ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

ইউপি নির্বাচনের নিরাপত্তা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে ইসি

প্রকাশিত: ০৫:২২, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ইউপি নির্বাচনের নিরাপত্তা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে ইসি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আসন্ন ইউপি নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিরাপত্তা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে ইসি। ইসির পরিকল্পনা অনুযায়ী ইউপি ভোট নির্বিঘœ করতে প্রত্যেক দফায় নির্বাচনের জন্য প্রচারের দিন থেকে ভোটের আগে পরের দিন নিরাপত্তার বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে নির্বাচনী প্রচারের দিন থেকে নির্বাচনী আচরণবিধি রক্ষায় একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া ভোটের দিনসহ আগের পরে ভোট কেন্দ্র ও ভোটারদের নিরাপত্তা রক্ষায় মোবাইল ফোর্স ও স্টাইকিং ফোর্স হিসেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। র‌্যাব, পুলিশ এপিবিএন, আনসার ও বিজিবির সমন্বয়ে এসব বাহিনী মোতায়েন করা হবে। ইসি জানিয়েছে প্রথম দফায় নির্বাচনের জন্য মাঠ পর্যায়ের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে ৩ মার্চ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ইসির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বৈঠকের বিষয় অবহিত করে চিঠি দেয়া হয়েছে। ওইদিন সকাল ১১টায় এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ। ইতোমধ্যে সারাদেশে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ছয় দফায় সম্পন্ন করতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সে অনুযায়ী দুই দফায় নির্বাচনে বিস্তারিত সময়সূচীও ঘোষণা করা হয়েছে। প্রথম দফায় নির্বাচনের জন্য প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাছাই সম্পন্ন হয়েছে। আগমী ৩ মার্চ থেকে এ দফায় নির্বাচনী প্রচার শুরু হবে। ইসি জানিয়েছে প্রথম থেকেই নির্বাচনে যাতে কোন বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না হয় সে জন্য ইসির পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ইসির আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে শুধু ভোটের দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ১ লাখ ২০ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। কেন্দ্র নিরাপত্তার পাশাপাশি মোবাইল ও স্টাইকিং ফোর্স হিসেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকবে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে প্রথম ধাপে নির্বাচনের জন্য প্রায় ৭ হাজার ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এক্ষেত্রে নির্বাচনের দিন সাধারণ ভোট কেন্দ্রে ১৭ জন করে পুলিশ ও আনসার এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৯ জন করে ফোর্স মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে প্রতি ইউনিয়নে ১টি করে মোবাইল ফোর্স, প্রতি তিন ইউপির জন্য স্ট্রাইকিং ফোর্স রাখার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। অন্যদিকে প্রতি উপজেলায় ২টি করে র‌্যাবের মোবাইল টিম ও ১টি স্ট্রাইকিং টিম এবং প্রতি উপজেলায় ২ প্লাটুন বিজিবি মোবাইল ও ১ প্লাটুন স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে রাখার কথা ভাবা হচ্ছে। আবার উপকূলীয় অঞ্চলে প্রতি উপজেলার জন্য কোস্টগার্ডের ২ প্লাটুন মোবাইল ফোর্স ও এক প্লাটুন স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকছে। যারা ভোটের দিনসহ দু’দিন আগে থেকে পরে একদিন মোট চারদিনের জন্য নিয়োজিত থাকবে। তবে জেলা প্রশাসক প্রয়োজন মনে করলে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করতে পারবেন। কার্যপত্রে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পরদিন থেকে নির্বাচন সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত প্রতি উপজেলায় ১ জন করে এবং ভোটগ্রহণের আগে পরে চারদিনের জন্য ৩ জন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত করা হবে। এ ছাড়া একই সময়ে উপজেলা প্রতি ১ জন করে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটও নিয়োজিত থাকবে। জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় সেল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কার্যালয়ে মনিটরিং সেল গঠনের পরিকল্পনাও রয়েছে ইসির। ইউপি নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পরিকল্পনা সেনাবাহিনী মোতায়েনের কোন কথা বলা হয়নি। এর আগে ইসি শাহনেওয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, ইউপি নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের কোন পরিকল্পনা ইসির নেই। পৌরসভা নির্বাচনেও সেনাবাহিনী নিয়োগ করা হয়নি। সেনাবাহিনী ছাড়াই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। সেনা মোতায়েন একটিা চূড়ান্ত ব্যবস্থা। ইউপি নির্বাচন যেহেতু গ্রাম পর্যায়ে নির্বাচন, সেহেতু সবাই আত্মীয়স্বজনের মধ্যেই। কাজেই বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনা ঘটবে সে আশঙ্কাও করা হচ্ছে না। বিএনপির দাবি অনুযায়ী নির্বাচনে কোন সম্প্রীতি নষ্ট হবে সে চিন্তাও ইসি করছে না। কাজেই এ নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে মোতায়েনের কোন কারণ দেখছে না ইসি। যদি প্রথম পর্যায়ে এ নির্বাচনে বিজিবি না রাখার সিদ্ধান্তও নেয়া হয়। এতে উল্লেখ করা হয় ইউপি নির্বাচনের নিরাপত্তা পরিকল্পনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিজিবিকে রাখা হচ্ছে না। বিজিবি না রাখার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে এর আগে সাংবাদিকদের তখন নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজ বলেন, বিজিবি ছাড়াই র‌্যাব, পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছে নিরাপত্তা পরিকল্পনা। যদি পরে তিনি জানা বিজিবি ছাড়ার ইউপি নির্বাচন সম্পন্ন করা যাবে না। যেহেত ইউপি নির্বাচন একটি বড় নির্বাচন। তাই সুষ্ঠুভাবে এ নির্বাচন সম্পন্ন করতে বিজিবিও মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ইউপি নির্বাচনের সময় র‌্যাব, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, বিজিবি, কোস্টগার্ড এবং সীমিত পরিসরে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর মোবাইল এবং স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে রাখা হয়েছিল।
×