ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্বের বার্তা দিলেও ক্ষমা প্রার্থনা করেননি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

হিরোশিমায় কেরির বিনম্র শ্রদ্ধা

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ১২ এপ্রিল ২০১৬

হিরোশিমায় কেরির বিনম্র শ্রদ্ধা

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি সোমবার জাপানের হিরোশিমা শহরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আণবিক বোমায় নিহতদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো চালানো ঐ মার্কিন আণবিক বোমা হামলার সাত দশক পর একটি পরমাণু অস্ত্রমুক্ত বিশ্বের জন্য শান্তি ও আশার বার্তা দেন তিনি। তবে কেরি এই হামলার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেননি। আণবিক বোমা বিস্ফোরণে হিরোশিমার এক লাখ ৪০ হাজার নাগরিক নিহত হয়েছিল। খবর এএফপি, বিবিসি, গার্ডিয়ান ও ইয়াহু নিউজের। ১৯৪৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র আণবিক বোমার আঘাতে জাপানের এই শহরটিকে ধ্বংস করার পর কেরিই সর্বোচ্চ কোন মার্কিন নেতা, যিনি হিরোশিমা সফর করলেন। এই শহরে এখন জি-৭ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন চলছে। তার এ সফরের মধ্য দিয়ে আগামী মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার হিরোশিমা সফরও অনেকটা নিশ্চিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কেরি জি-৭ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে হিরোশিমার শান্তি জাদুঘর পরিদর্শন করেন এবং স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। কেরি ওই অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে কোন কথা বলেননি। তবে তিনি জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিরোশিমার অধিবাসী ফুমিও কিশিদাকে হাত দিয়ে ধরে কানে কানে কথা বলেন। জাদুঘরে অতিথিদের জন্য রাখা বইতে কেরি লেখেন, বিশ্বের সবাইকে এই স্মৃতিস্তম্ভের ক্ষমতা দেখা ও অনুভব করা উচিত। শুধু পরমাণু অস্ত্রের হুমকি দূর করতে নয়, উপরন্তু খোদ যুদ্ধই এড়াতে আমাদের সকল প্রচেষ্টা নিয়োজিত করার বাধ্যবাধকতা স্পষ্ট ও দৃঢ়ভাষায় মনে করিয়ে দেয় এই স্মৃতিস্তম্ভ। তিনি আরও লেখেন, যুদ্ধ অবশ্যই আমাদের সর্বশেষ অবলম্বনই হবে, কখনও প্রথম পছন্দ নয়। এই স্মৃতিস্তম্ভকে বিশ্বকে পরিবর্তন করতে, শান্তি খুঁজতে এবং দেশের সব নাগরিকের অনাকাক্সিক্ষত ভবিষ্যত নির্মাণে আমাদের প্রচেষ্টাকে আরও জোরদার করত বাধ্য করেছে। হিরোশিমা স্মৃতিস্তম্ভে যাওয়ার আগে কেরি বলেছিলেন, আমরা অতীতকে স্মরণ করব এবং নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করব। তবে এই সফর অতীতকে ঘিরে নয়। এটি বর্তমান ও অবশ্যই ভবিষ্যতকে ঘিরে। কেরির এই সফরকে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শিকিদো ঐতিহাসিক ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন। রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর বলে মার্কিন নেতারা এই শহরটি এড়িয়ে চলতেন। দায়িত্বে থাকা অবস্থায় কোন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিরোশিমা সফর করেননি। আগামী মাসে জাপানের ইসেশিমা শহরে অনুষ্ঠেয় বিশ্বের প্রভাবশালী অর্থনীতির শীর্ষ-৭ দেশের সম্মেলনে যোগ দেবেন ওবামা। তখন তিনি কয়েক ঘণ্টার জন্য হিরোশিমায় যেতে পারেন। যদি হিরোশিমা পরিদর্শন করেন তাহলে তিনিই হবেন প্রথম কোন মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর হিরোশিমা সফর করবেন। ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্র হিরোশিমায় আণবিক বোমা ফেলে। এতে নিহত হয় এক লাখ ৪০ হাজার মানুষ। এর তিন দিন পরই নাগাসাকি শহরে আরও একটি আণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় যুক্তরাষ্ট্র। ওই বিস্ফোরণে নাগাসাকি শহরের ৭৪ হাজার মানুষ নিহত হয়। এর ছয়দিন পর ১৫ আগস্ট জাপানের সম্রাট হিরোহিতো আত্মসমর্পণ করেন এবং এর মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়। এদিকে কেরির সফরের সময় ধারণা করা হয়েছিল, ওয়াশিংটন এই বোমা হামলা নিয়ে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাইতে পারে। তবে কেরি ও অন্য কর্মকর্তারা এই অনুমান বাতিল করে দেন। কেরির সঙ্গে সফররত এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, আনুষ্ঠানিক কোন ক্ষমা চাইবেন না কেরি। আপনি যদি প্রশ্ন করেন যে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্ষমা চাওয়ার জন্য হিরোশিমায় যাচ্ছেন কিনা তাহলে এর উত্তর হবে না। এখনও বেশিরভাগ আমেরিকান মনে করেন, যুদ্ধ শেষ করতে এবং মার্কিন সেনাদের জীবন বাঁচাতে এই বোমা বর্ষণ যুক্তিসঙ্গত। অপরদিকে বেশিরভাগ জাপানীও মনে করেন, এটি ন্যায়সঙ্গত হয়নি। ক্ষমা চাওয়া প্রসঙ্গে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ বলেছিলেন, হিরোশিমার জন্য ক্ষমা চাওয়া হবে পুরো মাত্রায় ভুল স্বীকার তাই তিনি কখনও ক্ষমা চাইবেন না। এদিকে হিরোশিমার ৭১ বছর বয়সী মাসাহিরো আরিমাই ক্ষমা প্রসঙ্গে বলেছেন, যখন আমরা বিশ্বের ভবিষ্যত ও আগামী প্রজন্মের জন্য শান্তির কথা চিন্তা করছি, তখন এটি অপরিহার্য বলে আমি মনে করি না। অপর এক বাসিন্দা ৬৮ বছরের ইয়োশিফুমি সাসাকি বলেছেন, আমরা সবাই সমঝোতা চাই। উভয়ই আশা করছেন, আগামী মাসে ওবামা কেরির পদাঙ্ক অনুসরণ করবেন। এর আগে ২০০৮ সালে ন্যান্সি পেলোসি হিরোশিমা সফর করেছিলেন। তখন তিনি মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পীকার ছিলেন।
×