ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

টানা বৃষ্টিতে মিরসরাইয়ে পানিবন্দি হাজারো মানুষ, ভেসে গেছে মাছের খামার

ফিরোজ মাহমুদ, মিরসরাই, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ১৮:০০, ১৭ জুন ২০২৫

টানা বৃষ্টিতে মিরসরাইয়ে পানিবন্দি হাজারো মানুষ, ভেসে গেছে মাছের খামার

গত দুই দিনের টানা ভারি বর্ষণে আবারও চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার একাধিক নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। খৈয়াছড়া, ওসমানপুর, মায়ানী ও পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের বহু এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে ঘরবাড়ি ও ফসলি জমিতে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

সোমবার (১৬ জুন) রাতভর টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের ফলে খৈয়াছড়া ইউনিয়নের ফেনাপুনি ও দুয়ারু, মায়ানী ইউনিয়নের পূর্ব মায়ানী ও পৌরসভার ২ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। বিশেষ করে পাহাড়ি ঢলের তীব্র স্রোতে দুয়ারু গ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ভেঙে যায়, যার কারণে ওই এলাকার যোগাযোগব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা নাদিম মাহমুদ বলেন, “কিছুদিন আগেই রাস্তাটা ভেঙেছিল। এবার আবার পাহাড়ি ঢলের পানিতে পুরো রাস্তা খালে পরিণত হওয়ার পথে। দ্রুত সংস্কার না করলে রাস্তাটা পুরোপুরি চলে যাবে।”

অপরদিকে, ওসমানপুর ইউনিয়নে চর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট প্রজেক্ট (সিডিএসপি)-এর আওতায় নির্মিত বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় ভেসে গেছে শত শত মাছের খামার। স্থানীয় কৃষক ও খামারিরা বলছেন, এই ক্ষতি থেকে উঠে দাঁড়ানো তাদের পক্ষে খুব কঠিন হবে।

স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন জানান, “সিডিএসপি’র ১১.৫ কিলোমিটার বাঁধ এই বর্ষণে ধসে পড়েছে। এতে কয়েক হাজার একর মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। এই বাঁধ আমাদের একমাত্র ভরসা ছিল।”

এছাড়া করেরহাট ইউনিয়নের অলিনগর এলাকায় বিএডিসি'র আওতায় তিলকের খাল খননের পর থেকে এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, খাল খনন প্রকল্পটি ছিল একেবারেই অপরিকল্পিত। ফলে খালের পাশের বাড়িঘর, রাস্তা এবং ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়েছে।

মিরসরাই পৌর এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ মামুন জানান, “আগে এমন বৃষ্টি হলেও পানি জমতো না। কিন্তু এখন সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তাঘাট ডুবে যায়। মানুষ নিজের ইচ্ছেমতো ঘর বানাচ্ছে, ড্রেন বন্ধ করে ফেলেছে। এজন্য জলাবদ্ধতা হচ্ছে।”

এদিকে আবুতোরাব-গোভনিয়া খালের পানিতে তলিয়ে গেছে আবুতোরাব-বড়তাকিয়া সড়ক। সরকারটোলা এলাকায়ও অনেক বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে।

মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, “এখন পর্যন্ত আউশ ধান ও সবজির বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি। তবে বৃষ্টি যদি আরো কয়েকদিন অব্যাহত থাকে, তাহলে চাষাবাদে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।”

মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোমাইয়া আক্তার জানান, “বৃষ্টিতে উপজেলার কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতার খবর পেয়েছি। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র ও কর্মহীন মানুষদের তালিকা তৈরি করছি। দ্রুত তাদের মধ্যে খাদ্য সহায়তা বিতরণ করা হবে।”

স্থানীয়রা বলছেন, টেকসই বাঁধ, পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং পাহাড়ি পানি প্রবাহের পথ খোলা না রাখলে এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মিলবে না।

মিমিয়া

×