ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গৃহকর্মীকে ছাদ থেকে ফেলে হত্যার অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৮ মার্চ ২০১৬

গৃহকর্মীকে ছাদ থেকে ফেলে হত্যার অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এক গৃহকর্মীকে ছাদ থেকে ফেলে হত্যার অভিযোগে লাশ নিয়ে মিরপুর এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছে স্থানীয়রা। এতে মিরপুর, কাফরুল, পল্লবীসহ আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। মৃত্যুর ঘটনায় সন্দেহভাজন চার জনকে আটক করেছে পুলিশ। রবিবার রাজধানীর কাফরুল থানাধীন ন্যাম গার্ডেন অফিসার্স কোয়ার্টার্স এলাকার তিন নম্বর ভবনের নিচে জনিয়া ওরফে জনি আক্তার (১৫) নামে এক গৃহকর্মীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। রবিবার রাতে কাফরুল থানায় এ সংক্রান্ত একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, জনিয়াকে পাশবিক নির্যাতনের পর ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হয়েছে। সোমবার সকাল থেকেই এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনা ছিল। সকাল দশটার দিকে মেয়েটির স্বজন ও এলাকাবাসী প্রথমে কাফরুল থানাধীন পূর্ব শেওড়াপাড়ায় রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। বিক্ষোভের কারণে বেলা এগারোটা পর্যন্ত মিরপুর-১০ থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। দুপুর একটার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গ থেকে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। লাশ ন্যাম কোয়ার্টারের সামনে পৌঁছলে বিক্ষুব্ধ জনতা সেখানে ও কাফরুল থানার সামনে আরেক দফা বিক্ষোভ করে। এ সময় পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা নিহতদের স্বজনদের ঘটনার সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে তাদের আইনের আওতায় আনার ঘোষণা দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, বিক্ষোভ করানোর পেছনে স্বাধীনতা বিরোধীদের মদদ রয়েছে। মদদদাতারা জনির মৃত্যুর সঙ্গে নানাভাবে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের পরিচালক যুগ্ম সচিব আহসান হাবিবের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে প্রমাণ ও প্রচার চালানোর চেষ্টা করেছে। তাদের অর্থায়নেই সোমবার রাস্তা অবরোধসহ ন্যাম কোয়ার্টার ও থানার সামনে বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা কাফরুল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, ঘটনা তদন্তে এবং নিহতের পরিবারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যেই ন্যাম কোয়ার্টারের এক কেয়ারটেকার ও তিন নিরাপত্তাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। তাদের সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে ঢাকার সিএমএম আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। আটককৃতরা হচ্ছে, কেয়ারটেকার সিদ্দিকুর রহমান (৫০), লিফটম্যান ইমদাদুল হক ফিরোজ (৩০), রাইয়াসাদুল হক টুটুল (২৮) ও সোহেল রানা (২৪)। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিহত জনি ন্যাম কোয়ার্টারের তিন নম্বর ভবনের চতুর্থ তলায় ৪০৩/বি নম্বর ফ্ল্যাটে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের পরিচালক যুগ্ম সচিব আহসান হাবিবের বাসায় কাজ করত। জনি তার মা ফুল বানুর পরিবর্তে গত ৫ দিন ধরে বাসাটিতে কাজ করছিল। তিন নম্বর ভবনের ছাদ থেকেই জনিকে ফেলে দিয়ে হত্যা করার অভিযোগ ওঠেছে। ভবনটির ছাদে জনির একটি সেন্ডেলও পাওয়া গেছে। ডিএমপির পল্লবী জোনের সহকারী কমিশনার জাকির হোসেন বলছেন, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। যদিও নিহতের শরীরে ছাদ থেকে পড়ে যাওয়া ব্যতিত অন্যকোন আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি। নিহতের পরিবারের অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে, অবশ্যই বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে। এ ব্যাপারে ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলছেন, ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। পরিবারের অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে আটককৃত চারজন ছাড়াও অনেককেই ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এদিকে জনির মৃত্যুতে উদ্বেগ জানিয়েছে গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্ক বিলস। প্রতিষ্ঠানটির সমন্বয়কারী সৈয়দ সুলতান মাহমুদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার আহ্বান জানানো হয়। গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি ২০১৫’ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার ঘোষিত ওই নীতিমালা বাস্তবায়িত না হওয়ায় গৃহশ্রমিক হত্যা ও তাদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে।
×