ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

শিশুর বাগানে শ্বাপদ

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

শিশুর বাগানে শ্বাপদ

ইব্রাহীম রাসেল ‘শিশু’ শব্দটা শুনলেই মনের ভেতর একটা কোমল প্রতিচ্ছবি ভেসে ওঠে। বুকের ভেতর থেকে একটা মায়া-স্নেহের উদ্বেল টের পাই। শিশুরা হচ্ছে ফুলের মতো। এই পৃথিবীটা তাদের কাছে বাগানস্বরূপ। মায়ের কোল ছেড়ে হাঁটি হাঁটি পা পা করে সেই বাগানের সঙ্গে তারা পরিচিত হবে এটাই স্বাভাবিক। বর্তমানে সেই বাগানজুড়ে বিষাক্ত কিছু শ্বাপদের পদচারণা। শিশুদের মতো এত পবিত্র, এত মায়াময়, নিষ্পাপ আর কী আছে! নিজের ভেতরের যত কলুষতা ভুলে যাবার কথা যে নিষ্পাপ মুখগুলোর দিকে তাকিয়ে; সেই শিশুদের ওপর ইদানীং কতিপয় মানুষ নামের প্রাণী করছে পৈশাচিক আচরণ, যা সত্যিই বড় লজ্জার, পরিতাপের, বড় ঘৃণার। পত্রিকায় যেদিন ছাপা হলো হবিগঞ্জে চার শিশু হত্যার খবর, সেদিন আরও কয়েকটি শিশুহত্যা ও নির্যাতনের খবর প্রকাশিত হয়েছিল। যেমন- নীলফামারীর ডিমলায় কুকুরের মুখে দেখা গেছে নবজাতকের লাশ। ধামরাইয়ে ডাস্টবিনে পলিথিনের ব্যাগে পাওয়া গেছে একটি শিশু। এসব খবর প্রমাণ করছে মানুষের মধ্য থেকে মানবীয় গুণাবালির স্তর দিন দিন কতটা নিচে নেমে যাচ্ছে! শিশুহত্যা বা শিশুদের প্রতি এই অমানবিক আচরণের ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ব্যক্তিগত আক্রোশ, পরিবারের প্রতি আক্রোশ মেটাতে গিয়েই বলি হচ্ছে এসব নিষ্পাপ শিশু। ব্যক্তিপর্যায়ে ব্যক্তির সঙ্গে দ্বন্দ্বে কুলিয়ে উঠতে না পেরে অথবা পারিবারিক পর্যায়ে প্রভাবশালী পরিবারের সঙ্গে সম্মুখ কোন ক্ষতি করতে না পেরে এই ধরনের নরপিশাচরা টার্গেট করে তাদের শিশু সন্তানকে। অনেক ক্ষেত্রে গ্রাম্য রাজনীতি বা ভিলেজ পলিটিক্সও এর জন্য দায়ী। শিশুর প্রতি এই ঘৃণ্য অনাচারের জন্য নৈতিক পদস্খলন আর বিচারবহির্ভূতরাই দায়ী। এই ঘৃণিত কাজগুলো আমাদের শিশুসমাজের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। কোমলমতি শিশুরা নির্ভয়ে-নিঃসঙ্কোচে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার পরিবেশ হারাচ্ছে। একটা অজানা আতঙ্ক কাজ করে তাদের ভেতর। এমন চলতে থাকলে আমরা শিশুদের জন্য একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ইঙ্গিত পাচ্ছি। সুতরাং শিশুদের স্বাভাবিক বৃদ্ধির পরিবেশ রক্ষার্থে আমাদের যা-যা করণীয় তা হলো- সর্বপ্রথম মানসিকতার উৎকর্ষ সাধন। শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এই ধরনের ঘটনা শিশুদের মনের ওপর যাতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি না করে সেদিকে দৃষ্টি দেয়া। সময় এসেছে এগুলো রুখে দেয়ার। শিশুদের প্রতি ব্যক্তি, পরিবার, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যে কর্তব্যগুলো রয়েছে সেগুলোর প্রতি নাগরিক সমাজকে সচেতন করার পাশাপাশি যারা এই ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। মোহাম্মদপুর, ঢাকা থেকে
×