ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

সেই বিড়ালটি এখন মন্ত্রীর বাড়িতে

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৫ মার্চ ২০১৬

সেই বিড়ালটি এখন মন্ত্রীর বাড়িতে

বাংলানিউজ ॥ অলস দুপুরে ফ্যানের নিচে পাতা চেয়ারে আয়েশি ঘুম দিয়েছিল বেড়ালটি। এদিকে দুপুরের খাবারের সময় হয়ে গেছে। ডাক দিতেই চোখ মেলে এক লাফে খাবারের সামনে। ভাতের সঙ্গে চিকেন ফ্রাই! বেশ আয়েশ করেই খেয়ে নিল সবটা চেটেপুটে। আর খাবার শেষে আবার ডাকতেই চেয়ারে উঠে পড়ল। এবার আরও আয়েশি ঘুম! সচিবালয়ে গাছের ডালে তিন দিন অনাহারে থাকার পর বিড়ালটি এখন শুধু নিয়মিত খাবার আর আরাম-আয়েশই পাচ্ছে না। একটি নামও পেয়েছে! ‘ফেলু’! রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী গাড়িতে পূর্ণ প্রটোকলের মধ্য থেকেই বৃহস্পতিবার কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর এ্যাপার্টমেন্টে যায় ফেলু। সেখানে আদরযতেœর কোন কমতি নেই তার। একদিন আগেও যে বিড়ালটির বাঁচা-মরার প্রশ্ন ছিল, সেটি এখন পূর্ণ নিরাপত্তায়, নিশ্চয়তায়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে বড় মগবাজারে রমনা এ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে কৃষিমন্ত্রীর বাসায় ঠাঁই হয় সচিবালয়ের গাছ থেকে উদ্ধার করা বিড়ালটির। শুক্রবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে এ্যাপার্টমেন্টের নিচতলায় কৃষিমন্ত্রীর অফিস কক্ষে গিয়ে দেখা যায় বিড়ালটির আয়েশি ঢং। গা ছেড়ে চেয়ারে ঘুমাচ্ছিল সে। আর ‘ফেলু’ নামে সবার ডাকে সাড়াও দিচ্ছিল বেশ। গত মঙ্গলবার একটি কুকুরের কামড় আর ধাওয়া খেয়ে গাছে উঠেছিল বিড়ালটি। সেই গাছে কাকের বাসা, শুরু হয় কাকগুলোর উৎপাত। যখন তখন ঠোকর মারছিল বিড়ালটিকে। পরে ডাল বেয়ে আরেকটি গাছের মগডালে আশ্রয় নেয়। সেখানেও নিস্তার ছিল না কাকের হানা থেকে। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর গাড়িচালক আজগর আলী এই দশা দেখে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন, পরে ফায়ার সার্ভিসের হেড অফিস থেকে স্কাই লিফট এসে প্রায় আধাঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে বিড়ালটিকে নামিয়ে আনে। উদ্ধারের পর কিছু খাবার দিয়ে বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে বিড়ালটিকে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল সচিবালয়ের মধ্যেই। কৃষিমন্ত্রীর পিএস মোহাম্মদ শাহজালাল জানান, গতকাল (বৃহস্পতিবার) বিকেল পাঁচটার দিকে মন্ত্রী দফতর থেকে নেমে আসার পরও বিড়ালটি ড্রাইভার আজগরের পিছু ছাড়ছিল না। জানতে পেরে মন্ত্রী বিড়ালটিকে তার গাড়িতে তোলার নির্দেশ দেন। এর পর মন্ত্রীর বাসার সদস্য হলো বিড়ালটি। বিড়ালটি এখন কেমন আছে- জানতে চাইলে মন্ত্রীর পিএস মোহাম্মদ শাহজালাল বলেন, বাসায় নেয়ার পরই মন্ত্রী মহোদয় বিড়ালটির নাম রাখেন ‘ফেলু’। সবাই ওকে ফেলে গিয়েছিল, কিন্তু ও তো ফেলনা নয়, মন্ত্রী নিজেই তাই নাম দিয়েছেন ‘ফেলু’, বলেন শাহজালাল। জানালেন, তিন দিন অভুক্ত থাকা বিড়ালটি বাসায় নেয়ার পর খুব ক্লান্ত ছিল, পরে খাবার ও ওষুধ দেয়া হয় বলে জানান ওই বাসার কর্মী আল আমিন। বাসার একজন চিকিৎসক বিড়ালটির চিকিৎসাও করছেন। শাহজালাল জানান, মন্ত্রী বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে বাসা থেকে বের হওয়ার সময়ও নিচে বিড়ালটিকে দেখে যান, রাত ১০টার দিকে বাসায় ফিরে আরও একবার দেখে উপরে ওঠেন। আর শুক্রবার সকালে মন্ত্রীর ফ্ল্যাটেও একবার নেয়া হয় বিড়ালটিকে। খাবার খেয়ে আদরযতেœ সুস্থ হয়ে উঠছে বিড়ালটি। সকালে নিচতলায় মন্ত্রীর চেয়ার ও টেবিলের ওপর উঠে বেশ নাচানাচিও করছিল। বাসার সবার সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছে ফেলু, প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা বাসায় অবস্থান করে দেখা গেল কারও না কারও পিছু নিচ্ছে বিড়ালটি। কৃষিমন্ত্রীর বাসায় বিভিন্ন সময়ে ৮/১০টি বিড়াল থেকেছে। টুলটুল, লালা, ডাকুসহ বিভিন্ন নামের বিড়াল মন্ত্রীর বিশেষ আদরযতœ পায়। সুন্দরী, বুটু, পেতিœসহ আরও কয়েকটি বিড়াল ছিল; যেগুলো বিভিন্ন সময়ে মারা গেছে বলে জানান মন্ত্রীর বাসার কর্মীরা। সম্প্রতি একটি বিড়াল মারা যাওয়ায় কষ্ট ছিল মন্ত্রীর। এখন ফেলুকে পেয়ে সে কষ্ট ভুলছেন। অন্য বিড়ালগুলো প্রথমে ফেলুর প্রতি ঈর্ষা দেখালেও এখন স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে বলে জানান বাসার কর্মীরা।
×