ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

নিরাপদ খাদ্যশস্য উৎপাদন ও ভেজাল প্রতিরোধে বিশেষ ব্যবস্থা

খাদ্যের গুণগত মান বাড়ানোর লক্ষ্যে পুষ্টিনীতি চূড়ান্ত

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ১৮ জানুয়ারি ২০১৬

খাদ্যের গুণগত মান বাড়ানোর লক্ষ্যে পুষ্টিনীতি চূড়ান্ত

নিখিল মানখিন ॥ জাতীয় পুষ্টিনীতি-২০১৫ চূড়ান্ত করেছে সরকার। পুষ্টি নীতিতে পুষ্টি কার্যক্রম বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য, কৃষি, খাদ্যসহ আটটি মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন সংস্থাসমূহের সমন্বয়ে নতুন কার্যক্রম এবং কৌশল গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে। অপুষ্টির বিভিন্ন কারণ চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে জনগণের যথাযথ পুষ্টি নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হবে। নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন এবং ভেজাল খাদ্য প্রতিরোধে গ্রহণ করা হবে বিশেষ ব্যবস্থা। হাসপাতাল ও জনস্বাস্থ্য পুষ্টি কার্যক্রমে মাঠ পর্যায়ে পুষ্টিবিদ নিয়োগ করা হবে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সর্বনিম্নস্তর বিশেষ করে কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন উপকেন্দ্র, পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে পুষ্টিসেবা প্রদানের উপযোগী করে তোলা হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পুষ্টিশিক্ষা কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও শক্তিশালী করা হবে বলে পুষ্টিনীতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। জাতীয় পুষ্টিনীতি বাস্তবায়ন হলে দেশে পুষ্টিমানের উন্নয়ন ঘটবে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমরা এখন পুষ্টিতে সমৃদ্ধ হতে চাই। নিরাপদ ও সুষম খাদ্য নিশ্চিত হবে। খাদ্যের গুণগত মান বাড়বে। এক সময় ক্ষুধা-দারিদ্র্যের দেশ ছিল বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ওই অধ্যায় থেকে আমরা মুক্তি পেয়েছি। আমরা এখন আত্মবিশ্বাসী জাতিতে পরিণত হয়েছি। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ায় মানুষ এখন পুষ্টিমান খাবারের দিকে নজর দিতে পারছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। পুষ্টিনীতিমালা কার্যকর হলে দেশের মানুষের শারীরিক ও মানসিক অবস্থারও ব্যাপক উন্নতি পুষ্টিনীতিতে বলা হয়েছে, ১৯৯৭ সালে জাতীয় ও পুষ্টিনীতি তৈরি হওয়ার পর গত দুই দশকে বাংলাদেশের পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে। তার পরও অনেক ক্ষেত্রে পুষ্টির স্তর কাক্সিক্ষত পর্যায়ে উন্নীত হয়নি। মানবিক, সামাজিক ও জাতীয় উন্নয়নের জন্য অপুষ্টি দূর করা জরুরী। দেশব্যাপী শহর ও গ্রামে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের ওজনাধিক্য, স্থ’ূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হার্ট এ্যাটাক, স্ট্রোক, ক্যান্সার ও অস্টিওপোরোসিস (নরম হাড়) বর্তমানে পুষ্টিজনিত সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। শারীরিক সক্রিয়তার ঘাটতি, কায়িক শ্রমে অনীহা, ত্রুটিপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস এবং অলস জীবনযাপন এর জন্য দায়ী। পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতিকল্পে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ, কৌশলপত্র তৈরি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নÑ এসবের প্রতিটি ক্ষেত্রে নতুন প্রামাণিক তথ্য রয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে ‘বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টিনীতি-২০১৫’ তৈরির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এই পুষ্টিনীতি সরকারের গৃহীত স্বাস্থ্য, খাদ্য, কৃষি , পরিবেশ ও শিক্ষাসহ অন্যান্য জাতীয় নীতির পরিপূরক হিসেবে বাস্তবায়িত হবে। বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভা কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অনুমোদনক্রমে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ‘বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টিনীতি-২০১৫’ চূড়ান্ত করেছে। পুষ্টিনীতিতে আরও বলা হয়েছে, জাতীয় পুষ্টিনীতির লক্ষ্য জনগণের বিশেষত মা, কিশোরী ও শিশুসহ বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর পুষ্টি অবস্থার উন্নতিসাধন করা, অপুষ্টি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা এবং জীবনের মান উন্নয়নের মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা। বর্তমানে প্রক্রিয়াজাত ও বাণিজ্যিক খাবারের বিজ্ঞাপনের প্রভাবে মানুষের বিশেষ করে শিশুদের খাদ্যাভ্যাস বিপজ্জনকভাবে হুমকির মুখে। ফলে স্থূলতা, ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদী অসংক্রামক ব্যাধি মহামারী আকার ধারণ করেছে। এসব প্রক্রিয়াজাত ও বাণিজ্যিক খাবারের অবাধ বাজারজাতকরণ এবং বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে হাতে নেয়া সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন প্রণালীতে উৎসাহ প্রদান করা হবে। গ্রাম ও শহরের দারিদ্র্যপীড়িত এলাকাসমূহে ও পুষ্টি জরিপ দ্বারা চিহ্নিত দুর্গম এলাকাসমূহে বসবাসরত মানুষের, যাদের খাদ্যপ্রাপ্তির সুযোগ খুব সীমিত ও যারা উপার্জনক্ষম নয়, তাদের উদ্দেশ্যে পুষ্টি কার্যক্রম গ্রহণ নিশ্চিত করা হবে। বৈচিত্র্যপূর্ণ ও পর্যাপ্ত পরিমাণে মানসম্পন্ন নিরাপদ খাদ্য ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস নিশ্চিত করা হবে। প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, অতিরিক্ত লবণ, সম্পৃক্ত চর্বি, ট্রান্স ফ্যাট পরিহারে জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে বিশেষ আচরণ পরিবর্তন যোগাযোগ কার্যক্রম হাতে নেয়া হবে। স্থানীয় ও দেশীয় প্রজাতির শস্য, ফল ও সবজি চাষের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। প্রবীণ জনগোষ্ঠীর জন্য শক্তি, আমিষ ও অণু পুষ্টিকণা সমৃদ্ধ খাবারের প্রাপ্ত্যতা নিশ্চিত করা হবে। পুষ্টি শিক্ষা, পরামর্শ, তথ্যের মাধ্যমে আচরণ পরিবর্তন করার উদ্যোগ নেয়া হবে। খাদ্যে ভেজাল রোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ আইনের প্রয়োগ জোরদার করা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গতি রেখে খাদ্য নিরাপত্তা, জীবিকা, রোগ-ব্যাধি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদির খাওয়া খাওয়ানোর উদ্যোগসহ আরও বেশ কিছু পুষ্টি উন্নয়ন কর্মকৌশলের বিষয়সমূহ উল্লেখ করা হয়েছে পুষ্টিনীতিতে। পুষ্টির সঙ্গে মানুষের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার বিভিন্ন যোগসূত্র উল্লেখ করে পুষ্টিনীতিতে আরও বলা হয়েছে, পুষ্টি প্রতিটি মানুষের প্রয়োজনীয় শারীরিক বৃদ্ধি, মানসিক বিকাশ ও অটুট স্বাস্থ্যেও গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। পুষ্টির অভাবে মাতৃগর্ভে শিশুর কাক্সিক্ষত বৃদ্ধি ঘটে না।
×