ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশে পলাতক ৫ দুর্ধর্ষ জঙ্গীর একজন ব্রিটেনের জেলে, একজন মালয়েশিয়ায়

এবার ফারদিন, রাজিব গিয়াসরা হাল ধরলেন জঙ্গীদের

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২৬ জানুয়ারি ২০১৬

এবার ফারদিন, রাজিব গিয়াসরা হাল ধরলেন জঙ্গীদের

শংকর কুমার দে ॥ দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে মোস্ট ওয়ান্টেড দুর্ধর্ষ ও ভয়ঙ্কর প্রকৃতির পাঁচ জঙ্গী সদস্য। এদের একজন ব্রিটিশ পুলিশের হাতে আটক হয়ে ব্রিটেনের কারাগারে আছে। অপর এক জঙ্গী মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছে। পালিয়ে যাওয়া জঙ্গীরা জেএমবি ও আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সদস্য। এসব আসামি মুক্তমনা লেখক ও ব্লগার হত্যাকা-ের মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গী। পালিয়ে যাওয়া পাঁচ জঙ্গীর মধ্যে কেউ কেউ সিঙ্গাপুরে যারা জঙ্গী সম্পৃক্ততায় গ্রেফতার হয়েছে তাদের জঙ্গী তৎপরতায় জড়িত করাসহ দেশের ভেতরে জঙ্গীদের সংগঠিত করার চেষ্টা করছে। এছাড়াও দেশে অবস্থান করা জেএমবি সদস্যদের সংগঠিত করছে ফারদিন, রাজিব ও পিয়াস নামের তিনজন ভয়ঙ্কর জঙ্গী। সিঙ্গাপুর থেকে জঙ্গী সম্পৃক্ততায় ফেরত পাঠানো ২৬ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এ ধরনের তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। পালিয়ে যাওয়া জঙ্গীদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য ইন্টারপোলের সাহায্য নেয়া হচ্ছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য রেদোয়ানুল আজাদ রানা ও অর্থদাতা তেজিব করিম বর্তমানে অবস্থান করছে মালয়েশিয়ায়। এর মধ্যে রানা ব্লগার রাজীব হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি। রাজধানীর পান্থপথ এলাকার শিল্পপতি-কোটিপতির সন্তান দুই ভাই তেজিব করিম ও রাজিব করিম আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। এর মধ্যে রাজিব করিম বর্তমানে আছে ব্রিটেনের কারাগারে। তেজিব রয়েছে মালয়েশিয়ায়। তারা দু’জনও পালিয়ে গেছে। এক সাবেক সচিব ও বিচারপতির সন্তানও জঙ্গী সংগঠন সংগঠিত করার অভিযোগে গোয়েন্দা সংস্থার মোস্ট ওয়ান্টেড সেই তালিকায় রয়েছে। সিঙ্গাাপুরে জঙ্গী সম্পৃক্ততায় যে ২৬ জনকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এ ধরনের তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত পাঠানো ২৬ জনের মধ্যে ১২ জনকে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হলেও তাদের নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে এবং অপর ১৪ জনকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, বিদেশে পলাতক দুই ভাই তেজিব করিম ও রাজিব করিম এক অভিজাত ও শিল্পপতির সন্তান। জানা গেছে, তেজিব করিমের শ্বশুর মূলত আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ইসলামী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন। একটি এনজিওর আড়ালে তিনি এই জঙ্গীদের সংগঠিত করেন। বয়স বেড়ে যাওয়ায় এনজিও বন্ধ হয়ে যায় এবং জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের হাল ধরেন কারাবন্দী মুফতি জসিমউদ্দিন রাহমানী। গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন পালিয়ে যাওয়া তেজিব করিমের শ্বশুর যিনি জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের প্রতিষ্ঠাতা। পালিয়ে যাওয়া মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকাভুক্ত রেদোয়ানুল আজাদ রানা জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের দ্বিতীয় ব্যক্তি (সেকেন্ডম্যান) হিসেবে পরিচিত এবং বর্তমানে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন। ব্লগার রাজীব হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত এই রানা মালয়েশিয়ায় থেকেই সিঙ্গাপুরে আটক ২৬ জনকে জঙ্গী সংগঠনে সম্পৃক্ত ও দেশে জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে সংগঠিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানান, আনসারুল্লাহ বাংলাটিম নিষিদ্ধ হওয়ার পর এই সংগঠনের জঙ্গীরা আনসার আল ইসলামের ব্যানারে সংগঠিত হয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সিঙ্গাপুর ফেরত ব্যক্তিরাও আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সদস্য বলে পরিচিত হলেও প্রকৃতপক্ষে তারা আনসার আল ইসলামের সক্রিয় সদস্য। পলাতকরা মালয়েশিয়া থেকে এই সংগঠনের সদস্যদের অর্থ সহায়তা ও দল চালাতে নানা পরামর্শ দিচ্ছে। আর দেশে অবস্থান করা ফারদিন, রাজিব ও পিয়াস নামে তিন ভয়ঙ্কর জঙ্গী জেএমবি সদস্যদের সংগঠিত করছে। জেএমবির শীর্ষপর্যায়ের তিন সদস্য ক্রসফায়ারে নিহত ও কয়েকজন গ্রেফতার হওয়ার পর দায়িত্ব পেয়েছে তারা। এর মধ্যে সজিব ও পিয়াস ঢাকার দুই জোনের দায়িত্বে আছে এবং ফারদিন আছে চট্টগ্রামের দায়িত্বে। ফারদিন চট্টগ্রামের শিল্পপতি পরিবারের সন্তান এবং জেএমবির নতুন দলনেতা। জঙ্গী সংগঠন জেএমবি নিষিদ্ধ হওয়ার পর তারা আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের নামে এবং আনসারুল্লাহ বাংলাটিম নিষিদ্ধ হওয়ার পর তারা আনসার আল ইসলাম জঙ্গী সংগঠনের নামে তৎপরতা চালাচ্ছে। পালিয়ে যাওয়া এবং দেশে তৎপরতায় জড়িত এসব জঙ্গী অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র, গ্রেনেড-বোমা, বিস্ফোরক ও উন্নত প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত। সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত পাঠানো ২৬ জনকে জঙ্গী সম্পৃক্ততায় জড়িত অভিযোগে দেশে ফেরত পাঠানোর পর জিজ্ঞাসাবাদে এ ধরনের তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা।
×