ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বশিরুল ইসলাম

কৃষি শিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণ

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ১৮ মার্চ ২০১৬

কৃষি শিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণ

বিশ্বজুড়ে কৃষিকে বলা হচ্ছে সম্ভাবনাময় সবুজ পেশার ক্ষেত্র। স্বাধীনতা পরবর্তীতে এ দেশে এত বড় সাফল্য আর কোন পেশায় অর্জিত হয়নি। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বাংলাদেশের উন্নয়নের যে তিনটি সেক্টরে ভূমিকা রয়েছে তার মধ্যে কৃষি সেক্টর অন্যতম। ইতোমধ্যে সবুজ অর্থনীতি গড়ার কারিগর হিসেবে দেশের গ-ি পেরিয়ে বাংলাদেশের কৃষিবিজ্ঞানীরা আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছেন। একটা সময় ছিল যখন হাতেগোনা কয়েকজন নারী শিক্ষার্থী কৃষিতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করত। বর্তমানে গ্রামের মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে শহরে উচ্চবিত্ত পরিবারে মেয়েদের কাছে কৃষি শিক্ষায় আগ্রহ ও অংশগ্রহণ বেড়েই চলছে। কৃষিতে উচ্চশিক্ষা ও পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন অনেকে। বর্তমানে রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্ধেকই নারী শিক্ষার্থী। গত পাঁচ বছর ধরে ছাত্রীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বছর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে শতকরা ৪৬ ভাগই নারী। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত কৃষিকন্যাদের পদচারণায় মুখরিত রাজধানীর বুকে আধুনিক গ্রাম হিসেবে পরিচিত চিরসবুজ এ ক্যাম্পাস। এ বছর রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩টি অনুষদে ৪৯৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ২১৭ জন মেয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। ২০১৫ সালে ৫০০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৫৫ জন, ২০১৪ সালে ৪৯৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৪০ জন, ২০১৩ সালে ৪৩৭ জনের মধ্যে ১৮৭ জন মেয়ে শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। বর্তমানে কৃষি অনুষদে ১১২৮ জন ¯œাতক শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫৫৯ জন মেয়ে শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। আগে মেয়েদের জন্য মাত্র একটি হল থাকলেও বর্তমানে দুটি হল রয়েছে। গত কয়েক বছরে ছাত্রীসংখ্যার আধিক্যের কারণে ছাত্রী হলে ব্যাপক সিট সঙ্কট দেখা দেয়। এ ব্যাপারে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য প্রফেসর মোঃ শাদাত উল্লা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন ছেলেদের জন্য একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে যতটি হল থাকবে মেয়েদের জন্যও ঠিক সে পরিমাণ হল থাকতে হবে। সে লক্ষ্যে কৃষকরতœ শেখ হাসিনা হলের পাশে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সমৃদ্ধ আর একটি হল শীঘ্রই নির্মাণ করা হবে। তাছাড়া পাঁচতলা বিশিষ্ট কৃষকরতœ শেখ হাসিনা হলকে দশতলা করা হলে এ সঙ্কট থাকবে না বলে জানান প্রফেসর মোঃ শাদাত উল্লা। কৃষকরতœ শেখ হাসিনা হলের শিক্ষার্থী সাবিনা সুলতানা কাকন জানান, ছোটবেলা থেকে মেডিক্যালে পড়ার ইচ্ছা থাকলেও আজ তা পরিবর্তন হয়ে গেছে। শেকৃবি সে ইচ্ছা পূরণ করেছে, মেডিক্যালে পড়ার মোহ দূর করেছে। দেশের কৃষিকে সমৃদ্ধি করতে কৃষি শিক্ষার শিক্ষার্থী হতে পেরে আমি গর্বিত। কৃষি অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোঃ কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমানে কৃষির যে কোন সেক্টরে মেয়েরা পূর্বের চেয়ে অনেক এগিয়ে। তিনি আরও বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০ শতাংশেরও বেশি মেয়ে ভর্তি হয় এবং তারা কৃতিত্বের সঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রী নিয়ে কৃষির বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজ নারীদের যথার্থ মূল্যায়ন দিলে তারা আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। চারটি পূর্ণাঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ যে সব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি শিক্ষায় উচ্চতর ডিগ্রী দেয়া হচ্ছে এখানকার প্রতিটি ছাত্রীই তাদের মেধার স্বাক্ষর রাখছে। শিক্ষক আর গবেষকদের নয়া প্রযুক্তি নিয়ে মাঠ পর্যায়েও তারা কৃষাণ-কৃষাণিদের সঙ্গে মতবিনিময় করছে, পরামর্শ দিচ্ছে। ভাল ফলাফল করা জন্য মেয়েরা আজ রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী পদক থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রে সফল হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশা থেকে শুরু করে বিসিএস, কৃষি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এমনকি ব্যাংক, প্রশাসনের বিভিন্ন সেক্টরে আজ সুনামসহ কাজ করছে। স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমানোর মতো সাফল্যও রয়েছে তাদের ঝুলিতে। ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের এ সাফল্য যেমন বাড়িয়ে দিয়েছে নারী কৃষি শিক্ষার গুরুত্ব তেমন সমৃদ্ধ করছে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য প্রফেসর মোঃ শাদাত উল্লা বলেন, সন্দেহ নেই শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। গ্রামের প্রাইমারি স্কুল থেকে শুরু করে বিভাগীয় শহরের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নারী শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। আজ থেকে ২২ বছর আগে ১৯৯৪ সালে মাধ্যমিক স্তরে ছাত্রীদের হার ছিল ৩৩ শতাংশ আর উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক স্তরে প্রায় ২০ শতাংশের মতো। কিন্তু এখন ছাত্রদের পেছনে ফেলে ছাত্রী ভর্তির হার প্রতিটি স্তরে ৫০ শতাংশেরও বেশি। কৃষি সেক্টরে নারী কৃষি বিজ্ঞানীদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো।
×