ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

গাইডের ফাঁদে শিক্ষার্থী

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ১০ মার্চ ২০১৬

গাইডের ফাঁদে শিক্ষার্থী

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহীতে শিক্ষক সমিতির কেনা প্রশ্নেই সমিতিভুক্ত বিদ্যালয়গুলোতে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। ফলে সমিতির ভাড়াটে লেখকের বই চড়া দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। শুধু তা-ই নয়, শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলেও সমিতির সুপারিশ করা গাইড বই কিনতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। লেখক ও প্রকাশকদের এ ধরনের সমর্থন জোগানোর বিনিময়ে সমিতির চুক্তি হয় ৬৫ লাখ টাকায়। রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী বলেন, প্রতিটি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতির ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণের ওপর ভিত্তি করে তাদের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি করার কথা। এসব প্রশ্নেই শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেয়ার নির্দেশনা রয়েছে। অন্য কোন প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তিনি বলেন, সরকার থেকে শিক্ষার্থীদের যে বই দেয়া হয়েছে, সেই বই-ই শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট। তবে সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতির জন্য হয়ত হুবহু বই থেকে প্রশ্ন থাকে না। এ বিষয়টি শিক্ষার্থীদের বোঝানোর দায়িত্ব শিক্ষকদের। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির রাজশাহী জেলা শাখা সূত্রে জানা গেছে, তাদের অধীনে রাজশাহী জেলায় ৪৩৫টি বিদ্যালয় রয়েছে। এই বিদ্যালয়গুলোতে তারা নির্ধারিত লেখকের বাংলা ও ইংরেজী ব্যাকরণ পড়ায়। সমিতিভুক্ত বিদ্যালয়গুলোতে এই লেখকদের বই পড়ানোর বিনিময়ে এবার তারা লেখকদের কাছ থেকে ৬৫ লাখ টাকা পাচ্ছে। প্রতিবছরই লেখক বদলানো হয়। নতুন লেখকের সঙ্গে চুক্তি করে পরের বছর বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে নতুন বই বিক্রি করা হয়। তবে ব্যাকরণের বিষয়বস্তু পরিবর্তন হয় না। শুধু তা-ই নয়, গাইড প্রকাশকদের সঙ্গেও তাদের চুক্তি থাকে। নির্ধারিত প্রকাশকের গাইডই সমিতিভুক্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিজ নিজ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কিনতে পরামর্শ দেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষক বলেন, পরীক্ষার সময় সৃজনশীল পদ্ধতির প্রশ্ন এসব গাইড বই থেকেই করা হয়। তাই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এসব গাইড বই কিনতে উৎসাহী থাকেন। বিদ্যালয়গুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের বিনামূল্যে সরবরাহ করা বইয়ের বাইরেও ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণীর একজন শিক্ষার্থীকে ১ হাজার ২৪৪ টাকা থেকে ৩ হাজার ৫৪০ টাকার বাইরের বই কিনতে হচ্ছে। জেলার একটি বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বইয়ের হিসাব নিয়ে দেখা গেছে, নবম শ্রেণীর একজন শিক্ষার্থীকে ৩ হাজার ৫৪০ টাকার বাইরের বই কিনতে হয়েছে। এর মধ্যে গাইড ২ হাজার ৪৫০ টাকা, ইংরেজী ব্যাকরণ ৫৭২ টাকা ও বাংলা ব্যাকরণ ৫১৮ টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে। এছাড়া অষ্টম শ্রেণীর একজন শিক্ষার্থীকে ১ হাজার ৬৯০ টাকার বই কিনতে হয়েছে। তার মধ্যে গাইড ৭৬০ টাকা, ইংরেজী ব্যাকরণ ৫০০ ও বাংলা ব্যাকরণ ৪৩০ টাকা। সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীকে ১ হাজার ৩৯০ টাকার বই কিনতে হয়েছে। এর মধ্যে গাইড ৫৮০ টাকা, ইংরেজী ব্যাকরণ ৪২০ টাকা ও বাংলা ব্যাকরণ ৩৯০ টাকা। ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীকে মোট ১ হাজার ২৪৮ টাকার বই কিনতে হয়েছে। এর মধ্যে গাইড ৫৬০ টাকা, ইংরেজী ব্যাকরণ ৩৭৪ টাকা ও বাংলা ব্যাকরণ ৩১৪ টাকা। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি মজিবুর রহমান বলেন, বেআইনী হলেও যেসব বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিজেরা প্রশ্ন করতে পারেন না, তাঁরা ওই শিক্ষকদের প্রশ্ন তৈরি করে দিয়ে সহযোগিতা করেন। তিনি স্বীকার করেন, তাঁদের পক্ষ থেকে বাংলা ও ইংরেজী ব্যাকরণ বইয়ের লেখকদের সঙ্গে চুক্তি করা হয়ে থাকে। এবার তাদের সঙ্গে ৬৫ লাখ টাকার চুক্তি হয়েছে। এই টাকা দিয়ে সমিতি কল্যাণ ট্রাস্ট চালানো হয় বলে দাবি করেন তিনি। তবে সমিতির সভাপতি মজিবুর রহমান দাবি করেন, বাংলা ও ইংরেজী ব্যাকরণ বই লেখকদের সঙ্গে চুক্তি হলেও গাইড প্রকাশকদের সঙ্গে সমিতির কোন চুক্তি হয়নি। শিক্ষকরা নিজেরা চুক্তি করে নিজেদের মতো শিক্ষার্থীদের গাইড বই কিনতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন বলে জানান তিনি।
×