ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়াইজ করণী

বিশ্ববাসী আমেরিকারই নেতৃত্ব চায় ॥ ওবামা

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ২৭ জানুয়ারি ২০১৬

বিশ্ববাসী আমেরিকারই নেতৃত্ব চায় ॥ ওবামা

প্রেসিডেন্ট ওবামা তাঁর প্রথম নির্বাচনী প্রচারের সময় আমেরিকানদের অনেক রকমের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বলেছিলেন যে, তিনি ব্যাপক পরিসরে পরিবর্তন আনবেন। এ বছরের শেষদিকে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যারা প্রার্থিতা লাভের জন্য দাঁড়িয়েছেন তাদের অনেকে আজ সেই ওবামার সমালোচনায় মুখর। তারা বলছেন, আমেরিকা আজ সামরিক দিক দিয়ে হীনবল, অর্থনৈতিক দিক দিয়ে রুগ্ন ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত এবং এসবই হয়েছে ডেমোক্র্যাটিক দলের শাসনের কারণে। গত ১২ জানুয়ারি ওবামা প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর শেষ স্টেট অব ইউনিয়ন ভাষণে কিশোরীদের এসব সমালোচনার জবাব দেন। তবে তার চাইতেও তিনি বেশি বলেন কর্মস্থল, বেতন-মজুরি ও মার্কিন সমাজের গঠন বিন্যাসের উপর বিশ্বায়ন যে ঐতিহাসিক পরিবর্তন ঘটিয়ে দিয়েছে সে প্রসঙ্গে। ওবামা অবশ্য এমনও বলেন যে, ‘আমেরিকা উচ্ছন্নে যায়নি বা শেষ হয়ে যায়নি। এর অর্থনীতি আজও বিশ্বের চোখে ঈর্ষণীয়। এর সশস্ত্র বাহিনীর কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তেমনি হলো এর বৈশ্বিক নেতৃত্ব। প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সমস্যার প্রশ্ন এলে বিশ্ববাসী বেজিং বা মস্কোর নেতৃত্ব প্রত্যাশা করে না। তারা আমাদেরই চায়।’ তিনি বলেন, শুধু এর ভিত্তিতে কেউ যদি আমেরিকার সমস্যার চরমপন্থী সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেয় তাহলে তা অবিশ্বাস করতে হবে। যদি তারা আমেরিকার শক্তির উৎস ন্যায়নীতি ও আইনের শাসনের প্রতি হুমকি সৃষ্টি করতে চায় তাদের ঘৃণা করতে হবে। জাতি বা ধর্মের কারণে কোন জনগোষ্ঠীকে টার্গেট করা যে কোন রাজনীতিকে আমাদের প্রত্যাখ্যান করা দরকার। মুসলমানদের ব্যাপকহারে আমেরিকা থেকে বের করে দেয়া এবং তাদের আমেরিকায় আসতে না দেয়ার যে প্রতিশ্রুতি রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প দিয়েছেন তা প্রত্যাখ্যান করে ওবামা বলেন, এটা রাজনৈতিক সঠিকতার বিষয় নয়, উপলব্ধি করার বিষয়। ওবামা তাঁর কার্যকালে যা যা করেছেন তার সমর্থনে বলেন, নানাবিধ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরোপ করে ব্যবসায়ী সমাজের ওপর অতিরিক্ত বোঝা চাপানো নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া যুক্তিসঙ্গত, তবে তাই বলে লাখ লাখ শ্রমিকের মঞ্জুরি যেখানে এক জায়গায় আটকে আছে এবং চাকরি ক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে সেখানে রিপাবলিকানদের প্রত্যাশামতো কল্যাণভাতা কমিয়ে দেয়া বড়ই অযৌক্তিক। জাতীয় নিরাপত্তা প্রশ্নে অনেক সমালোচকের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে ওবামা বলেন, আমেরিকা ইতোমধ্যেই যেসব যুদ্ধে জড়িয়ে গেছে সেগুলোর বিস্তার ঘটানো হলে পরিস্থিতিটা আমেরিকার জন্য নিরাপদ হবে না। যুদ্ধে জড়ানো ‘সুনেতৃত্বের পরিচয় নয়। এ হলো চোরাবালিতে আটকে পড়ার দাবাই। এ হলো ভিয়েতনামের শিক্ষা, ইরাকের শিক্ষা। এই হলেন ওবামা যিনি অক্লান্তভাবে বিচারবুদ্ধি দ্বারা চালিত। আজ আমেরিকার রাজনীতি যে উপজাতীয় ভাবাবেগের করাল গ্রাসে পরিণত হয়েছে সেটাকে তিনি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে এসেছেন। আমেরিকার অর্ধেকসংখ্যক লোক ওবামার সমালোচক। এরা ঠিক এ কারণেই তাকে দেখতে পারেন না। ওবামা বলেছেন, তাঁর কার্যকালের এক মস্তো পরিতাপের বিষয় হলো এই যে সংকীর্ণ ভেদাভেদ অতি মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। অথচ এই ভেদাভেদ দূর করার মতো কোন মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে না। এই রাজনৈতিক বিভাজনই প্রগতির চাকাকে পেছনে টেনে ধরেছে। তিনি স্বীকার করেন এই বিভাজনকে দূর করতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন এবং এটাই তার মেয়াদের স্থায়ী হতাশার বিষয়। কিন্তু তারপরও তিনি আমেরিকান জনগণের সামনে জাতির এক আশাব্যঞ্জক চিত্র তুলে ধরেছেন এবং বলেছেন যে, স্বদেশে অসাম্য ও বিদেশে সন্ত্রাসবাদ সত্ত্বেও নতুন করে উজ্জীবিত অর্থনীতি নিয়ে আমেরিকা এখন বিশ্বে আগের চেয়ে ভাল অবস্থানে আছে। তিনি বলেন, দেশ ও রাজনীতিকে রূপান্তরের লক্ষ্য নিয়ে ৭ বছর আগে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু সেই লক্ষ্য অর্জনে কিছুই করতে পারেননি। আর আমেরিকানদের যে বিভাজন তা লিংকন ও রুজভেল্টের মতো প্রতিভাধর প্রেসিডেন্টের পক্ষেই দূর করা সম্ভব হতো। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিশেষভাবে সমালোচনার জন্য বেছে নিয়ে ওবামা বলেন, ইসলামিক স্টেটের তরফ থেকে যেখানে হুমকি বিদ্যমান সেখানে সকল মুসলমানের কপালে কলঙ্কতিলক এঁকে দেয়ার আহ্বান আমেরিকানদের অবশ্যই প্রতিহত করতে হবে। সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×