ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শীঘ্রই ৫ বছর মেয়াদী চুক্তি

বড় অঙ্কের অনুদান দিচ্ছে সুইডেন

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ৫ জানুয়ারি ২০১৬

বড় অঙ্কের অনুদান দিচ্ছে সুইডেন

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ বাংলাদেশকে বড় অঙ্কের অনুদান দিচ্ছে সুইডেন। এর পরিমাণ হতে পারে প্রায় এক হাজার ৪ শ’ ৮ কোটি টাকা। আগামী পাঁচ বছরে এ অনুদান সহায়তা করবে দেশটি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ও সুইডেনের মধ্যে উন্নয়ন সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে হতে যাচ্ছে শীঘ্রই। তবে দেশটি কত টাকা দেবে তা এখনও নিশ্চিত করেনি। সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, অতীতের মতোই তাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। এ বিষয়ে সুইডেন ডেস্কের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে জানান, একটি আমব্রেলা চুক্তি হবে। এ চুক্তির আওতায় পরবর্তীতে প্রকল্পভিত্তিক অনুদান সহায়তা দেবে সুইডেন। এ কারণে সুনির্দিষ্ট করে টাকার অঙ্ক না জানালেও ধারণা করা হচ্ছে অতীতের মতো ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন এইইকে (সুইডিস কোনাল) বা ১৪ শ’ ৮ কোটি টাকার মতোই হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত ২৮ ডিসেম্বর এগ্রিমেন্ট বিটুইন সুইডেন এ্যান্ড বাংলাদেশ অন ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন শীর্ষক একটি চুক্তি স্বাক্ষরের কথা থাকলেও পরবর্তীতে জানানো হয় সেদেশের ক্যাবিনেটে অনুমোদন না হওয়ায় কিছুটা দেরি হবে। তবে আশা করছি, শীঘ্রই তারিখ জানা যাবে। এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন ও বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত জোহার ফ্রাইসেল। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্র জানায়, সুইডেন বাংলাদেশের অন্যতম সহযোগী। তারা অনুদান দিয়ে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখছে। গত পাঁচ বছরে প্রতিবছর ২৮০ কোটি টাকা (২৩৫ মিলিয়ন এসিকে) অনুদান সহায়তা দিয়ে আসছে সুইডেন। মাল্টি ডোনার ট্রাস্ট ফান্ডের মাধ্যমে সুইডেন দেশের প্রাথমিক শিক্ষা, কর্মজীবী শিশুদের শিক্ষা স্বাস্থ্যসহ বেশ কয়েকটি খাতে এ অনুদান সহায়তা দিচ্ছে। বর্তমানে দেশের অর্থনীতিতে দাতাদের অনুদানের পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে সুইডেনে বড় অঙ্কের অনুদান একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা বলে মনে করছে পরিকল্পনা কমিশন। কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, অনুদান যত পাওয়া যাবে ততই ভাল। এটি আমাদের জন্য দরকার। তবে সাধারণত যেসব দেশ অনুদান দেয় তারা কারিগরি সহায়তার ক্ষেত্রে অনুদান দিয়ে থাকে। এটি আরও ভাল। কেননা অনেক বিষয়ে আমাদের প্রযুক্তি সক্ষমতা থাকে না। যেমন ডেল্টা প্ল্যান বিষয়ে বাংলাদেশের কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। কিন্তু নেদারল্যান্ডস্ অনুদান দিয়ে এ বিষয়ে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন আমাদের জ্ঞানের পরিধি বাড়ছে, অন্যদিকে পরিকল্পনাটিও তৈরি হচ্ছে। অনুদানের আর একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে দেশ বা সংস্থা অনুদান দেয় তারা সাধারণ পরামর্শক ও দিয়ে থাকে। এটিও খারাপ কিছু নয়। আমাদের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। ইআরডি জানায়, উন্নয়ন প্রকল্পে বাড়ছে বৈদেশিক অর্থের ব্যবহার। চলতি অর্থবছরের চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থ ছাড় বেড়েছে। এ সময়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে তারা ছাড় করেছে ৭৩ কোটি ১৪ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। যা, গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬৯ হাজার ৯৪ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার। এ সময়ে সর্বোচ্চ অর্থ ছাড় করেছে বিশ্বব্যাংক। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে আগের তুলনায় দিন দিন সক্ষমতা বাড়ার কারণেই অর্থছাড় বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আগামী অর্থবছরগুলোতে বৈদেশিক সহায়তা আরও অনেক বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছে ইআরডি। সংস্থাটির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, গত ১৫Ñ১৬ নবেম্বর অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের বৈঠক (বিডিএফ) বৈঠকে ব্যাপক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে সরকারের সঙ্গে উন্নয়নে এক সঙ্গে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে উন্নয়ন সহযোগীরা। বিডিএফ বৈঠকের বিভিন্ন আলোচনায় কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন, অবকাঠামো, সুশাসন, স্বাস্থ্য, মানসম্মত শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা এবং উন্নয়নের মূল ধারায় জেন্ডার সমতা আনয়ন ইত্যাদি খাতে সুনির্দিষ্ট মতামত ও যৌথ ইস্তেহার ঘোষণা করা হয়। সেই সঙ্গে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়র লক্ষ্যসমূহ এবং টেকসই উন্নয়নে সরকার ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাসমূহের মধ্যে অংশীদারিত্ব তৈরির অঙ্গীকার করা হয়েছে। বৈদেশিক অর্থ ব্যবহার বৃদ্ধির বিষয়ে ড. জাহিদ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, গত তিন বছর ধরে প্রতিবছর বিশ্বব্যাংকের ডিসবাসমেন্ট তার আগের বছরের চেয়ে বেশি হয়েছে। এক্ষেত্রে যেটি হয়েছে সেটি হচ্ছে চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের ওপর মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। ডোনার এবং সরকার উভয় পর্যায়েই এটি করা হয়েছে। যেমন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের প্রকল্পগুলোতে একাধিক দাতা যুক্ত ছিল। এক্ষেত্রে একটি দাতা বেশি অর্থছাড় করলেতো হবে না। সবার অর্থছাড় থাকতে হবে। এজন্য যেসব প্রকল্পের অর্থছাড়ে সমস্যা ছিল সেগুলো বিষয়ে প্রতিমাসে ডোনার ও সরকারী পর্যায়ে টেকনিক্যাল লোকজন প্রথমে বৈঠক করতেন। সেখানে সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানে করণীয় নির্ধারণ করা এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কে তাকে চিহ্নিত করা হতো। আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের একটি এ্যাকশন প্ল্যান করা হতো। পরের মাসের মিটিংয়ে আবার এগুলোর ফলোআপ করা হতো। যদি দেখা যেত সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তখন প্রতি তিন মাসে উচ্চ পর্যায়ের (সচিব) একটি বৈঠক করা হতো। সেখানে প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীকে আমন্ত্রণ করা হতো। এভাবে সমস্যা সমাধান করা হতো। তিনি আরও বলেন, আগে বৈঠক ডাকলে মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের কেউ আসতেন না। ওই সময় সমস্যা চিহ্নিত হলোও ওই পর্যন্তই থাকত। সমাধান হতো না। কিন্তু এখন সমস্যা সমাধানে সবার আন্তরিকতা ও গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ার ফলেই বৈদেশিক অর্থ ছাড় বাড়ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের সক্ষমতা আগের চেয়ে বাড়ছে।
×