ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

সময় ভ্রমণে সমস্যার সমাধান!

প্রকাশিত: ০৪:২০, ১১ মার্চ ২০১৬

সময় ভ্রমণে সমস্যার সমাধান!

টাইম ট্রাভেল বা সময় ভ্রমণ বিজ্ঞান ও দর্শনের একটি ধারণা। আমরা সবাই সর্বক্ষণ সময় ভ্রমণে নিয়োজিত। সময় হলো বিশ্বজগতের পরিবর্তনের একটা রেট বা হার। আমাদের পছন্দ হোক বা না হোক আমরা সর্বক্ষণ পরিবর্তিত হচ্ছি। আমাদের জন্ম হচ্ছে, বয়স বাড়ছে, মৃত্যু হচ্ছে। গ্রহগুলো সূর্যের চতুর্দিকে ঘুরপাক খেয়ে চলেছে। বস্তুর সৃষ্টি ও ধ্বংস হচ্ছে এবং এইভাবে পদার্থের রূপান্তর ঘটে চলেছে। সময়ের এই যাত্রা বা পথ পরিক্রমকে আমরা সেকেন্ড, মিনিট, ঘণ্টা ও বছরের হিসাবে মাপি। তবে তার মানে এই নয় যে, সময় সর্বদা একই হারে বয়ে চলে। নদী কতটা চওড়া বা সংকীর্ণ তার উপর নির্ভর করে জলরাশি যেমন জোরে বা ধীরে বহে সময়ও তেমনি ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন হারে বয়ে চলে। অন্য কথায় সময় হলো একটা আপেক্ষিক ব্যাপার। তবে সময়ের চলার হারের এই যে তারতম্য এটা হয় কেন? হয় স্থানের সঙ্গে সময়ের সম্পর্ক থাকার জন্য। এ হলো চতুর্থ মাত্রিক সম্পর্ক। সময় স্থানকে বাদ দিয়ে থাকতে পারে না। তেমনি স্থানও সময়কে বাদ দিয়ে থাকতে পারে না। দুটোই এক সত্ত্বা হিসেবে অস্তিত্বমান। মহাবিশ্বের যে কোন ঘটনায় স্থান ও কাল দুটোই যুক্ত থাকতে হয়। মহাবিশ্বে যদি উন্মুক্ত সময় অনুরূপ বক্ররেখা থাকে তাহলে সেই বক্ররেখার সঙ্গে ভ্রমণ করে ফিরে আসা বস্তুকণাগুলো বর্তমানে সমাধানে অসাধ্য বা বাগে আনতে না পারা গণনার কাজ সম্পাদনে সহায়ক হতে পারে। এ ধরনের বক্ররেখার মাধ্যমে যদিও অতীতের কোন কিছুর সঙ্গে মিথষ্ক্রিয়ার কোন সুযোগ থাকে না তথাপি গবেষকরা দেখিয়েছেন যে, সময় ভ্রমণকারী বস্তুকণা যতক্ষণ বর্তমানে রক্ষিত একটি বক্ররেখার সঙ্গে যুক্ত থাসে ততক্ষণ গণনাগত শক্তি বেড়ে যায়। এটাই বর্তমানে সমাধানের অযোগ্য সমস্যাগুলোর সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ চাবিকাঠি হয়ে দাঁড়াতে পারে। এনপিজে কোয়ান্টাম ইনফরমেশন ম্যাগাজিনের এক নিবন্ধে গবেষকরা এই মন্তব্য করেছেন। আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ভিত্তিতে পরিচালিত এক গবেষণায় গবেষকরা দেখিয়েছেন যে, সময়-ভ্রমণে না খোলা একটি বার্তা অতিমাত্রায় কার্যোপযোগী হতে পারে। গবেষণাগারে একজন পরীক্ষাকারী যদি সেই বার্তাটি সময় ভ্রমণে পাঠানোর আগে গবেষণাগারের অন্য কোন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করে তাহলেও একথা প্রযোজ্য। এই বিজড়নগত অবস্থা সময়-ভ্রমণকারী বার্তা ও ল্যাবরেটরি ব্যবস্থার মধ্যে একটা অনুবন্ধ রচনা করে। এ হলো এক অদ্ভুত প্রভাব বা প্রতিফল যা একমাত্র কোয়ান্টাম ফিজিক্সের জগতেই সম্ভব। প্রায় দশ বছর আগে গবেষক ডেভ বেকন দেখিয়েছেন সময়-ভ্রমণকারী কোয়ান্টাম কম্পিউটার বেশ কিছু সমস্যার দ্রুত সমাধান দিতে পারে। এই সমস্যাগুলো এনপি-কমপ্লিট নামে পরিচিত। গণিতবিজ্ঞানীর এই সমস্যাগুলোর সমাধান কঠিন বলে সেগুলোকে এই নামে একত্রীভূত করেছেন। উল্লেখ করা যেতে পারে যে ডেভ বেকন বর্তমানে গুগল-এ কর্মরত। সমস্যাটি ছিল এই যে নেকনের কোয়ান্টাম কম্পিউটার রুদ্ধ সময়ের অনরূপ বক্ররেখায় ভ্রমণ করছিল। এগুলো হলো স্থান-কাল কাঠামোর এমন পথ যা উল্টো নিজেদের উপর ফাঁস লাগিয়ে ফেলে। সাধারণ আপেক্ষিকতায় স্থান-কালে বিকৃতি ঘটানোর মাধ্যমে এমন পথের অস্তিত্ব রক্ষার সুযোগ থাকে যা ওয়ার্ম হোল বা পোকায় কাঁটা গর্ত নামে পরিচিত। পদার্থ বিজ্ঞানীদের যুক্তি হলো এ ধরনের সুযোগ সৃষ্টির ব্যাপারটা কোনকিছুর দ্বারা অবশ্যই রুদ্ধ হওয়া উচিত। কেননা তা না হলে ‘কার্যকারণের’ বিষয়টি বিপন্ন হয়ে পড়বে। এর একটা ক্লাসিক দৃষ্টান্ত দিয়ে বলা যায় যে, সেক্ষেত্রে যে কেউ অতীতে ফিরে গিয়ে তার দাদাকে হত্যা করে আসতে পারে এবং এইভাবে তার নিজের অস্তিত্বকেই নাকচ বা অকার্যকর করে তুলতে পারে। আর এতে করে যে কেবল পারিবারিক সম্বন্ধই হুমকির মুখে পড়বে তাই নয়। সময়ের কার্যকারণগত প্রবাহ ভেঙ্গে দিলে কোয়ান্টাম ফিজিক্সের ক্ষেত্রেও তার বিরূপ পরিণতি দেখা দেবে। গত দুই দশকে গবেষকরা দেখিয়েছেন যে কোয়ান্টাম ফিজিক্সের মৌলিক সূত্রগুলো রুদ্ধ সময়ের অনুরূপ বক্ররেখার উপস্থিতিতে ভেঙ্গে যায়। এ ক্ষেত্রে কোয়ান্টাম ধর্মের অন্তর্নিহিত অস্পষ্টতাÑঅনিশ্চয়তা সূত্র এবং নো-ক্লোনিং থিওরামকে বাতিল করে দেয়া যায়। উল্লেখ্য, নো-ক্লোনিং থিওরাম বলে যে কোয়ান্টাম অবস্থাগুলোর প্রতিরূপ সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। অবশ্য নতুন গবেষণায় দেখা গেছে যে, কোয়ান্টাম কম্পিউটার উন্মুক্ত সময়ের অনুরূপ বক্ররেখা ধরে গমন করলেও সমাধানের অসাধ্য সমস্যাগুলোর সমাধান দিতে পারে। এতে কার্যকারণগত কোন সমস্যা সৃষ্টি হয় না। হয় না এই কারণে যে, এগুলো বস্তুর নিজস্ব অতীতে কোনকিছুর সঙ্গে সরাসরি মিথষ্ক্রিয়ার কোন সুযোগ ঘটায় না। সময় ভ্রমণকারী বস্তুকণাগুলো (কিম্বা যেগুলোতে থাকা উপাত্তসমূহ) নিজেদের সঙ্গে কখনই মিথষ্ক্রিয়া করে না। তথাপি যেসব অদ্ভুত কোয়ান্টাম ধর্ম বা বৈশিষ্ট্যগুলো ‘অসম্ভব’ ধরনের গণনার কাজ সম্পন্ন করার সুযোগ দেয় সেগুলো অক্ষুণœই থেকে যায়। গবেষণা কর্মের প্রধান মাইল গু বলেছেন, ‘এর মাধ্যমে আমরা কোন ব্যক্তির অতীতে ফিরে গিয়ে দাদাকে হত্যা করে আসার মতো চিরায়ত ধাচের আপাতবিরোধী সত্যকে পরিহার করছি এবং তারপরও এসব অদ্ভুত ফল লাভ করছি।’ গবেষক দলের আরেক সদস্য জেইন টম্পসন বলেন, ‘এই ধারণাটা যখন আমরা উপস্থাপন করেছিলাম লোকে বলেছিল, এতে কোনই কাজ হবে না। কিন্তু কাজ হয়েছে। টাইমলুপে পাঠানো কোয়ান্টাম বস্তুকণা অতীতের কোনকিছুর সঙ্গে কখনই কোন মিথষ্ক্রিয়ায় না আসা সত্ত্বেও গণনার ক্ষেত্রে অমিত ক্ষমতা অর্জন করতে পারে।’ টম্পসন বলেন, ‘এমনটা হতে পারার কারণ হলো এই যে, এর সঙ্গে যুক্ত অনুবন্ধগুলোতে কিছু তথ্য সংরক্ষিত হয়ে পড়ে এবং সেটাকেই আমরা কাজে লাগাচ্ছি।‘ তবে একটা সতর্কবার্তাও আছে। রুদ্ধ টাইম লাইন কার্ভগুলো ভৌত মহাবিশ্বে যতটা উপলব্ধিযোগ্য বা আয়ত্তসাধ্য উন্মুক্ত টাইমলাইন কার্ভগুলো তার চেয়েও বেশি আয়ত্তযোগ্য হতে পারে এমনটা যে সমস্ত পদার্থ বিজ্ঞানীই মনে করেন তা নয়। রুদ্ধ টাইমলাইন কার্ভের বিরুদ্ধে একটা যুক্তি হলো এই যে, ভবিষ্যত থেকে কেউ কখনো আমাদের কাছে আসেননি। সেই যুক্তিটা অন্ততপক্ষে উন্মুক্ত টাইমলাইন কার্ভের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কারণ ভবিষ্যতের যে কোন বার্তাই আটকা পড়ে বা রুদ্ধ হয়ে থাকবে। সূত্র : সায়েন্স ডেইলি
×