ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তান ভারত মহারণ আজ

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

পাকিস্তান ভারত মহারণ আজ

মিথুন আশরাফ ॥ দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক অবস্থা একেবারেই ভাল নয়। আর এ বিষয়টি সঞ্চারিত হয়ে পড়ে দেশের মানুষের মধ্যেও। সম্পর্কেও তাই আছে তিক্ততা। যে করেই হোক সবস্থানে এগিয়ে থাকা চাই-ই-চাই। পাকিস্তানকে ভারতের, ভারতকে পাকিস্তানের হারাতেই হবে। চাই শুধুই জয়। হার হলেই গোষ্ঠী উদ্ধার! ক্রিকেটপ্রেমীরাও এর বাইরে থাকতে পারেন না। আজ যখন মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে রাত সাড়ে সাতটায় ভারত-পাকিস্তান ম্যাচটি শুরু হবে, তখনও দুই দেশের মানুষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করবে। জয়ই শুধু তাদের চাওয়া। কিন্তু জিতবে কে, ভারত না পাকিস্তান? তার অপেক্ষাতেই এখন থাকতে হচ্ছে। ক্রিকেট বিশ্বে এ দুই দলের মহারণকেই যে এখন ধরা হয় সবচেয়ে আকর্ষণীয়, সবচেয়ে প্রতীক্ষমাণ, সবচেয়ে আলোড়িত, সবচেয়ে উত্তেজনাকর লড়াই! কিন্তু ‘জিতবই।’ এমন কথা মুখ দিয়ে ভারত কিংবা পাকিস্তান; কোন দলের ক্রিকেটারই বলতে পারছেন না। আজ এশিয়া কাপে মহারণের আগে পাকিস্তান অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদি ও ভারত ওপেনার রোহিত শর্মাও বলতে পারেননি। মুখ দিয়ে ‘জয়’ শব্দটি আগে ও পরে কখনই উচ্চারণ করতে পারেননি ভারতের বিরাট কোহলি ও পাকিস্তানের শোয়েব মালিকও। শুক্রবার ফতুল্লায় অনুশীলন করার আগে ও পরেও যেমন সবার মুখে কুলুপ এই ‘জয়’ শব্দটিতে। তবে একটি কথা সবাই বলছেন, সেটি কী? ভাল খেলার চেষ্টার কোন কমতি থাকবে না। সেটি দলীয় হোক কিংবা ব্যক্তিগত। সব বিভাগেই ভাল করতে চায় দুই দলের ক্রিকেটাররা। আর যে দল স্নায়ুচাপ জিতে ভাল করতে পারবে, জয় তো তাদেরই হবে। অবশ্য এখন পর্যন্ত এশিয়া কাপের যে হিসেব তাতে কোন দলই এগিয়ে নেই। সমান সংখ্যক ম্যাচে দুই দলের ক্রিকেটাররাই স্নায়ুচাপ জিতে, মর্যাদার লড়াইয়ে জয় তুলে নিয়েছে। দুই দলের মধ্যকার ১০ ম্যাচ হয়েছে। এরমধ্যে ভারত জিতেছে ৫ ম্যাচ। পাকিস্তানও সমান ম্যাচেই জিতেছে। মোট খেলা হয়েছে ১২ বার। এক ম্যাচের রেজাল্ট হয়নি। আরেক ম্যাচ হয়নি। এর আগে ১২ বার যে এশিয়া কাপ হয়েছে, তা ওয়ানডে ফরমেটে হয়েছে। কিন্তু এবার হচ্ছে টি২০ ফরমেটে। যে ফরমেটে ভারতের সামনে নিরীহ দল পাকিস্তান, তা বলাই যায়। ৬ বারের লড়াইয়ে যে ১ ম্যাচ জিততে পেরেছে পাকিস্তান! সিরিজে হোক কিংবা টুর্নামেন্টে, পাকিস্তান যেন কোনভাবেই টি২০ র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর দল ভারতের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারে না। এবারও যদি তাই হয়, তাহলে বোঝাই যাবে, টি২০তে পাকিস্তানের ‘যম’ হয়ে গেছে ভারত! মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দুই দল পরস্পরের বিপক্ষে একটি টি২০ ম্যাচে খেলেছে। ২০১৪ সালের টি২০ বিশ্বকাপে। সেই ম্যাচটিতে পাত্তাই পায়নি পাকিস্তান। ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরেছে। ভারত তাই আজও নিশ্চিত ফেবারিট দলই। যদিও শোয়েব মালিক বলেছেন, ‘দুই দলের লড়াইয়ে ফেবারিট আমরাই (পাকিস্তান)।’ কিন্তু ইতিহাস সেই সাক্ষী দেয় না। মিরপুরেও ওয়ানডে (চার ম্যাচ), টি২০ (এক ম্যাচ) মিলিয়ে ৫ ম্যাচের মধ্যে ভারত তিনটিতে জিতেছে। পাকিস্তান জিতেছে এক ম্যাচ। ২০০৮ সালে তিনজাতির ওয়ানডে সিরিজে ১ ম্যাচ জিতেছে পাকিস্তান। আর ২০১৪ সালে এশিয়া কাপে এক ম্যাচ জিতেছে। বাকি ম্যাচগুলো জিতে নিয়েছে ভারত। সর্বশেষ বাংলাদেশের মাটিতে যে দুই দলের মধ্যকার ম্যাচ হয়েছে, টি২০ বিশ্বকাপের সেই ম্যাচে হেরেছে পাকিস্তানই। বাংলাদেশের মাটিতে তো ভারতের জয়জয়কারই। পাকিস্তানের বিপক্ষে এক টি২০ ও ১০ ম্যাচ খেলে মোট ১১ ম্যাচে টি২০সহ ৭ ম্যাচেই জিতেছে ভারত। এবারও কী তাই হবে? ম্যাচ শেষেই তা বোঝা যাবে। ভারত দলটি এশিয়া কাপ খেলতে আসার আগে শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়াকে সিরিজে হারিয়ে এসেছে। সেই তুলনায় পাকিস্তান হেরে এসেছে। প্রতিপক্ষ দলগুলো ছিল নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ড। তবে বাংলাদেশে আসার আগে পাকিস্তান ক্রিকেটাররা পিএসএল খেলে নিজেদের দুর্বলতা দূর করে এসেছে। সেটি কাজেও দিতে পারে এবার। পাকিস্তান অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদি যেন সেটিকেই সামনে তুলে ধরলেন, ‘আমরা পিএসএল খেলেছি। তা অনেক উপকারে আসবে।’ সেই উপকার মিলবে বিশেষ করে পেসারদের ক্ষেত্রেই বলে জানিয়েছেন আফ্রিদি। বলেছেন, ‘ভারত ব্যাটসম্যানরা স্পিনে অনেক ভাল খেলে। আমাদের স্পিনার আছে। আমি ও মোহাম্মদ নাওয়াজ আছি। তবে আমাদের মূল শক্তি পেস আক্রমণ। যেখানে মোহাম্মদ আমির, ওয়াহাব রিয়াজ ও মোহাম্মদ ইরফান আছে। পিএসএলে দারুণ খেলেছে তারা। আশা করি, ভারত ব্যাটিং লাইন আপকেও যোগাবে।’ রোহিত শর্মা অবশ্য পাকিস্তান পেস আক্রমণকে শক্তিশালীই বলেছেন। তবে সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ীই খেলব। নিজেদের শক্তির দিকগুলোই কাজে লাগানোর চেষ্টা করব।’ এখন দেখার বিষয়, বরাবরের মতো টি২০তে ভারতই এগিয়ে থাকে না কি এবার পাকিস্তান চমক দেখিয়ে জয় তুলে নেয়।
×