ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

অনিশ্চয়তায় গ্রাহক

বাসা বাড়িতে গ্যাস সংযোগ ফের বন্ধ

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ২০ জানুয়ারি ২০১৬

বাসা বাড়িতে গ্যাস সংযোগ ফের বন্ধ

রশিদ মামুন ॥ ফের বন্ধ করে দেয়া হয়েছে গৃহস্থালির গ্যাস সংযোগ। নতুন করে গৃহস্থালির গ্যাস সংযোগের জন্য আবেদন জমা নেয়া হচ্ছে না। এর আগে ২০১০-এ গৃহস্থালির সংযোগ বন্ধ করার সময় বলা হয়েছিল গ্যাসের উৎপাদন দৈনিক দুই হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুটে পৌঁছলে আবার সংযোগ উন্মুক্ত করা হবে। কিন্তু এবার সংযোগ বন্ধের প্রক্রিয়ায় ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে। জ্বালানি বিভাগের তরফ থেকে সকল বিতরণ কোম্পানিকে অনানুষ্ঠানিকভাবে সংযোগ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। বিতরণ কোম্পানিকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। অন্যদিকে গ্রাহককেও অন্ধকারে রাখা হয়েছে। সূত্র বলছে, সরকারের তরফ থেকে গৃহস্থালিতে গ্যাস সংযোগের বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে। রান্নার জন্য বিকল্প পদ্ধতি সহজ করে গৃহস্থালির গ্যাস বন্ধের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হলেও এখনও তেমন কিছু করতে পারেনি সরকার। মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে বলা হচ্ছে সরকার নতুন করে বাসা বাড়িতে আর কোন গ্যাস সংযোগ দেবে না। বিতরণ কোম্পানি এবং জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এবার গৃহস্থালিতে সংযোগ বন্ধের মধ্যদিয়ে বাসাবাড়ির গ্যাস সংযোগ থেকে সরে আসছে সরকার। অর্থাৎ এরপর হয়ত আর গৃহস্থালিতে নতুন করে কোন গ্যাস সংযোগ দেয়া হবে না। এ ক্ষেত্রে এখন গৃহস্থালিতে যেসব জরাজীর্ণ গ্যাস লাইন রয়েছে তাও পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেয়া হবে। তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত একটি বৈঠকে গৃহস্থালিতে নতুন গ্যাস না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারের নীতি নির্ধারক পর্যায়ের অনুমোদন নেয়া হয়নি। ওই বৈঠকে বলা হয়, সরকার বাসা বাড়ির রান্নার জন্য এলপিজি সহজলভ্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন শুধু এলপিজি দেশের সর্বত্র পাওয়াই যাবে না বরং এখনকার চেয়ে দামও কমে আসবে। তিতাসসহ অন্য গ্যাস বিতরণ কোম্পানি গৃহস্থালিতে নতুন সংযোগ দেয়ার আবেদন গ্রহণ বন্ধ করে দিয়েছে। গ্রাহকরা নতুন গ্যাস সংযোগের আবেদন করতে গেলে তা গ্রহণ করা হচ্ছে না। গ্রাহক আর নতুন সংযোগ পাবেন কি না তাও জানানো হচ্ছে না। আপাতত মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সংযোগ বন্ধ রয়েছে বলে গ্রাহককে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। যদিও মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে গৃহস্থালিতে নতুন সংযোগ বন্ধের কোন কাগজপত্র দেখাতে পারছে না তিতাস বিতরণ কোম্পানি। সরকার রান্নার সমস্যা দূর করতে নানা পরিকল্পনা করলেও কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। সরকার এলপিজির সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য বিপিসির মাধ্যমে নতুন করে যেসব প্রকল্প নিয়েছিল তাও বাস্তবায়িত হয়নি। অন্যদিকে বেসরকারী বিভিন্ন কোম্পানির এলপিজির দর নিয়ন্ত্রণের কোন ব্যবস্থাও গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। দেশে সকল ধরনের জ্বালানির মূল্য নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা থাকলেও এলপিজির মূল্য নিয়ন্ত্রণের কোন ব্যবস্থা নেই। জ্বালানির বেশিরভাগই বেসরকারী উদ্যোক্তারা আমদানি এবং বিপণন করে এ ক্ষেত্রে সরকারের নিয়ন্ত্রণের সুযোগ কম। বাজারে সরকারের সরবরাহ করা এলপিজিও বেসরকারী কোম্পানির দামে বিক্রি হয়ে থাকে। ফলে ভোক্তার সুবিধা গ্রহণ সম্ভব হয় না। জানতে চাইলে বাখরাবাদ গ্যাস বিতরণ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মালিক মোঃ নাজমুল হাসান শরীফ জনকণ্ঠকে বলেন, জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে তাদের গৃহস্থালির গ্যাস সংযোগ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের কোন চিঠি দেয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, না এ ধরনের কোন চিঠি আমাদের দেয়া হয়নি। আমরা ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গৃহস্থালিতে গ্যাস সংযোগের আবেদন নেয়া থেকে বিরত রয়েছি। দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেয়ার পর ২০১৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুতও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে প্রথম অফিস করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিন বৈঠকের পর বলা হয়েছিল নতুন করে আর কোন গ্যাস সংযোগ না দেয়ার বিষয়ে বৈঠকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যদিও এরপরও গ্যাস সংযোগ প্রদান অব্যাহত ছিল। জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, সরকারের গ্যাস বিতরণ নিয়ে পরিকল্পনার সবই বিদ্যুত উৎপাদন-শিল্প কারখানা এবং বাণিজ্যিক ব্যবহারকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে। নতুন করে গৃহস্থালির জন্য আর কোন বিতরণ লাইন নির্মাণ করা হবে না। সম্প্রতি আশুগঞ্জে নতুন বিদ্যুত কেন্দ্র চালু হওয়ায় রাজধানী ঢাকা এবং আশপাশের এলাকার কিছু গ্যাস সেখানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন অনেক গ্রাহক। গৃহস্থালির পাশাপাশি শিল্প গ্রাহকরা এই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। একই সরবরাহ প্রক্রিয়ার মধ্যে আশুগঞ্জের জন্য নতুন সরবরাহ দিতে গিয়ে এই সমস্যা হচ্ছে। দেশের ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানির বিতরণ পরিস্থিতি বলছে সবখানেই গ্যাসের সঙ্কট রয়েছে। বিতরণ কোম্পানিগুলো বিদ্যুত এবং সার উৎপাদনকে সব থেকে বেশি প্রাধান্য দিলেও চাহিদার পুরোটা সরবরাহ করতে পারে না বছরের কোন সময়ে। শিল্প এবং বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ঘাটতির কারণেই গৃহস্থালির নতুন সংযোগ বন্ধ করা হয়েছে। এখন সারাদেশে দুই হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন হচ্ছে। তবে এখনও দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট ঘাটতি রয়েছে। নতুন করে শিল্প সংযোগ দেয়া এবং বিদ্যুতে গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্তে এই চাহিদা দিন দিন আরও বাড়ছে। কিন্তু পেট্রোবাংলা নতুন করে গ্যাস সরবরাহ আশানুরূপ বৃদ্ধি করতে পারছে না। তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানি বলছে তাদের এলাকার বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোর চাহিদা ৬৫২ মিলিয়ন ঘনফুটের বিপরীতে বর্তমানে ৪০২ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ করা হচ্ছে। এরমধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ, টঙ্গী এবং ঘোড়াশালের তিনটি বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। কেন্দ্রগুলো চালু থাকলে গ্যাসের চাহিদা আরও বাড়ত। সেক্ষেত্রে অন্যান্য খাতকে সঙ্কটে পড়তে হতো। তবে কৃষি মৌসুম হওয়ায় সারে সরবরাহ বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রতিদিন তিতাসের আওতায় থাকা তিন সারকারখানায় ১০৪ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে ৯৩ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া অন্যসব খাত মিলিয়ে সরবরাহ হচ্ছে এক হাজার ১৭৪ মিলিয়ন ঘনফুট। বিতরণ কোম্পানি বাখরাবাদেও সঙ্কটে দেখা যাচ্ছে। এখানে বিদ্যুতে ৩৭১-এর বিপরীতে ২৪৮ মিলিয়ন ঘনফুট, সারে ৫২-এর বিপরীতে ৪৮ মিলিয়ন ঘনফুট আর অন্যান্য খাতে সরবরাহ হচ্ছে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট। বিতরণ কোম্পানি কর্ণফুলীর অবস্থা আরও খারাপ এখানে বিদ্যুত উৎপাদনে ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুটের বিপরীতে ৩০ মিলিয়ন ঘনফুট, সার উৎপাদনে ১১৫-এর বিপরীতে ৪৮ আর অন্যান্য খাতে ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ করা হচ্ছে। সিলেটেও সঙ্কট রয়েছে জালালাবাদ গ্যাস বিতরণ কোম্পানিতে। এখানে বিদ্যুতে ২১৯ এর বিপরীতে ১৩৮ মিলিয়ন ঘনফুট, সারে ৪৫-এর বিপরীতে ৪৮ আর অন্যান্য খাতে ৬০ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ হচ্ছে। পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস বিতরণ কোম্পনিতে সব মিলিয়ে ১০৯ মিলিয়ন ঘনফুট আর সুন্দরবন বিতরণ করছে ৪৫ মিলিয়ন চাহিদার বিপরীতে ১৯ মিলিয়ন ঘনফুট।
×