এই জগতের সবচেয়ে বেশি বিচিত্র হলো মানুষের জীবন। কখন আপনার জীবনে কি ঘটবে তা বোঝার উপায় নেই। আপনি যতই বিদ্যান বা কৌশল আয়ত্ত করে চলেন না কেন, হঠাৎ করেই কোন কারণে আপনার জীবনে খারাপ কিছু হতে পারে। তবে এই খারাপ কিছুকে অতিক্রম করে ভালভাবে বেঁচে থাকার নামই হলো জীবন।
সবাই ভাল থাকতে চায়। কিন্তু ভাল থাকতে যা করতে হয় তা সবাই করতে চায় না। আসুন জেনে নেই একটু ভাল থাকার কিছু সহজ উপায় :
** আজকের জন্য ভাল থাকুন : আপনি আগামী দিনের চিন্তা ত্যাগ করুন। কারণ আগামীকালই তার ভার নিবে। জন হপকিন্স স্কুল অব মেডিসিনের পরিচালক এবং অক্সফোর্ডের রেজিয়াস অধ্যাপক স্যার উইলিয়াম অসলার। তিনি তাঁর ছাত্রদের উদ্দেশে এক ভাষণে বেলন : অস্পষ্টতায় ভরা দূরের কিছুর চেয়ে স্পষ্ট কিছুই দেখা আমাদের দরকার। তিনি আরও বলেন, অতীতকে রুদ্ধ কর। অতীতকে সমাধি দিয়ে দাও, অতীদের কথা ভেবে অনেক মূর্খই মরেছে। ভষিষ্যতের ভারের সঙ্গে অতীতের বোঝা যুক্ত হয়ে আজকের বোঝা বড় হয়ে উঠে মানুষের মুক্তির দিন হলো আজ। মানুষ অতীত এবং ভবিষ্যতের কথা ভেবে শক্তিহীন, মানসিক দুশ্চিন্তা ও স্নায়ু দুর্বলতায় ভোগে। অতএব অতীত এবং ভবিষ্যতের কথা না ভেবে আজকের দিন নিয়েই ভাবতে চেষ্টা কর।
ড. অসলার কি তবে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি থাকতে বারণ করেছেন? না কখনই না। তবে ঐ ভাষণে তিনি বলেছেন, ভবিষ্যতের জন্য তৈরি হওয়ার সেরা পথ হলো সমস্ত বুদ্ধি, ক্ষমা আর আগ্রহ নিয়ে আজকের দিনের কাজ করে যাওয়া। কারণ আপনি অতীত এবং ভবিষ্যত ভাবলে ভাল থাকতে পারবেন না। বরং আজকের দিনটাও নষ্ট হয়ে যাবে। মনে রাখবেন বুদ্ধিমান মানুষের কাছে প্রতিটি দিনই নতুন জীবন।
এ সম্পর্কে রোমান কবি হোরেস লিখেছিলেন :
সেই মানুষই সবার চেয়ে সুখী
যিনি আজকের দিনকে নিজের বলতে পারেন;
তিনিই শ্রেষ্ঠ যিনি বলেন :
আগামীর বিপদকে ভয় করি না কারণ আমি আজ বেঁচেছি।
** দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকুন : ভাল থাকতে হলে আপনাকে অবশ্যই দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকতে হবে। আর দুশ্চিন্তাকে এড়িয়ে চলার সহজ উপায় হলো : জীবনে যা ঘটবে এবং যা ঘটে গেছে তা মেনে নেয়া। কারণ ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোকে মেনে নিলেই দুর্ভাগ্যকে অতিক্রম করা যায়।
এ সম্পর্কে ড. অ্যালেক্সিস ক্যারেল বলেছিলেন : “যে মানুষ জানে না দুশিন্তা কিভাবে দূর করতে হয়। তাদের অল্প বয়সেই মৃত্যু হয়। অতএব ভাল থাকতে যেভাবেই হোক দুশ্চিন্তাকে এড়িয়ে চলুন।
** নিজের মাঝে ডুব দিন, সুখ পাবেন : “মানুষ ভাবে কি পেলাম না” কি হতে পারতাম” এই কথা বার বার না ভেবে আপনি কি পেয়েছেন তাই নিয়ে সুখী হতে চেষ্টা করুন।
এক ভদ্রলোক জীবনে প্রতিষ্ঠত হয়েও তাঁর দুঃখ ছিল তিনি যা চেয়েছেন তা পাননি। এ নিয়ে তিনি মন খারাপ করে রাখতেন। ভেবে তার কষ্ট দূর করলেন এই ভাবে : একদিন আমার পায়ে জুতা ছিল না বলে আমি মন খারাপ করে হাঁটছিলাম। কিন্তু সেই দুঃখ দূর হয়ে গেল যখন দেখতে পেলাম একটা লোকের দুটো পা-ই নেই। মনে রাখবেন, সুখ কখনও খুঁজে পাওয়া যায় না। এটা নিজেকেই তৈরি করে নিতে হয়। কারণ সুখ থাকে মানুষের মনের মাঝে অনুভূতিতে।
** স্রষ্টার কাছে নত হন : মানুষের খারাপ স্বভাবগুলোর মধ্যে একটি হলো, মানুষ বিপদে না পড়লে ঋণ স্বীকার করে না। মানুষ সব সময়ের জন্য তার সৃষ্টিকর্তার কাছে ঋণী কিন্তু এই ঋণ স্বীকার করার মতো সময় মানুষ পায় না। (তবে সব মানুষ কিন্তু এমন নয়) মানুষ যখন বিপদে পড়ে তখন কেঁদে মরে তার উদ্দেশ্যে। অথচ, শুধু বিপদের সময় নয়। মানুষ যদি তার সৃষ্টিকর্তাকে মন দিয়ে সব সময় ডাকে, তবে মানুষের জীবনটা সর্বদিক দিয়ে শান্তিপূর্ণ হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। জীবনকে সর্বাধিক সুন্দর করতে হলে স্রষ্টার কাছে নত হওয়া আর মুক্তি চাওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই।
সবসময় মনে প্রাণে বিশ্বাস রাখবেন, সৃষ্টিকর্তার প্রতি প্রার্থনা মানুষকে বড় শক্তি দান করে। প্রার্থনা এমন একটি শক্তি যার দ্বারা মানুষ শুধু উপকৃতই হয়ে থাকে। ধর্মের প্রতি অগাধ বিশ্বাস মানুষের মনে শান্তি আনে। প্রশান্তি লাভ করে। মানুষ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তাই বলছি বেশি বেশি প্রার্থনা করুন সৃষ্টিকর্তার প্রতি।
মানুষের একটি স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য হলো, কাছের মানুষের কাছে বেশি বেশি প্রত্যাশা করে। এই প্রত্যাশা পূরণ না হলে সে মনে কষ্ট পায়। তাই অন্যের কাছে বেশি আশা না করে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী অন্যদের আশা বেশি করে পূরণ করতে চেষ্টা করুন। এতে ভাল থাকতে পারবেন। আপনি অন্যের ধন-সম্পদ, গাড়ি-বাড়ি দেখে কখনই ভাববেন না এগুলো আমার নেই কন? অন্যদের কিছু দেখে আপসোস করবেন না। বরং আপনি তাদেরকেই দেখুন যারা আপনার চেয়েও অনেক খারাপ অবস্থায় আছে। এতে আপনি ভাল থাকবেন।
আপনি যে কাজই করেন না কেন, খেয়াল রাখবেন কাজের প্রতি যেন বিরক্তি চলে না আসে। তাই মাঝে মাঝে কাজের বিরতি দিয়ে ঘুরে আসুন নতুন কোথাও থেকে। এতে কাজের গতিও বেড়ে যাবে। মনও ভালো থাকবে।
সর্বোপরি, ভাল থাকার জন্য নিজের সম্পর্কে ভাল করে জানুন। আপনার যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুযায়ী সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে যতটুকু পেয়েছেন তাই নিয়ে সন্তুুষ্ট থাকার চেষ্টা করুন। এতে ভাল থাকতে পারবেন ইনশাাল্লাহ্।
ছবি : আরিফ আহমেদ
মডেল : শ্রাবণ্য
শীর্ষ সংবাদ: