ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

১৭ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমি সেচের আওতায় আনা হয়নি

পাবনা সেচ প্রকল্প ॥ সুবিধাবঞ্চিত কৃষক

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ৭ জানুয়ারি ২০১৬

পাবনা সেচ প্রকল্প ॥ সুবিধাবঞ্চিত কৃষক

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা, ৬ জানুয়ারি ॥ প্রায় এক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন (আইআরডি) প্রকল্পের সেচ ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ফলে কৃষক পাচ্ছেন না কাক্সিক্ষত সেচ সুবিধা। প্রতিবছরই কমছে সেচের জমির পরিমাণ। প্রকল্প এলাকায় ১৮ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা প্রদান করে বছরে এক লাখ ৯১ হাজার মেট্রিক টন অতিরিক্ত ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ১৯৯২ সালে প্রকল্পটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয়। কিন্তু গত ২৪ বছরে প্রকল্পের কমান্ড এরিয়া বেড়া-সাঁথিয়ায় প্রায় ১৭ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমি সেচের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। ফলে কাক্সিক্ষত সেচ ও ফসল উৎপাদন এখন শুধুই কল্পনা বিলাসে পরিণত হয়েছে। প্রকল্প এলাকার কৃষকরা অভিযোগ করেছেন, দেশে গত ১ ডিসেম্বর থেকে বোরো মৌসুমে শুরু হয়েছে। পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের কমান্ড এরিয়া বেড়া-সাঁথিয়া উপজেলায় গত মৌসুমে বোরোর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই হাজার হেক্টর জমি। আবাদ হয়েছিল ৮০০ হেক্টরে। চলতি মৌসুমে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র এক হাজার ৩৫০ হেক্টর। আর প্রতিবছরই প্রকল্পে সেচের জমির পরিমাণ কমছে। কমান্ড এরিয়ার সেচ ক্যানেলের ক্ষতিগ্রস্ত ডাইক বাঁধ আজ পর্যন্ত সংস্কার বা মেরামত করা হয়নি। ফলে প্রকল্প থেকে পর্যাপ্ত সেচ সুবিধা পাওয়া যাবে কি-না, তা নিয়ে কৃষকদের মধ্যে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। সেচ প্রদানের ব্যাপারে বেড়া পাউবো কর্তৃপক্ষের কোন তৎপরতাই নেই। সংশ্লিষ্ট কৃষকরা ক্ষোভের সঙ্গে জানান, পাবনা সেচ প্রকল্পটি মূলত ইরিগেশন প্রকল্প। আর ইরিগেশনের সুবিধার্থেই বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বেড়ায় ডিভিশন অফিস স্থাপন করে। পাবনা ইরিগেশন প্রকল্পটি বেড়া পানি উন্নয়ন বিভাগের কিছু দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদের কাছে সোনার ডিম পাড়া হাঁসে পরিণত হয়েছে। এ প্রকল্পের কল্যাণে তাদের অনেকের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু সেচের মাধ্যমে অধিক ফসল উৎপাদন করে কৃষকদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। প্রকল্পটি চালুর পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে সেচ ক্যানেল, নিষ্কাশন ক্যানেল ডাইক বাঁধ মেরামত, সংস্কার ও পুনরাকৃতিকরণ কাজের নামে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। ডিজাইন অনুযায়ী সঠিকভাবে অবকাঠামো নির্মাণ না করায় মূলত প্রকল্পটি অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ফলে বর্তমান অবকাঠামোতে এ প্রকল্পে সেচ ও ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন আদৌ সম্ভব হবে না বলে বেড়া পানি উন্নয়ন বিভাগের দায়িত্বশীল একাধিক প্রকৌশলী জানিয়েছেন। বেড়া পাউবো সূত্রে জানা যায়, ১৯৮০ সালে পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে ১৯৯২ সালে শেষ হয়। প্রকল্পের আওতাভুক্ত এক ফসলী জমি তিন ফসলীতে রূপান্তর এবং ১৮ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা প্রদান করে এক লাখ ৯১ হাজার মেট্রিক টন অতিরিক্ত ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বিগত ২৪ বছরে এ লক্ষ্যমাত্রার আট ভাগও অর্জিত হয়নি। কারণ প্রকল্পের কমান্ড এরিয়া বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলায় প্রায় ১৭ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমি আজ পর্যন্ত সেচের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। ফলে কমান্ড এরিয়ার কৃষকরা নিজ উদ্যোগে সেচযন্ত্র স্থাপন করে জমিতে ফসল উৎপাদন উদ্যোগ নিয়েছে। এ ব্যাপারে বেড়া পানি উন্নয়ন বিভাগ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। প্রকল্পের সেচ ক্যানেলগুলো দিন দিন অকার্যকর হয়ে পড়ায় কৃষকরা সেচ সুবিধা পাচ্ছে না। মিঠামইনে হাজার একর জমি পতিত নিজস্ব সংবাদদাতা, কিশোরগঞ্জ থেকে জানান, হাওড় অধ্যুষিত মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া হাওড়, চমকপুর হাওড় ও হোসেনপুর হাওড়ে চলতি বোরো মৌসুমে প্রায় ২ হাজার একর আবাদযোগ্য কৃষিজমি পতিত রয়েছে। সেচ সুবিধা না থাকার কারণে এসব জমি পতিত রয়েছে বলে জানা গেছে। এ অঞ্চলের একমাত্র হাঁটুরিয়া নদীটি বোরো মৌসুমে সেচের সময় প্রায়ই শুকিয়ে যায়। স্থানীয় কৃষকরা দীর্ঘদিন ধরে নদী খননের দাবি করে আসছিলেন। গত কয়েক বছর ধরে হাঁটুরিয়া নদী শুকিয়ে গো-চারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। প্রতি মৌসুমে নদী শুকিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় চলতি বছর কৃষকরা হাওড়ে বোরো চাষাবাদ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। এ বছর বীজতলাসহ জমিতে কোনো চাষাবাদ করা হয়নি। গত বছর সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাসহ স্থানীয় প্রশাসন নদীটি কয়েকবার পরিদর্শন করেন। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের নির্দেশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি ড্রেজার এনে নদী খনন কাজের উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু ৬ কিলোমিটার নদীটি খনন কাজ শুরু করা হলেও কৃষকের মনে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। খনন অবস্থায় পানি আবারও শুকিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় নিজের জমি পতিত রেখে কৃষকরা এখন জীবিকার তাগিদে দেশের বিভিন্ন স্থানে কাজের সন্ধানে ছুটছে বলে জানা গেছে।
×