ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলা একাডেমিতে একক বক্তৃতা

‘বঙ্গবন্ধুকে হৃদয়ে ধারণ করে তার দর্শন চর্চা করতে হবে’

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ১৮ মার্চ ২০১৬

‘বঙ্গবন্ধুকে হৃদয়ে ধারণ  করে তার দর্শন চর্চা করতে হবে’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তরুণ প্রজন্ম ও আজকের দিনের ছাত্রনেতাদের বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে আরও বেশি পড়ালেখা করা উচিত। বঙ্গবন্ধুকে হৃদয়ে ধারণ করে তাঁর দর্শনকে চর্চা করতে হবে। যারা লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত- তাদের তাঁর ওপর আরও বেশি লেখালেখি করা উচিত। বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রের যাতাকল ভেঙ্গে দিয়ে জীবনের প্রতিটি পর্বে সাধারণ মানুষের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন, কথা বলেছেন। ঢাবির চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের পক্ষে কথা বলে তিনি ছাত্রত্ব খুয়েছেন, তবু থেমে যাননি। শিশুকাল থেকেই তিনি হৃদয়ে বাঙালী জাতিসত্তা ধারণ করতেন, জাতিসত্তা বঙ্গবন্ধুর লালিত দীর্ঘদিনের এক স্বপ্ন। তিনিই (বঙ্গবন্ধু) প্রথম এবং সর্বশেষ ব্যক্তি, যিনি আমাদের (বাঙালীদের) পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তি দিয়েছেন। তার জীবনের প্রতিটি অধ্যায় থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়া উচিত। বৃহস্পতিবার বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৭তম জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক একক বক্তৃতানুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়া রহমান এসব কথা বলেন। বাংলা একাডেমি এই একক বক্তৃতার আয়োজন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে ওই বক্তৃতানুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। এ সময় অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, বঙ্গবন্ধু যে সম্পদের কথা বলেছিলেন বর্তমান সরকার সে সম্পদের যথাযথ ব্যবহার করেই অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকে আমাদের হৃদয় থেকেই ধারণ করতে হবে, তাকে চর্চা করতে হবে। প্রায় ৩৬ মিনিটের একক বক্তৃতায় অধ্যাপক জিয়া রহমান বঙ্গবন্ধুর জন্ম-মৃত্যু, জীবন দর্শন, ছাত্র রাজনীতি, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন, বাঙালী জাতীয়তাবাদ, মহানুভবতা, সমাজের সব শ্রেণী-পেশার মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ঐকান্তিক ভালবাসার আকাশসম নিদর্শনগুলোর খ- খ- চিত্র ফুটিয়ে তুলেন। ’৭৫ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে দেশের রাজনৈতিক দর্শনে যে বিস্তর ফারাকের সৃষ্টি হয়Ñ তাও উঠে আসে দীর্ঘ এই বক্তৃতায়। বক্তৃতার শুরুতেই ঢাবির এই অধ্যাপক বলেন, আমি ঠিক এত বড় মানুষ নই, তাঁর সম্পর্কে আলোচনা করার। তারপরও বাংলা একাডেমি আমাকে নির্ধারণ করেছে। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে আমরা সব সময় কথা বলছি, বর্তমানে আমরা যে অবস্থানে, আমাদের আরও বেশি লেখালেখি করা উচিত। বঙ্গবন্ধু এত বড় সত্তা, শুধু একটি বিষয় (শিশু দিবস) নিয়ে আলোচনা হলে তার বিশালতা খর্ব হবে। প্রত্যেকটি বিষয়ে তার ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-চেতনা নিয়ে বিস্তর আলোচনায়ও অজানা থেকে যায় অনেক কিছু। শ্রোতাদের ভোটে বিবিসির জরিপে বঙ্গবন্ধু হাজার বছর শ্রেষ্ঠ বাঙালী নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিনিই (বঙ্গবন্ধু) প্রথম এবং সর্বশেষ ব্যক্তি, যিনি আমাদের পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তি দিয়েছেন। এ বাংলায় অনেক শাসক এসেছে, শোষণ করেছেন; কিন্তু প্রকৃত মুক্তি এসেছে জাতির পিতার হাত ধরেই। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর একটি উক্তি উল্লেখ করে ঢাবির এই অধ্যাপক বলেন, বাংলাদেশ সম্পদশালী ছিল। কিন্তু বাঙালীরা তা অনুধাবণ করতে পারত না, যা তিনি তার জীবনীতে উল্লেখ করেছেন। তারা জানে না, তারা বুঝে না, তারা শুনে না, যতদিন না বুঝবেÑ ততদিন তাদের কোন উন্নতি হবে না এমন উক্তিটি তাই ঠিক যথার্থই ছিল। নেতা মুজিব থেকে মুজিব ভাই হয়ে উঠার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে অধ্যাপক জিয়া বলেন, জাতিসত্তা বঙ্গবন্ধুর লালিত এক স্বপ্ন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে এটি লালন করে আসছিলেন। তিনি ক্যারেশমেটিক লিডার হয়েছেন, তিনি মুজিব ভাই হয়েছেন, আইকনেটিক ক্যারেক্টার হয়েছেন, যাকে পেয়েছেন তাকেই বুকে ঝঁড়িয়ে ধরেছেন। এমন নেতৃত্বগুণ সাধারণত কোন নেতার মধ্যে থাকে না। বঙ্গবন্ধু জাতীয়তাবাদী নেতা ছিলেন। পাশ্চাত্যের গণতন্ত্রের সঙ্গে তিনি সমাজতন্ত্রের সমন্বয় ঘটিয়েছেন। তিনি শ্রেণী-পেশা সব কিছুকে সব সময় ছাপিয়ে যেতেন। একদিকে তিনি বলছেন ‘আমি বাঙালী’, অন্যদিকে তিনি আবার বলছেন, ‘আমি মুসলমান’। স্বাধীনের পর ভারতে নেমেই তিনি বলেন, আমার দেশ থেকে মিত্রবাহিনী কবে যাবে? তিন মাসের মধ্যেই ভারত মিত্রবাহিনীকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়।
×