ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

গণজাগরণের পাকিস্তান হাইকমিশন ঘেরাও কর্মসূচীতে পুলিশের বাধা

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২১ জানুয়ারি ২০১৬

গণজাগরণের পাকিস্তান হাইকমিশন ঘেরাও কর্মসূচীতে পুলিশের বাধা

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ পুলিশী বাধায় প- হলো গণজাগরণ মঞ্চের পাকিস্তান হাইকমিশন ঘেরাও কর্মসূচী। একাত্তরের গণহত্যার দায় অস্বীকার এবং কারণ ছাড়া এক বাংলাদেশী কূটনীতিককে বহিষ্কারের প্রতিবাদে এ কর্মসূচীর ডাক দেয়া হয় মঞ্চের পক্ষ থেকে। ঘেরাওকালে মঞ্চের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি ও উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের ঘটনা ঘটে। বুধবার বেলা ৩টার দিকে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচী অনুযায়ী মঞ্চের নেতাকর্মীদের রাজধানীর গুলশান-২ নম্বর এলাকায় একত্রিত হয়ে হাইকমিশনের দিকে যাওয়ার কথা থাকলেও সেখানে দাঁড়াতেই দেয়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। রাস্তায় কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়। এ সময় আটক করা হয় মঞ্চের দুই কর্মীকে। আটককৃতরা হলেন-মঞ্চের কর্মী সোহেল ও রিয়াদ। পুরো গুলশান এলাকাজুড়েই ছিল পুলিশের ব্যাপক নজরদারি। এরপর বিকেল সোয়া তিনটার দিকে মঞ্চের মুখপাত্রসহ চার-পাঁচজন নেতাকর্মী ব্যারিকেডের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের ফিরিয়ে আনে। পুলিশ ধাওয়ার পূর্ববর্তী অবস্থান কর্মসূচীতে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার এর প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য রাখেন। এই কর্মসূচীতে বাধা দেয়ায় এবং নেতা-কর্মীদের আটক ও হয়রানির প্রতিবাদে আগামীকাল শুক্রবার শাহবাগে গণসমাবেশের ডাক দিয়েছেন তিনি। সেখান থেকে পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে বলেও জানানো হয়। এদিন বিকেলে মঞ্চের নেতা-কর্মীরা কামাল আতাতুর্ক সড়কের দিকে পূবালী ব্যাংকের সামনে এসে স্লোগান দিতে থাকেন। এর কিছুক্ষণ পর গুলশান উপ-পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ের গলি থেকে মঞ্চের বেশ কিছু নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে এসে তাদের সঙ্গে যোগ দেন। সেখানে বিকেল চারটা পর্যন্ত পুলিশ ঘেরাওয়ের মধ্যে অবস্থান ও সমাবেশ করেন তারা। এরপর পুলিশ তাদের সেখান থেকে ধাওয়া করে কনকর্ড বকস টাওয়ার গলি পার করে দেয়। এই সময় তাদের সঙ্গে পুলিশ সদস্যদের ধস্তাধস্তির ঘটনাও ঘটে। কর্মসূচীতে মঞ্চের নেতাকর্মীরা ‘জঙ্গীবাদের আখড়া-ভেঙ্গে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘জঙ্গীবাদের আস্তানা বাংলাদেশে থাকবে না’, ‘ঘেরাও ঘেরাও ঘেরাও হবে, পাকিস্তান হাইকমিশন ঘেরাও হবে’ প্রভৃতি স্লোগান দেন। তাদের হাতে ‘পাওনা টাকা ফেরত দাও, নইলে বাংলা ছেড়ে যাও’, ‘গো ব্যাক পাকিস্তানস’ প্রভৃতি লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ডও প্রদর্শন করেন তারা। পরবর্তীতে গুলশান-৮ এর সামনে পুলিশী ঘেরাওয়ের মধ্যে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত অবস্থান করে কর্মসূচী শেষ করে গণজাগরণ মঞ্চ। পুলিশ ধাওয়ার পূর্ববর্তী অবস্থান কর্মসূচীতে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেন, এই কর্মসূচীর মূল উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তান যেভাবে আমাদের ত্রিশ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে, আমাদের ওপর চালানো গণহত্যাকে অস্বীকার করেছে, যেভাবে জঙ্গী মদদ দিচ্ছে ও বাংলাদেশের ভেতরে থেকে কূটনৈতিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে তার প্রতিবাদ জানানো। আমাদের স্পষ্ট দাবি, পাকিস্তান যে গণহত্যা করেছিল তার দায় স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে, পাকিস্তানকে ১৯৫ জন মিলিটারি যুদ্ধাপরাধীকে বিচারের আওতায় আনতে হবে এবং আমাদের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ট্রেজারি থেকে নিয়ে যাওয়া অর্থ ফেরত দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, কূটনীতিক মৌসুমী রহমানকে কোন ধরনের কারণ দর্শানো ছাড়া বহিষ্কারের জন্য পাকিস্তানকে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে এবং প্রতিশ্রুতি দিতে হবে এই ধরনের ন্যক্কারজনক কাজ আর করবে না। এদেশকে অস্থিতিশীল ও জঙ্গীবাদের আখড়া করার চেষ্টা করছে তখন আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় আজকের কর্মসূচী। পাকিস্তান হাইকমিশন বাংলাদেশে রেখে জঙ্গীবাদ দমন করা কোনভাবে সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশে ইমরান বলেন, আপনারা রাতদিন পরিশ্রম করে জঙ্গীবাদ দমনের যে চেষ্টা করছেন, সেই জঙ্গীবাদের আখড়া হচ্ছে এই হাইকমিশন। এটা বাংলাদেশের একট শিশু পর্যন্ত জানে। আপনারা একদিকে জঙ্গীবাদের ঘাঁটিকে পাহারা দেবেন, অন্যদিকে জঙ্গী দমন করবেন সেটা কীভাবে সম্ভব। জঙ্গীবাদ দমন করতে হলে, বাংলাদেশ থেকে এই পাকিস্তান হাইকমিশনকে সরাতে হবে। ভারতের কূটনীতিক দেবযানীকে অন্যায়ভাবে তল্লাশি করার জেরে ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের পানি-বিদ্যুত বন্ধ করে দেয়ার প্রসঙ্গ তুলে ইমরান সরকারের উদ্দেশে বলেন, পাকিস্তান অন্যায়ভাবে কূটনীতিক বহিষ্কার করবে আর আপনারা তামাশা দেখবেন, মুখে আঙ্গুল দিয়ে বসে থাকবেন তা হতে পারে না। মৌসুমী রহমানকে বহিষ্কারের সমুচিত জবাব আপনাদের দিতে হবে। আপনারা আজ বাধা দেবেন, আমরা তিনদিন পর আবার আসব। ওইদিন বাধা দেবেন আবার আসব। দেশকে নিরাপদ বাসযোগ্য দেশে পরিণত করার স্বার্থে এখানে এসেছি। যারা জঙ্গীবাদের টাকা দেয়, তাদের লালন-পালন করে তাদের পাহারা দিয়ে রাখা বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ নয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে নিরাপদ বাসযোগ্য করাই হবে আমাদের আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর দায়িত্ব। এদিকে কর্মসূচীতে বাধার বিষয়ে স্পষ্ট করে কোন বক্তব্য দেননি গুলশান জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার মোস্তাক আহমেদ খান। তবে তিনি কূটনীতিক পাড়ার নিরাপত্তা বাড়ানোর কথা বলেন। পুলিশ কর্মকর্তা মোস্তাক সাংবাদিকদের বলেন, এই এলাকার সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা অতিরিক্ত সিসি ক্যামেরা বসানোসহ সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছি। কর্মসূচীতে অংশ নেন এ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, ভাস্কর রাসা, প্রবীর সিকদার, সঙ্গীতা ইমামসহ মঞ্চের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ।
×