ও পাট সচিব এম এ কাদের সরকারকে মতামত প্রদান করতে বলেন। এ সময় সচিব বলেন, এই সেক্টরকে আধুনিকায়ন করতে হলে পাটকলগুলোর পুরনো যন্ত্রপাতি পরিবর্তন করে নতুন ও আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করতে হবে। ১৯৫০-১৯৬০ দশকের এই যন্ত্রপাতি অতি পুরনো এবং এগুলো দিয়ে আধুনিকায়ন প্রায় অসম্ভব। এ সময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, না এই যন্ত্রপাতি সংযোজন করার প্রয়োজন হবে না। এই যন্ত্রপাতি দিয়েই আধুনিকায়ন করা সম্ভব। তখন বস্ত্র ও পাট সচিব নীরব হয়ে যান। এ সময় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের বিরোধিতা করেন। সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, আপনি কি বলছেন? প্রধানমন্ত্রী বলেন, আধুনিক যন্ত্রপাতি না হলে এই সেক্টরের উন্নতি করা কঠিন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে থাকা ব্যাগ দেখিয়ে তিনি বলেন, দেখুন তো এটি পাটের তৈরি ব্যাগ। কিন্তু কি সুন্দর। বিভিন্ন নামী দামী ব্রান্ডের ব্যাগের চেয়েও আকর্ষণীয়। তিনি বলেন, আজকাল পাট দিয়ে সুন্দর শাড়ি তৈরি হচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে তা পাটের শাড়ি না বলে বিক্রেতারা বিভিন্ন ব্রান্ডের নামে তা বিক্রি করছে। আধুনিক যন্ত্রপাতি ছাড়া এগুলো সম্ভব নয়। এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাটকল শ্রমিকদের সকল পাওনা মিটিয়ে দিতে হবে। এর জন্য মোট কত টাকা প্রয়োজন হবে প্রধানমন্ত্রী এমন প্রশ্নের জবাবে পাট ও বস্ত্র সচিব বলেন, দেশের সকল পাটকল শ্রমিকদের গ্রাচুইটি, প্রভিডেন্ড ফান্ডসহ সকল পাওনা মেটাতে মোট ছয় শ’ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। এ সময় অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শ্রমিকদের পাওনা মেটানোসহ পাটকলগুলোকে আধুনিকায়ন করতে মোট এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেন। এই বরাদ্দের টাকা চলতি বছরেই ছাড় করারও নির্দেশ দেন তিনি। বকেয়া আদায়ের জন্য পাটকল শ্রমিকরা আন্দালন করছে। এদের পাওনা পহেলা বৈশাখের আগেই মিটিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পহেলা বৈশাখে বোনাস পেয়ে সারা দেশের মানুষ আনন্দ উৎসব করবে, আর আমার পাট শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য পাওনা না পেয়ে থালা-বাসন নিয়ে বসে থাকবে এটা মানতে পারছি না। এ লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে আজ মঙ্গলবার ৪৮ কোটি টাকা ছাড় হচ্ছে। এ লক্ষ্যে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা রাত ৮টা পর্যন্ত কর্মস্থলে থেকে তদারকি করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাটশিল্প আমাদের পুরনো ঐতিহ্য। এটি রাজনীতিরও একটি অংশ। এই পাট নিয়েও অতীতে রাজনীতি হয়েছে। তাই এটিকে আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এ সময় শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এবং বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদকে নিয়ে পাটশিল্প উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন করতে প্রধানমন্ত্রী একটি কমিটি গঠন করে দেন। বর্ষীয়ান এই দুই মন্ত্রী অর্থমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে পাট সেক্টরের যাবতীয় উন্নয়ন করার পরিকল্পনা তৈরি করে তা পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়কে দিয়ে বাস্তবায়ন করাবেন। এদিকে মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে নিজ মন্ত্রণালয়ে জরুরী এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনকে (বিজেএমসি) এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন, যা দিয়ে সারা দেশের সব রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের কর্মীদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ করা হবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, শ্রমিকদের সকল বকেয়া পরিশোধ এবং পাট কেনার জন্য প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিজেএমসির নামে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার কথা বলেন। এ বরাদ্দ পাওয়ায় বিজেএমসি’র দীর্ঘদিনের অচলবস্থার নিরসন হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। এগুলো দীর্ঘদিনের পাওনা। ২০০৮, ২০০৯ ও ২০১০ সালের কিছু পাওনা আছে। গত তিন বছরের পাওনা বেশি। এর মধ্যে গ্র্যাচুইটির টাকা পাওনা আছে পৌনে তিন শ’ কোটি টাকা, প্রভিডেন্ট ফান্ডের আছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। শ্রমিকদের গত ৮ সপ্তাহের মজুরি পাওনা আছে ৪৮ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় বরাদ্দের টাকা ছাড় করলেই সব পাওনা পরিশোধ করা হবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, শুধু খুলনা এলাকার শ্রমিকরা নয়, দেশের সব মিলের শ্রমিকদের বকেয়া দিয়ে দেয়া হবে। বকেয়া মজুরি পরিশোধসহ পাঁচ দফা দাবিতে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর শ্রমিকরা গত বেশ কিছুদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। সোমবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে তাদের সকাল-সন্ধ্যা রাজপথ- রেলপথ অবরোধ, যা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শ্রমিকরা। প্রতিমন্ত্রী জানান, বিজেএমসির আওতাধীন ২৭টি পাটকলের সবই এখন চালু। এসব পাটকলের ৭০ হাজার শ্র্রমিকের মধ্যে ৩২ হাজার স্থায়ী। টাকা ছাড় দিতে প্রক্রিয়াগত সময় বেশি লাগে বলে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় নিজস্ব তহবিল থেকে ৪৮ কোটি টাকা মজুরি পরিশোধ করে দেবে। বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেন, সোনালী আঁশ পাটের উৎপাদন ও বহুমুখী ব্যবহার উৎসাহিত এবং জনপ্রিয় করতে পাট চাষীদের সোনালী স্বপ্নপূরণে জোরদার পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। এজন্য পাটকল শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি ও ভাতা পরিশোধ, পাটখাতে প্রয়োজনীয় অর্থবরাদ্দ, পাটকলগুলোকে উৎপাদনমুখী করতে ও যথাসময়ে পাট ক্রয়ের জন্য বাংলাদেশ জুট মিল কর্পোরেশনকে (বিজেএমসি) এই বরাদ্দ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মির্জা আজম বলেন, কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্যের উৎপাদন ও রফতানি বৃদ্ধি, দেশের অভ্যন্তরের পাটপণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি, পাটের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ ও পরিবেশ রক্ষায় পণ্যের মোড়কীকরণে পাটের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। খুব দ্রুত বন্ধ পাটকলগুলো পুনরায় চালু করা সম্ভব হবে জানিয়ে তিনি বলেন, পুরাতন মেশিনের পরিবর্তে আধুনিক মেশিন সংযুক্তকরণে কাজ দ্রুত করা হবে। এ সময়ে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক, বস্ত্র ও পাট সচিব এম এ কাদের সরকার, পাট অধিদফতরের মহাপরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
×