ক্যাটাগরি বাঁচাতে লভ্যাংশ দিচ্ছে কোম্পানিগুলো

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কোম্পানির ঘোষিত লভ্যাংশ পাওয়ার মাধ্যমে লোকসান কাটানোর প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না শেয়ারধারীদের। বছর শেষে ভাল মুনাফা করলেও কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের চাহিদা মতো লভ্যাংশ ঘোষণা না দেয়ার কারণে বেশিরভাগ কোম্পানির দর কমেছে। বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, লভ্যাংশ দেয়ার নাম করে ক্যাটাগরি টিকিয়ে রাখতে চাচ্ছে কোম্পানিগুলো। যার কারণে রিজার্ভ বাড়ানোর নাম করে কোম্পানিগুলো লভ্যাংশ কম ঘোষণা করছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্যানুসারে সম্প্রতি লভ্যাংশ ঘোষণা করা বেশিরভাগ শেয়ারের দর কমেছে। লভ্যাংশ প্রস্তাবের দিনই এসব শেয়ারের দর কমতে দেখা গেছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সম্প্রতি ৯টি কোম্পানি ২০১৫ সালের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এই কোম্পানিগুলো হচ্ছে- পূবালী ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, এনসিসি ব্যাংক, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, ট্রাস্ট ব্যাংক, ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স, এপেক্স ফুটওয়্যার ও কেডিএস এক্সেসরিজ। কোম্পানিগুলোর মধ্যে কেডিএস এক্সেসরিজ এবং এপেক্স ফুটওয়্যার ছাড়া লভ্যাংশ প্রস্তাবের দিন বাকি সবগুলো প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর কমেছে। এই বিষয়ে ডিএসইর পরিচালক মোঃ রকিবুর রহমান বলেন, কোম্পানি তার অবস্থা বিবেচনা করে লভ্যাংশ দেবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাদের কাছে অনুরোধ থাকবে তারা যদি বিনিয়োগকারীদের কথা মাথায় রেখে একটু বাড়িয়ে লভ্যাংশ দেন, তবে তারা উপকৃত হবে। কারণ বিনিয়োগকারীদের অবস্থা এখন খুবই করুণ। প্রসঙ্গত, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোন কোম্পানি যদি ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেয়, তখন সেই প্রতিষ্ঠানের ঠাঁই হয় বি ক্যাটাগরিতে। অন্যদিকে বছর শেষে ১০ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ দিলে সেই কোম্পানি এ ক্যাটাগরির স্বীকৃতি পায়। আর যদি কোন লভ্যাংশ না দেয় তবে সে কোম্পানি জেড ক্যাটাগরি বিবেচিত হয়। জানা গেছে, কোম্পানি তালিকাভুক্তির পর থেকে প্রথম এজিএম পর্যন্ত এন ক্যাটাগরিতে থাকে। প্রসঙ্গত, পুঁজিবাজারে বি এবং জেড ক্যাটাগরির শেয়ারের চাহিদা তুলনামূলকভাবে কম। যে কারণে কোম্পানিগুলো ১০ থেকে ১৫ শতাংশের মধ্যে লভ্যাংশ দিয়ে ক্যাটাগরি বাঁচিয়ে রাখতে চায়। গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স ॥ এই কোম্পানিটি ২০১৫ সালে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ প্রস্তাব করেছে। যা আগামী ২৮ মে কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভায় পাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কোম্পানিটির রেকর্ড ডেট ধরা হয়েছে ১১ এপ্রিল। প্রতিষ্ঠানটির মেয়ারের বর্তমান শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৩ টাকা ০৩ পয়সা। ট্রাস্ট ব্যাংক ॥ এই প্রতিষ্ঠানটি ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ শতাংশ নগদ এবং ৮ শতাংশ বোনাস শেয়ার। ১৯ মে কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভায় পাস হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ এপ্রিল। কোম্পানির বর্তমান শেয়ার প্রতি আয় ৩ টাকা ২৯ পয়সা। ইউনিয়ন ক্যাপিটাল ॥ কোম্পানিটির পক্ষ থেকে ২০১৫ সালের জন্য ১২ শতাংশ লভ্যাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। যার মধ্যে ৭ শতাংশ বোনাস এবং ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ রয়েছে। লভ্যাংশ পাস করার জন্য ২৮ এপ্রিল গুলশানের স্পেক্ট্রা কনভেনশন সেন্টারে বার্ষিক সাধারণ সভার আয়োজন করেছে কোম্পানিটি। ইউনাইডেট ইন্স্যুরেন্স ॥ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ১১ শতাংশ লভ্যাংশ প্রস্তাব করেছে করেছে। যার মধ্যে ৬ শতাংশ নগদ এবং ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার রয়েছে। যা আগামী বার্ষিক সাধারণ সভায় পাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৩ টাকা ১১ পয়সা। এপেক্স ফুটওয়্যার ॥ ২০১৫ সালের জন্য ৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রস্তাব করেছে। আগামী ১০ মে রাজধানীর গুলশানের স্পেক্ট্রা কনভেনশন সেন্টারে সকাল সাড়ে ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে। এ কারণে প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের রেকর্ড ডেট ধরা হয়েছে ১৯ এপ্রিল। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি শেয়ারের ইপিএস বা শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৪ টাকা ৬৫ পয়সা। কেডিএস এক্সসরিজ ॥ ২০১৫ সালের জন্য ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ প্রস্তাব করেছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ৫ শতাংশ নগদ এবং ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার। কোম্পানির আগামী বার্ষিক সাধারণ সভায় এ লভ্যাংশ পাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের ইপিএস দাঁড়িয়েছে ২ টাকা ৮৬ পয়সা। ব্যাংক এশিয়া ॥ কোম্পানির পক্ষ থেকে ২০১৫ সালে বিনিয়োগকারীদের জন্য ২০ শতাংশ লভ্যাংশ প্রস্তাব করা হয়। যা আগামী বার্ষিক সাধারণ সভায় পাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা আগামী ১৮ এপ্রিল রাজধানীর ইস্কাটনে অনুষ্ঠিত হবে। এ কারণে ৩১ মার্চ এ কোম্পানির শেয়ারের রেকর্ড ডেট ধরা হয়েছে। কোম্পানিটির বর্তমান শেয়ার প্রতি আয় ৩ টাকা ০৪ পয়সা। এনসিসি ব্যাংক ॥ এই কোম্পানি শেয়ার হোল্ডারদের জন্য ১২.৫০ শতাংশ লভ্যাংশ প্রস্তাব করেছে। ২০ জুন বেইলি রোডে প্রতিষ্ঠানটির এজিএম অনুষ্ঠিত হবে। এই জন্য রেকর্ড ডেট ধরা হয়েছে ২৫ এপ্রিল। বর্তমানে এ কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় ১ টাকা ৫৭ পয়সা।