বিশেষ প্রতিনিধি ॥ দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদ দিলে সারাদেশে পৌর নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলে দাবি করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। অতীতের যেকোন স্থানীয় নির্বাচনের তুলনায় এবারের পৌর নির্বাচনে সহিংসতাও কম হয়েছে বলেও দাবি করেছে দলটি। জনগণের প্রদত্ত রায় মেনে নিতে সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানানোর পাশাপাশি নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত মাঠে থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য বিএনপিকেও ধন্যবাদ জানিয়ে আওয়ামী লীগ বলেছে, গণতন্ত্রের জন্য এ নির্বাচন মাইলফলক হয়ে থাকবে।
নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষে বুধবার সন্ধ্যায় ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল- আলম হানিফ। এছাড়া দিনভরই দফায় দফায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিএনপির বিভিন্ন অভিযোগ খ-ন করেছে আওয়ামী লীগ।
‘১৫৭টি ভোট কেন্দ্রে ভোট কারচুপি হয়েছে- বিএনপির এমন অভিযোগের জবাবে হানিফ বলেন, অতীতে স্থানীয় নির্বাচনে অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটলেও এ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে। ১৫৭টি কেন্দ্রে বিএনপির কোন জয়লাভের সম্ভাবনা নেই বলেই এ ধরনের অভিযোগ তুলেছে। তিনি বলেন, সারাদেশের ৩৫শ’ কেন্দ্রের মধ্যে বিএনপি মাত্র ৬০টি কেন্দ্র নিয়ে অভিযোগ তুলেছে বলে আমি জানি। বিএনপির অভিযোগ যদি সত্যও হয় তাহলে বলা যেতে পারে এ সংখ্যাটি অত্যন্ত নগণ্য, যা শতকরা ৩ ভাগও হয় না। তাই এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা।
এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, আমাদের কাছে নির্ভরযোগ্য সূত্রের তথ্য আছে, যে সব জায়গায় বিএনপির প্রার্থীরা জয়লাভ করতে পারবে না, সেই সব জায়গায় পোলিং এজেন্টদের নির্বাচনের ফলাফলের তালিকায় স্বাক্ষর না করতে বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশ রয়েছে। অতীতের যেকোন সময়ের তুলনায় নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে। আর কিছু কিছু জায়গায় বিএনপি-জামায়াত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে।
হানিফ অভিযোগ করেন, নির্বাচন, নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করাই ছিল বিএনপির মূল উদ্দেশ্য। তারা প্রথম থেকেই এ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল এবং এ নির্বাচনকে তারা ষড়যন্ত্র হিসেবে নিয়েছে। বিএনপির এ ষড়যন্ত্র নস্যাত করে দিয়ে ভোট দেয়ার জন্য জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, অতীতের বিভিন্ন নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়েছিল তারা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকার জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমি বিএনপিকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
নির্বাচনে কেন্দ্র দখল ও ভোট কারচুপির বিএনপির অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, নির্বাচন শেষ হয়েছে, এর ফলাফল এখনও আমরা জানি না। তবে এ নির্বাচনের ফলাফল প্রমাণ দেবে, দেশবাসী উন্নয়নের পক্ষে না সন্ত্রাস-জ্বালাও-পোড়াও-এর পক্ষে। বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি-জামায়াত তাদের কাউন্সিলর প্রার্থীদের দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে, কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং নির্বাচন কমিশনের শক্তিশালী ভূমিকার কারণে তাদের এ চক্রান্ত ব্যর্থ হয়েছে।
হানিফ বলেন, নির্বাচনে জয়-পরাজয় যাই হোক আমরা মেনে নিতে প্রস্তুত আছি। আমরা আশাবাদী, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে নির্বাচনের ফলাফল এবং জনগণের প্রদত্ত রায় অংশগ্রহণকারী সকল দলই মেনে নেবে। দু’একটি গণমাধ্যমে আগের রাত থেকে নির্বাচনের ব্যালটে সিল মারা, ছিনতাই এর সংবাদ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব সংবাদ তথ্য নির্ভর নয়, অতিরঞ্জিতভাবে সংবাদ মাধ্যমে এসেছে। কেন করা হয়েছে সেটা আপনারাই (সাংবাদিক) বলতে পারবেন। তিনি সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত সকলকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান।
বিএনপির ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে- খালিদ ॥ এর আগে দুপুরে আরেক দফা সাংবাদিক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে আওয়ামী লীগ গত কয়েকদিন ধরে যে কথাগুলো বলেছে আজ (বুধবার) সকালে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তা সত্য হয়েছে। কারণ বিএনপি এর আগে যে প্রতিনিয়ত মিথ্যাচার করেছে সেটা প্রমাণিত হয়েছে।
বিএনপির অভিযোগের জবাব দিতে তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে খালিদ আরও বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। এ নির্বাচন নিয়ে আমাদের সাধারণ সম্পাদকও বলেছেন এতে ক্ষমতা পরিবর্তন হবে না। আমরা দেশে স্থিতিশীলতা চাই, সুষ্ঠু পরিবেশ চাই। কিন্তু বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে নস্যাত করা এবং বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্যই বিএনপি এ নির্বাচনকে ঘিরে নানা ষড়যন্ত্র করেছিল। কারণ তাদের উদ্দেশ্য নির্বাচন করা নয়। নির্বাচন কেন সুষ্ঠু হচ্ছে, নির্বাচনী পরিবেশ কেন বজায় আছে- এটাই হচ্ছে বিএনপির মনে কষ্ট। দেশের জনগণ উৎসবমুখর পরিবেশে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়েছে। তাই বিএনপি যতই ষড়যন্ত্র করুক না কেন, আমাদের বিশ্বাস দেশের মানুষ ইতিহাস, উন্নয়ন ও অগ্রগতির সঙ্গেই থাকবে। নৌকার সঙ্গে থাকবে, আওয়ামী লীগের সঙ্গেই থাকবে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: