ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

ইনভেস্টমেন্ট এ্যান্ড পলিসি সামিট শুরু আজ

দুই শতাধিক বিদেশী বিনিয়োগকারী যোগ দিচ্ছেন

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ২৪ জানুয়ারি ২০১৬

দুই শতাধিক বিদেশী বিনিয়োগকারী যোগ দিচ্ছেন

এম শাহজাহান ॥ সব ধরনের সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দিয়ে এবার বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। এজন্য বিনিয়োগবান্ধব নীতি গ্রহণ করতে যাচ্ছে সরকার। সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশে নিয়ে যাওয়া, রূপকল্প ভিশন-২১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর এবং মাথাপিছু আয়ের ধারবাহিক উত্তরণ ঘটিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশের কাতারে শামিল হওয়া সরকারের চূড়ান্ত লক্ষ্য। এই লক্ষ্য অর্জনে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানো। বছরে অন্তত্ব ৪ থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার বিদেশী বিনিয়োগ প্রয়োজন। আর তাই এবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন বিনিয়োগ বোর্ড, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট-বিল্ড এর উদ্যোগে আয়োজন করা হচ্ছে ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট এ্যান্ড পলিসি সামিট-২০১৬।’ এই সামিট সফল করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশী উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তাঁদের উদ্দেশে বিনিয়োগ বোর্ডের ওয়েবসাইটে বাণী দিয়েছেন তিনি। ওই বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করতে চাই, সেজন্য বৈদেশিক বিনিয়োগ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আমরা আপনাকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আপনি নিশ্চিত হতে পারেন যে, আপনাকে সম্পূর্ণভাবে স্বাগতম জানিয়ে আমার সরকার সব ধরনের সহায়তা দেবে।’ জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ভারত, চীন, জাপান, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কোরিয়া ও কানাডাসহ মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় ২ শতাধিক উদ্যোক্তা বাংলাদেশে আসার আগ্রহ প্রকাশ করে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করেছেন। এ লক্ষ্যে আজ থেকে দ্বিতীয়বারের মতো দেশে (২৪-২৫) জানুয়ারি দু’দিনব্যাপী শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট এ্যান্ড পলিসি সামিট-২০১৬। ঢাকার র‌্যাডিসন ব্লু-ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে এই সামিটের আয়োজন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। আর বিনিয়োগ সম্মেলনের সমাপ্তি দিনে ঢাকা ঘোষণা করবেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী সদস্য নাভাস চন্দ্র ম-ল জনকণ্ঠকে বলেন, রূপকল্প-২১ বাস্তবায়ন ও বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে নিয়ে যেতে হলে সব ধরনের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এজন্য দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বিনিয়োগবান্ধব নীতি গ্রহণ করতে যাচ্ছে সরকার। বিনিয়োগের জন্য উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে দেশে সরকারী বিনিয়োগ বাড়িয়ে অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। এখন বিদেশীরা এখানে বিনিয়োগ করতে পারেন। রূপকল্পের স্বপ্ন বাস্তবায়নে বছরে অন্তত্ব ৪ থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন। এখন এই বিনিয়োগের পরিমাণ ২ বিলিয়ন ডলারের মতো। তিনি বলেন, এজন্যই সরকার প্রধান বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। শতভাগ বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে কি কি সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে ও বাধাগুলো কোথায় তা এই সম্মেলনে বিনিয়োগকারীরা তুলে ধরবেন। তাদের পরামর্শগুলো গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে বিনিয়োগ বোর্ড। জানা গেছে, এবারের সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারী উদ্যোক্তা, সরকারী বেসরকারীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নামে প্রায় আড়াই হাজার আমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছে। অনলাইন নিবন্ধনের মাধ্যমে ইতোমধ্যে দেশী-বিদেশী মিলে এ পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সম্মেলনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে। এর মধ্যে দু’শতাধিক বিদেশী বিনিয়োগকারীসহ শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশী রয়েছেন। এদিকে, বিনিয়োগ বোর্ডের তথ্যমতে, গত ২০১৪ সালে বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১৫২ কোটি ডলার। তার আগের বছর ছিল ১৫৯ কোটি ডলার। আর গত ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে দেশীয় বেসরকারী বিনিয়োগ প্রস্তাব নিবন্ধনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৭২ কোটি ডলার। তার আগের অর্থবছর বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৬৩৯ কোটি ডলার। এত অল্প পরিমাণ বিনিয়োগে ভর করে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে পারবে না। সেজন্য বিদেশী ও বেসরকারী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে বিনিয়োগ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। সম্মেলনে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে তিনটি মূল বার্তা তুলে ধরছে বিনিয়োগ বোর্ড। এক দশক ধরে ৬ শতাংশেরও বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন, বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা যুব কর্মশক্তি এবং এশিয়ার ৩০০ কোটি মানুষের বাজারে প্রবেশ করার সুযোগ রয়েছে। বিনিয়োগ বাড়াতে আরও যেসব সরকারী উদ্যোগ ॥ বিদেশী বিনিয়োগ আনতে ইতোমধ্যে শীর্ষ নির্বাহীদের নিয়ে টাস্কফোর্স গঠন করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। টাস্কফোর্সের উর্ধতন কর্মকর্তাদের বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়ার নির্দেশও দেয়া হয়েছে, যাতে দেশে কাক্সিক্ষত বিদেশী বিনিয়োগ আসে। গঠিত টাস্কফোসের্র প্রধান করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিবকে। এ টাস্কফোর্সের কাজের আওতায় বলা হয়েছে, ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রয়োজনীয় জমি নির্বাচন করা, পিপিপির আওতায় প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ ও বিদ্যুত উৎপাদন নিশ্চিতকরণ, প্রকল্পসমূহে অর্থায়নের বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণ করা। ইতোমধ্যে ৩০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এছাড়া বিশ্বব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান আইএফসির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে চট্টগ্রামের আনোয়ারার গহিরা ও মিরসরাই, মৌলভীবাজারের শেরপুরে, সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতুসংলগ্ন এলাকায় এবং বাগেরহাটের মংলায় এ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। এছাড়া টেক্সটাইল, চামড়াজাত সামগ্রী, ইলেক্ট্রনিক্স দ্রব্য, রাসায়নিক ও পেট্রোকেমিক্যাল, কৃষিভিত্তিক শিল্প, কাঁচা পাট, কাগজ, রেশম শিল্প, হিমায়িত খাদ্য, পর্যটন, কৃষি, ক্ষুদ্র শিল্প, সফটওয়্যার ও ডাটা প্রসেসিংয়ের মতো রফতানিমুখী শিল্পে বিদেশী বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়াও ভারি ও তথ্য-প্রযুক্তির শিল্প প্রতিষ্ঠায়ও বিদেশী বিনিয়োগকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে যা দেশীয় আমদানি ব্যয় কমাতে সাহায্য করবে। বিদেশী বিনিয়োগে যেসব সুবিধা ॥ ১০০ ভাগ সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ (ডিএফআই) অথবা রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকাতে (ইপিজেড) যৌথ বিনিয়োগ অথবা এ এলাকার বাইরের বিনিয়োগ করার সুযোগ রয়েছে। স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে পাবলিক কোম্পানির শেয়ার ক্রয়ের দ্বারা তালিকাভুক্ত বিনিয়োগ, অবকাঠামোগত প্রকল্পে বিনিয়োগ যেমন বিদ্যুত খাত, তেল, গ্যাস ও খনিজ অনুসন্ধান, টেলিযোগাযোগ, বন্দর, সড়ক ও জনপথ। সরাসরি প্রত্যক্ষ ক্রয় অথবা সরকারী প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ক্রয় করা, বেসরকারী ইপিজেড বিনিয়োগের সুযোগ। এছাড়া বেসরকারী উদ্যোগে রফতানিমুখী ও প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প প্রতিষ্ঠায় দেশীয় ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সব ধরনের সেবা প্রদানের জন্য বিনিয়োগ বোর্ড দায়িত্বপ্রাপ্ত। সব ধরনের বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ ও ব্যবসা সহায়তা প্রদান করা এই বোর্ডের মূল লক্ষ্য। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানের বিনিয়োগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, ইকোনমিক জোনগুলোতে বিদেশী বিনিয়োগে আকর্ষণীয় প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদ্যুত ও গ্যাসের ব্যবস্থা করে দেবে সরকার। নারী উদ্যোক্তা গড়তে অর্থনৈতিক জোনে নারীদের জন্য বিশেষ অঞ্চল থাকবে। তিনি বলেন, গত ২০১০ সালে বেজা গঠনের পর বিনিয়োগবান্ধব অনেক আইন করা হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের জন্য রফতানি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। তাদের জন্য সরকার আরও সহায়তা দিতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগকারীদের সুবিধার জন্য সরকার ফোরজি নেটওয়ার্ক স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া তাদের সহযোগিতায় আগামী ৩-৪ মাসের মধ্যে ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিআইডিএ) নামে আলাদা প্রতিষ্ঠান করা হবে।
×