ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

বদলে যাওয়া বাংলাদেশে বিনিয়োগে আসুন ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২৫ জানুয়ারি ২০১৬

বদলে যাওয়া বাংলাদেশে বিনিয়োগে আসুন ॥ প্রধানমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি...’ বাংলাদেশ একটি সুন্দর দেশ। আসুন এখানে বিনিয়োগ করুন। বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারপার্সন হিসেবে আমি আপনাদের, বিশেষ করে দেশী ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের নিশ্চিত করতে চাই যে, আমরা আপনাদের বাস্তবভিত্তিক বিনিয়োগ প্রস্তাবনা বাস্তবায়নে সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছি।’ বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে এ আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তিনি আরও বলেছেন, বদলে যাওয়া এক আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশে দেশী-বিদেশী শিল্পোদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ প্রয়োজন। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে, তাই উন্নয়ন অংশীদার হতে বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে আসুন। আগামী ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করা সরকারের লক্ষ্য। এই পথচলায় সরকার বিনিয়োগকারীদের সহযোগিতা চায়। আপনাদের বিনিয়োগের সর্বোত্তম মুনাফা অর্জনই বর্তমান সরকারের কাম্য। উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বাংলাদেশে আপনার বিনিয়োগের সুরক্ষা ও বৃদ্ধি সুনিশ্চিত। কোথাও কোথাও হয় তো এখনও আমাদের খানিকটা সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, আপনাদের সহযোগিতা ও পরামর্শ পেলে আমরা সেসব সীমাবদ্ধতা দ্রুততার সঙ্গে দূর করতে সক্ষম হব। রবিবার রাজধানীর হোটেল র‌্যাডিসনে ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট এ্যান্ড পলিসি সামিট ২০১৬’ এর শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন বিনিয়োগ বোর্ড (বিওআই), বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট-বিল্ড, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, এমসিসিআই ও ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স কর্পোরেশন (আইএফসি) যৌথভাবে এই সম্মেলনের আয়োজন করে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিনিয়োগ, বিশ্বমন্দাসহ সব প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ ভাগে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। চলতি অর্থবছরে ৭ শতাংশের ওপরে প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে বলে তিনি আশা করেন। শেখ হাসিনা বলেন, আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। দেশের মানুষ আজ অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। আর এটি সম্ভব হয়েছে নীতিনির্ধারক, উদ্যোক্তা, বিশেষজ্ঞ ও কর্মীদের দক্ষতার মধ্য দিয়ে। ব্যক্তি খাতে উদ্যোক্তাদের দক্ষতা বেড়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার এই খাততে উন্মুক্ত করে দিয়েছে। পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্প নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে। রিজার্ভ বেড়েছে। বাজেটের আকার বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার ব্যবসা করতে আসেনি। আমরা ব্যবসা করি না। ব্যবসা করবেন ব্যবসায়ীরা। সরকার ব্যবসাবান্ধব ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করছে। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের আঞ্চলিক সহযোগিতা বেড়েছে। দক্ষিণ এশিয়া অদূরভবিষ্যতে প্রবৃদ্ধির একটি বড় কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে যাচ্ছে। সম্মেলনে বাংলাদেশের অন্যতম বৈদেশিক বিনিয়োগ খাতগুলোর কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এগুলো হলো, বিদ্যুত,? গ্যাস, সমুদ্র, সড়ক, মহাসড়ক, আইসিটি, ওষুধ, অটোমোবাইল ও সিরামিকসসহ বিভিন্ন খাত। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারাদেশে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য ৩০ এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। বিনিয়োগ সম্মেলনের গুরুত্বের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এই সম্মেলন বাংলাদেশকে জানার সম্ভাবনা তৈরি করে দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের যে বাংলাদেশ তা অর্ধ-দশক আগের বাংলাদেশের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক বাংলাদেশ। এটা বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। দেশের মানুষ আজ অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী, যেকোন অসাধ্য সাধনে অনেক বেশি আত্মপ্রত্যয়ী ও সংকল্পবদ্ধ। গত ৭ বছর ধরে বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শুধু ধরেই রাখেনি, ক্রমাগতভাবে তা এগিয়েও নিয়ে গেছে। বিগত ৬ বছরে বাজেটের আকার প্রায় ৫ গুণ বেড়ে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। রফতানি আয় বেড়েছে ৩২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। গত ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। তা আজ পৌনে আট গুণ বেড়ে ২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। দেশের অর্থনীতি এখন জিডিপি’র ভিত্তিতে বিশ্বের ৪৫তম ও ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে ৩৩তম স্থান অধিকার করেছে বলেও জানান তিনি। এ সময় বিদ্যুত উৎপাদনে সরকারের নেয়া পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, শিল্প-কারখানা স্থাপনের জন্য বিদ্যুত ও জ্বালানি অপরিহার্য উপাদান। বিদ্যুত উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে এখন ১৪ হাজার ৭৭ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। গ্যাসের দৈনিক উৎপাদন ২০০৬ সালের ১৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট থেকে বেড়ে ২ হাজার ৭২৮ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়েছে। ভবিষ্যতে গ্যাসের ঘাটতি মেটানোর জন্য এলএনজি আমদানির পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এজন্য এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণেরও কাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ এশিয়া অদূর ভবিষ্যতে নিশ্চিতভাবে প্রবৃদ্ধির একটি বৃহৎ কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তাসমূহ দক্ষভাবে মোকাবেলা করতে হবে। পাশাপাশি সামষ্টিক ও ব্যাষ্টিক নীতির নির্ণায়কগুলোকে যথাযথভাবে বিন্যস্ত করতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গোপসাগরে অফুরন্ত সামুদ্রিক সম্পদ যথাযথভাবে ব্যবহারের জন্য বিনিয়োগকারীদের তা উন্মুক্ত। মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্র সীমানার বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে তা সম্ভব হয়েছে। ব্লু-ইকোনমি এখন নতুন সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে। যুব কর্মশক্তির সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বিপুল যুব কর্মশক্তি রয়েছে। তা কাজে লাগাতে হবে। তিনি বলেন, ব্যক্তিখাতের বিভিন্ন সমস্যাগুলোকে তথ্যনিষ্ঠ ও গবেষণার মাধ্যমে চিহ্নিত এবং সমাধানের জন্য প্রাইভেট সেক্টর ডেভেলপমেন্ট পলিসি কো-অর্ডিনেশন কমিটি করা হয়েছে। উদ্যোগ নিয়েছি বাংলাদেশ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার, যা বিনিয়োগকে সহজীকরণ করবে। বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান এস এ সামাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মুকুল শর্মা, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ ও এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বক্তব্য রাখেন।
×