ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

এবার সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৯ জানুয়ারি ২০১৬

এবার সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় বাংলাদেশের

রুমেল খান ॥ গত ফাইনালে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল। এবার স্বপ্নভঙ্গ হলো সেমিফাইনালেই। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের সেমিফাইনালেই থমকে গেছে বাংলাদেশ ফুটবল দলের পথচলা। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে সোমবার অনুষ্ঠিত প্রথম সেমির ম্যাচে বাহরাইন অনুর্ধ-২৩ ফুটবল দলের কাছে ১-০ গোলে হেরেছে স্বাগতিক দল। ইনজুরি সময়ে পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। বাহরাইন মিডফিল্ডার ইব্রাহিম আলহুতি হেডে জয়সূচক গোলটি করেন (১-০)। একই ভেনুতে আজ বিকেল সাড়ে ৫টায় মুখোমুখি হবে সাফ অঞ্চলের দুই দেশ নেপাল বনাম মালদ্বীপ। পুরো টুর্নামেন্ট বিচার করলে খুব একটা শক্তিশালী দল নয় বাহরাইন অনুর্ধ-২৩ দল। তাদের সঙ্গে গ্রুপ ম্যাচে ১-১ গোলে ড্র করেছিল বাংলাদেশ অলিম্পিক দল। তারা যদি ড্র করতে পারে তাহলে জাতীয় দলের তো হেসেখেলেই জেতা উচিত ছিল। কিন্তু উল্টো তারাই কি না হেরে বসলো, দেশের ফুটবলপ্রেমীদের হতাশা উপহার দিল! প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির মধ্যে সমন্বয় ঘটাতে পারলেন না মারুফুল হক। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার। প্রথমবার সাফ সুজুকি কাপে। দ্বিতীয়বার বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে। জাতীয় দলের হয়ে কোচিং করানোর খায়েশ মিটে গেছে তার। ‘সাফ পর্যন্ত আমার দায়িত্ব ছিল। বলা হয়েছিল সফল হলে চুক্তি নবায়ন করা হবে। এরপর গোল্ডকাপে আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। এখানেও পারিনি। তাই আমি আর জাতীয় দলের দায়িত্ব পালন করতে চাচ্ছি না। আমি ক্লাবে ফিরে যেতে চাই। নতুন যেই আসুক না কেন, তার জন্য শুভকামনা রইলো।’ সোমবার বাহরাইনের কাছে সেমিতে হারার পর বাংলাদেশ কোচ মারুফুল হক এমনটাই বলেন। গত ডিসেম্বরে মালদ্বীপের কাছে হারের পরই সাফ সুুজুকি কাপ থেকে বাংলাদেশ বিদায় নেয়। মারুফুল হক এই ব্যর্থতা নিজের ঘাড়ে নিয়ে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। দলের এ ব্যর্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমাও চান তিনি। পরে বাফুফের অনুরোধে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের জন্য আবার দায়িত্ব পালনে রাজি হন। দলকে ফাইনালে খেলানোর স্বপ্ন ছিল তার। কিন্তু সেমিতেই মুখ থুবড়ে পড়ে তার স্বপ্ন। উয়েফার ‘এ’ লাইসেন্স কোচিং কোর্স করা মারুফুল গত ২৪ নবেম্বর বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব পান। ইতালিয়ান ফ্যাবিও লোপেজকে বরখাস্ত করে তাকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তার অধীনে ‘দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ’ খ্যাত এই আসরে বাংলাদেশ চরমভাবে ব্যর্থ হয়। আর এবার ব্যর্থ হল বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে। মারুফুল আরও যোগ করেন ‘ব্যর্থতার দায় আমার। খেলোয়াড়রা চেষ্টা করেছে কিন্তু পারেনি। হয়তো আমার কোথাও কোন দুর্বলতা আছে।’ বাংলাদেশের হারের জন্য দায়ী করা যায় গোলরক্ষক শহীদুল আলমকে। চোটের কারণে নিয়মিত গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানা খেলতে পারেননি। রানার অভাব পূরণ করতে পারেননি শহীদুল। অধিনায়ক মামুনুলকে খেলতে হয়েছে পেইনকিলার নিয়ে। এ প্রসঙ্গে মারুফুলের ভাষ্য, ‘গোলরক্ষক শহীদুল ধারাবাহিকভাবে পারফর্মেন্স করতে পারছে না। তাই রানাকে নিয়েছিলাম। কিন্তু চোটের কারণে সে খেলতে পারেনি, তাই শহীদুলকেই বেছে নিতে হয়েছে। আসলে আক্রমণ, রক্ষণভাগের মতো আমাদের গোলরক্ষকের সমস্যাও আছে।’ সেমিফাইনালের আগে জাহিদ হোসেন দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের দায়ে বহিষ্কৃত হন। এর ফলে দলে প্রভাব পড়েছে বলে জানান মারুফ, ‘জাহিদের ব্যাপারটা যে কোন দলের জন্যই নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। দলে অনেকের মধ্যে কমিটমেন্ট ছিল বিধায় ভাল খেলেছে, তবে সবার মধ্যে কমিটমেন্ট ছিল না তা আপনারাই দেখেছেন।’ এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের পারফর্মেন্সে কোন উন্নতি হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন মারুফুল, ‘আমাদের দেশের যারা প্রতিভাবান তারাই জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু তাতেও ফুটবলের উন্নতি হচ্ছে না। নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপের দিকে তাকালে দেখবেন তারা কিভাবে ওঠে যাচ্ছে, আর আমরা কোথায় আছি।’ মারুফুল ২০১৪ সালে শেখ জামাল ধানম-ির হয়ে প্রিমিয়ার লীগের শিরোপা জেতার পর ভুটানে গিয়ে জেতেন কিংস কাপের শিরোপা। এরপর জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব পান। তার আসল এ্যাসাইনমেন্ট ছিলÑ সাফ সুজুকি কাপ। বহুল আলোচিত এই আসরে বাংলাদেশকে এক যুগ পর শিরোপা জেতানো দূরে থাক, গ্রুপ পর্বেই বাদ পড়ে উয়েফা ‘এ’ লাইসেন্সধারী মারুফুল হকের বাংলাদেশ দল। সেই কলঙ্কমোচনের সুযোগ মারুফুল পেয়েছিলেন এবার বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে দলকে ফাইনালে উঠিয়ে এবং শিরোপা জিতে। কিন্তু তা আর পারলেন কই!
×