ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

তামিমের জ্বলে ওঠার চ্যালেঞ্জ!

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ২ মার্চ ২০১৬

তামিমের জ্বলে ওঠার চ্যালেঞ্জ!

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ফরমেটটা টি২০, এ কারণেই প্রত্যাশা খুব বড় কিছু পাওয়ার ছিল না। অন্তত বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা ভাল করেই জানেন টাইগাররা ক্ষুদ্রতম এ ফরমেটে তেমন ভাল অবস্থানে পৌঁছতে পারেনি। তবে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে দেয়ার পর স্বপ্নটা বড় হয়েছে। এবারও ফাইনাল খেলার স্বপ্ন স্বাগতিক বাংলাদেশের। সেটা পাকিস্তানকে হারিয়ে দিতে পারলেই হবে। এমন এক গুরুত্বপূর্ণ লড়াইয়ে বাংলাদেশ দল আরও উজ্জীবিত ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠার মতো রসদ পেয়ে গেছে। দলে ফিরেছেন অপরিহার্য ওপেনার তামিম ইকবাল। আগের তিন ম্যাচে তামিমের অভাবটা ভালভাবেই বোঝা গেছে ওপেনারদের বড় জুটি গড়তে না পারার ব্যর্থতার মধ্যে দিয়ে। কিন্তু পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের ইনজুরি সুযোগ করে দিয়েছে তামিমকে। এশিয়া কাপে বাংলাদেশের পক্ষে ব্যাট হাতে সবচেয়ে সফল এ ব্যাটসম্যান আজই পাকিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামবেন। আবারও জ্বলে উঠতে পারবেন তিনি ২০১২ এশিয়া কাপের মতো? আনতে পারবেন দলের জন্য ঐতিহাসিক সাফল্য? টি২০ ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসটি খেলেছেন তামিম। তিনি ২০১২ সালের ১০ ডিসেম্বর মিরপুরে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অপরাজিত ৮৮ রান করেছিলেন। অবশ্য এরপরও ক্যারিবীয়দের কাছে সেই ম্যাচে হারতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। টি২০ ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক রান করার দিক থেকে সাকিব আল হাসানের চেয়ে সামান্যই পিছিয়ে আছেন তামিম। সাকিবের রান ৪৫ ম্যাচে ২৩.৬২ গড়ে ৯৪৫! তামিম পিছিয়ে ১০৬ রানে। ৪৪ ম্যাচ খেলে এ মারমুখী ওপেনার এখন পর্যন্ত করেছেন ২০.৪৬ গড়ে ৮৩৯ রান। এবার তামিমের জন্য সুযোগ নিজেকে আরও উঁচুতে নিয়ে যাওয়ার। যুদ্ধটা তার সতীর্থ ও বন্ধু সাকিবের সঙ্গেই। ইতোমধ্যেই ওয়ানডে ও টেস্ট ক্রিকেটে রানের দিক থেকে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা এ ওপেনার। তামিম ইনিংসের গোড়াপত্তনের দায়িত্বে থাকলেই দল বাড়তি একটি অনুপ্রেরণা ও আত্মবিশ্বাস পায়। কারণ তামিমের দিনে যেকোন প্রতিপক্ষের কোন বোলারেরই কিছু করার থাকে না। আর সে কারণে ঠিক এ সময়েই তামিমকে বেশি প্রয়োজন বাংলাদেশ দলের। তরুণ সাব্বির রহমান রুম্মান একাই খেলে যাচ্ছেন এবার এশিয়া কাপে। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ কিছুটা ঝলক দেখালেও বাকি ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ। আর উদ্বোধনীতে শুধু আরব আমিরাতের বিপক্ষে ৪৬ রানের জুটি আসলেও বড় দুই দল ভারতের বিপক্ষে ৯ এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ০ এসেছে। উদ্বোধনী জুটির এ ব্যর্থতার মধ্যেও বোলারদের সফলতা এবং সাব্বিরের ধারাবাহিকতা বাংলাদেশ দলকে দুটি ম্যাচে জয় এনে দিয়েছে। এবার ফাইনাল খেলার স্বপ্নটাও তাই বেড়েছে। ২০১২ সালের এশিয়া কাপে নিজেদের সেরা অর্জন ছিল বাংলাদেশের। সেবার ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে ২ রানে হেরে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। আর সেই এশিয়া কাপে টাইগারদের এমন ঐতিহাসিক সাফল্যের পেছনে ছিল তামিমের দুর্দান্ত ব্যাটিং। ফিটনেস সমস্যার অজুহাতে তাকে দলের বাইরে রাখা হয়েছিল প্রথমে। কিন্তু অনেক নাটকীয় ঘটনার মঞ্চায়নের মধ্যে দিয়ে দলে ফিরে তিনি টানা চার হাফসেঞ্চুরি করেন। এমন ঘটনা বাংলাদেশী কোন ব্যাটসম্যানের জন্য সেটাই প্রথম। এশিয়া কাপের ইতিহাসে বাংলাদেশের পক্ষে সফলতম ব্যাটসম্যান তামিম। তিনি ১২ ম্যাচ খেলে ৪৩.০৮ গড়ে করেছেন ৫১৭ রান। আছে ৬ ফিফটি। টুর্নামেন্টে নিজেদের সেরা ব্যাটসম্যানকে ছাড়াই খেলতে হবে, এরপরও মাহমুদুল্লাহ এশিয়া কাপের আগে বলেছিলেন, ‘আমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই খেলব।’ সে সময় তার কথাকে হাস্যকর মনে হয়েছিল। কারণ জানুয়ারিতে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ৪ ম্যাচের টি২০ সিরিজ ২-২ সমতায় শেষ করেছিল বাংলাদেশ। এশিয়া কাপে তামিমের মতো অপরিহার্য ব্যাটসম্যানকে ছাড়া চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আশাটা অমূলকই মনে হয়েছে। কিন্তু এখন দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা এবং দলের ক্রিকেটাররা মনেপ্রাণেই বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন সেটা সম্ভব। আর সেই সম্ভব কাজটাকে বাস্তব করতে হলে পাকদের বিপক্ষে জয় পাওয়াটা জরুরী। আজ সেই ম্যাচে তামিমকে নিয়েই নামবে বাংলাদেশ। রবিবার বাবা হওয়ার পর সন্তানকে ব্যাঙ্কক রেখেই চলে আসেন তিনি। সোমবারই নেমে যান অনুশীলনে। এশিয়া কাপের দলে ছিলেন না সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর পাশে থাকার জন্য ছুটি পাওয়াতে। কিন্তু আবারও নাটকীয়তার মধ্যে দিয়েই ফিরলেন। ২০১২ সালের স্মৃতিটাকে ফিরিয়ে আনতে পারবেন তিনি? সেটা ছিল ওয়ানডে ফরমেট। এবার টি২০।
×