স্টাফ রিপোর্টার ॥ মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমাতে ১৬৫টি ব্ল্যাক স্পট সংস্কারের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শনিবার রাজধানীতে ফিটনেসবিহীন গাড়ি পাকড়াও অভিযানে নেমে তিনি সাংবাদিকদের কাছে একথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, রাজধানীতে দুর্ঘটনা কমাতে সমন্বিত পদক্ষেপ নেয়া শুরু হয়েছে। তবে সমন্বিত পদক্ষেপ কি? এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি। বিআরটিএর জনবল বাড়ছে বলেই অভিযান জোরদার হচ্ছে এমন তথ্য জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামে একজন এবং ঢাকায় আরও একজন নারী ম্যাজিস্ট্রেসহ বিআরটিএর ম্যাজিস্ট্রেট সংখ্যা এখন ৭। বাস্তবতা হলো রাজধানীতে রেজিস্ট্রেশনভুক্ত পরিবহনের সংখ্যা সাড়ে নয় লাখের বেশি। বিপুল সংখ্যক পরিবহন নিয়ন্ত্রণে সাতজন ম্যাজিস্ট্রেট মোটেও যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন খোদ বিআরটিএ কর্মকর্তারাই।
মোবাইল কোর্ট অভিযানেও ছিলেন মন্ত্রী। এ সময় পথচারী, যাত্রী থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। বাড়তি ভাড়া, অটোরিক্সা মিটারে না চলাসহ বিভিন্ন বিষয় যাত্রীদের কাছে জানতে চান মন্ত্রী। সে অনুযায়ী তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেন।
যাত্রীবাহী বাস থামালেন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। চালক ভাবলেন, ইনি মনে হয় প্যাসেঞ্জার। তাই নিজের আসনে স্বাভাবিকভাবেই বসে থাকলেন চালক। কিন্তু প্যাসেঞ্জার (মন্ত্রী) গাড়িতে উঠেই চালককে কাগজপত্র দেখাতে বললেন। শনিবার দুপুরে বিমানবন্দর সড়কে রেডিসন হোটেলের বিপরীতে বিআরটিএ মোবাইল কোর্টের অভিযান চলছিল। সেখানে উপস্থিত হন মন্ত্রী। তিনিও বসে থাকেননি। পরিবহন সেক্টরে অরাজকতা ধরতে নিজেও মাঠে নেমে পড়েন। নামেন ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযানে। উঠে বসেন একটি পাবলিক বাসে। চালক তখনও বুঝতে পারেননি মন্ত্রী গাড়িতে উঠেছেন। এক পর্যায়ে গাড়ির কাগজপত্র চান মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এবার অবাক হলেন চালক! চোখ কপালে ওঠে। গাড়ির কাগজ মহিলা সিটের নিচে। তাই কাগজ বের করতে দেরি হলো! কিন্তু এরই মধ্যে জরিমানা হয়ে গেছে। বেশি যাত্রী বহন করার দায়ে জরিমানার এ নির্দেশ মন্ত্রীর।
অভিযানকালে মন্ত্রী সিএনজি চালিত অটোরিক্সা থামিয়ে মিটারে চলছে কি না, তা জানতে চান। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এ সড়কে অবস্থান করে বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিদর্শন করেন মন্ত্রী। এ সময় সাংবাদিকদের তিনি জানান, বিভিন্ন অপরাধে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ২২টি গাড়িতে জরিমানা করা হয়েছে। আর ৫টি বাস ডাম্পিংয়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
স্কুল শেষে বাস না পেয়ে মহাসড়কের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্রী শামসুন্নাহার শতাব্দী। পথে পেয়ে গেল মন্ত্রীকে। মিটারছাড়া সিএনজি অটোরিক্সা ও ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে তখন অভিযান চালাচ্ছেন মন্ত্রী। অভিযান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন তিনি।
ভিড়ের পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করল শতাব্দী। সাংবাদিকদের প্রশ্ন শেষ হলে হাত উঠিয়ে সে বলল, ‘মিনিস্টার ওবায়দুল কাদের! আই হ্যাভ এ কোয়েশ্চেন!’ তখন শনিবার দুপুর ১২টা। স্কুল পোশাক পরিহিত মেয়েটির পিঠে বইয়ের ব্যাগ। মেয়েটির প্রশ্ন হতবাক করে দেয় মন্ত্রীকে। মন্ত্রী জবাবে বলেন, ‘হোয়াট ইজ ইয়োর কোয়েশ্চেন। আর ইউ জার্নালিস্ট!’ সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটির উত্তর- নো! আই এম এ স্টুডেন্ট।’
মন্ত্রী মেয়েটির সাহস আর কথা বলার শক্তি দেখে অভিভূত হয়ে প্রশ্ন করতে সাদরে সায় দিলেন। মেয়েটি বলল, ‘আমি যখন স্কুলে আসি তখন ‘গুলিস্তান-আব্দুল্লাপুর রুটের ১২৩ নম্বর বাসগুলোতে মহিলা সিট নেই বলে উঠতে দেয় না। কন্ডাক্টররা বলেন, ‘আপনাদের উঠতে দেয়া যাবে না। তখন স্কুলে আসতে দেরি হয়ে যায়। আবার একইভাবে বাসায় ফিরতেও দেরি হয়। কখনও কখনও ক্লাসও মিস হয়। তাহলে মহিলাদের জন্য আলাদা বাসের কি প্রয়োজন নেই?- মেয়েটির প্রশ্ন এটাই।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: