ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

ইএসপিএন ক্রিকইনফো পুরস্কার

বর্ষসেরা নবাগত ক্রিকেটার মুস্তাফিজ

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ১৫ মার্চ ২০১৬

বর্ষসেরা নবাগত ক্রিকেটার মুস্তাফিজ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণার বাকি ছিল, আগেই জানা গিয়েছিল মারুতি-সুজুকি ইএসপিএন ক্রিকইনফোর ভোটাভুটিতে বর্ষসেরা অভিষিক্ত বোলারের স্বীকৃতিটা তিনিই পাচ্ছেন। কারণ ভারতে চলমান টি২০ বিশ্বকাপে অংশ নেয়ার জন্য বাংলাদেশ দল বর্তমানে সেখানেই অবস্থান করছে। আর গত বৃহস্পতিবার ধর্মশালায় ঐচ্ছিক অনুশীলনের সময় বাংলাদেশের তরুণ ‘পেস বিস্ময়’ মুস্তাফিজুর রহমানের হাতে স্মারক তুলে দেন ইএসপিএন ক্রিকইনফো’র প্রতিনিধিরা। আনুষ্ঠানিক ঘোষণার তখনও তিনদিন বাকি সে কারণে গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ করা হয়নি। তবে খবরটি গত ১২ মার্চ দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত হয়েছিল। অবশেষে সোমবার সেই স্বীকৃতির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় ওয়েবসাইটটি। ২০১৫ সালে বিশ্ব ক্রিকেট নতুন যে কয়েকজন ক্রিকেটারকে পেয়েছে মুস্তাফিজের অবদান এবং নৈপুণ্য দুটোই অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রেখেছিল তাকে। তবে ভোটাভুটির ক্ষেত্রে দর্শক ভোট এবং ইএসপিএন ক্রিকইনফো’র জুরি বোর্ডের ভোট ছিল। সেই ভোটাভুটিতে মুস্তাফিজের জোর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার কাগিসো রাবাদা, শ্রীলঙ্কার দুশমন্ত চামিরা এবং ইংল্যান্ডের মার্ক উড। এছাড়া তিন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছেন নিউজিল্যান্ডের তিনজন। বর্ষসেরা ওয়ানডে বোলিং নৈপুণ্য টিম সাউদি, বর্ষসেরা অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম ও বর্ষসেরা টেস্ট ব্যাটিং নৈপুণ্য কেন উইলিয়ামসন। যদিও এবার মাশরাফি বিন মর্তুজা বর্ষসেরা অধিনায়ক হওয়ার দৌড়ে বেশ এগিয়ে ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ দলকে ঈর্ষণীয় সাফল্য পাইয়ে দিয়েছেন গত বছর। ওয়ানডের বর্ষসেরা ব্যাটিং নৈপুণ্যের পুরস্কার উঠেছে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক এবি ডি ভিলিয়ার্সের হাতে। বর্ষসেরা টেস্ট বোলিং স্টুয়ার্ট ব্রডের। বর্ষসেরা টি২০ ব্যাটিং নৈপুণ্য ভারতীয় ওপেনার রোহিত শর্মা, বর্ষসেরা টি২০ বোলিং নৈপুণ্য দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার ডেভিড উইজ জিতেছেন। গত বছর শুধু বাংলাদেশের ক্রিকেটেই নয়, বিশ্ব ক্রিকেটে ধূমকেতুর মতো উদয় হন মুস্তাফিজ। ভারতের সঙ্গে ওয়ানডে অভিষেকেই ৫ এবং দ্বিতীয় ম্যাচে ৬ উইকেট নিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়েন। ৩ ম্যাচের সিরিজে ১৩ উইকেট নিয়েও পুরনো রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলেন। তবে অভিষেক সিরিজেই ১৩ উইকেটের ঘটনা ছিল সেটাই প্রথম। বছর শেষে ৯ ওয়ানডেতে মাত্র ১২.৩৪ গড়ে ২৬ উইকেট। ওয়ানডের এমন নৈপুণ্য তাকে আইসিসির বর্ষসেরা ওয়ানডে একাদশেও ঠাঁই করে দিয়েছিল অন্য সব বিশ্বসেরা ক্রিকেটারদের সঙ্গে। এছাড়া ৫ টি২০ খেলে ১৮.৬৬ গড়ে ৬ এবং ২ টেস্ট খেলে ১৪.৫০ গড়ে ৪ উইকেট শিকার করেন সাতক্ষীরার এ তরুণ। সবমিলিয়ে এক বছরে মাত্র ১৩.৬৩ গড়ে ৩৬ উইকেট নবাগত একজন বোলার হিসেবে! শুধু অভিষেক হওয়া অন্য যেকোন বোলারের চেয়েই নয়, বরং ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাপী যত বোলার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৩০টির বেশি উইকেট নিয়েছেন তারা সবাই পিছিয়ে ছিলেন মুস্তাফিজের চেয়ে বোলিং গড় ও স্ট্রাইকরেটে (১৯.৫)। অথচ মুস্তাফিজ ঠিকই বিশ্ব ক্রিকেটের বড় বড় ব্যাটসম্যানদের শিকার করেছেন এবং খেলেছেনও ক্রিকেট পরাশক্তিদের বিরুদ্ধে। তার উইকেটগুলো ছিল সুরেশ রায়না, রোহিত, কুইন্টন ডি কক (৩ বার করে)। এছাড়া জেপি ডুমিনি, হাশিম আমলা, রেগিস চাকাবভা, শহীদ আফ্রিদি ও শন উইলিয়ামসরাও তার কাছে উইকেট দিয়েছেন। অথচ সাতক্ষীরা জেলা শহর থেকে ২৩০ কিলোমিটার দূরের একটি প্রত্যন্ত গ্রাম তেঁতুলিয়াতে জন্ম নেয়া এ তরুণ ক্রিকেট খেলার ধারা বিবরণী রেডিওতে শুনে আকৃষ্ট হয়েছিলেন এ খেলার প্রতি। তার বড় ভাই তাকে মাঠে নিয়ে যাওয়ার পর প্রথমে ব্যাটিং করে কাউকে সন্তুষ্ট করতে পারেননি। এরপর বাঁ হাতে পেস বোলিং করতে শুরু করেন। এক সিনিয়র ক্রিকেটার তাকে সাতক্ষীরা জেলায় যেতে বলেছিলেন ক্রিকেট খেলতে। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজকের মুস্তাফিজ। মাঝের গল্পগুলো এখন সবারই জানা। তিনি যেন বাংলাদেশ ক্রিকেটে রূপকথার নায়ক হয়ে গেছেন এখন। সেটার শেষটা এবার বর্ষসেরা নবাগত খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতে আরেকবার করে দেখালেন। পুরস্কারের তালিকায় অবশ্য বর্ষসেরা অধিনায়ক হওয়ার দৌড়ে ভাল অবস্থানেই ছিলেন মাশরাফি। গত বছর ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে সাফল্যম-িত। আর সেসব সাফল্য অধিনায়ক মাশরাফির হাত ধরেই এসেছে। তবে শেষ পর্যন্ত জিতে গেলেন ম্যাককুলাম। মূলত নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটে তিন ফরমেটেই গত ১০/১১ বছরে তার অবদান এবং অধিনায়ক হিসেবে প্রথমবার দলকে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছে দেয়া এবং ক্যারিয়ারের সমাপ্তি টানা- এসব বিবেচনা করেই ম্যাককুলামকে ভোট দিয়েছেন জুরিরা। পুরস্কার দেয়ার ক্ষেত্রে ভোটাধিকার প্রাপ্ত জুড়ি বোর্ডে ছিলেন ইয়ান চ্যাপেল, মাহেলা জয়াবর্ধনে, জেফ ডুজন, কোর্টনি ওয়ালশ, জন রাইট, মার্ক বুচার, মার্ক নিকোলাসসহ ইএসপিএন ক্রিকইনফো’র সিনিয়র লেখক ও সম্পাদকম-লীরা।
×