ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

না ফেরার দেশে চলে গেলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগম

নিজস্ব সংবাদদাতা, কিশোরগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৭:৫৬, ১৭ জুন ২০২৫

না ফেরার দেশে চলে গেলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগম

ছবিঃ সংগৃহীত

জেলার নিকলীর প্রত্যন্ত গুরুই গ্রামে একাত্তরে স্বাধীনতা সংগ্রামে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে রামদা হাতে নিয়ে রুখে দাঁড়ানো বীর মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগম আর বেঁচে নেই।

তিনি আজ মঙ্গলবার (১৭ জুন) সকালে বার্ধক্যজনিত কারণে বাজিতপুর উপজেলার হিলচিয়ার বড়মাইপাড়া (এক আত্মীয়ের বাড়িতে) ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।

বিষয়টি গণমাধ্যমে সখিনা বেগমের ভাগনি ফাইরুন্নেছা আক্তার নিশ্চিত করে জানান, এই নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাকে তিনি শেষ বয়সে দেখাশোনা করতেন।
তিনি আরও জানান, আজ মঙ্গলবার (১৭ জুন) বাদ আসর প্রয়াতের নিজ গ্রাম নিকলী উপজেলার গুরুই স্থানীয় মাঠে তাঁর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে গুরুই এলাকার সামাজিক কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হবে।

এদিকে, নিকলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেহানা মজুমদার গণমাধ্যমকে জানান, বীর মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগমকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, কিশোরগঞ্জের হাওর অধ্যুষিত উপজেলা নিকলীর গুরুই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সখিনা বেগম। তিনি নিঃসন্তান ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের আগেই তাঁর স্বামী কিতাব আলীর মৃত্যু হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর তিনি সশস্ত্র যুদ্ধে নামেন। নিকলীতে তাঁকে দেখভাল করার কেউ না থাকায় তিনি বাজিতপুর উপজেলার হিলচিয়ার বড়মাইপাড়া এলাকায় ভাগনি ফাইরুন্নেছার সঙ্গে থাকতেন।

স্থানীয় কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক কয়েকটি বই থেকে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধের সময় যেসব নারী বীরত্বের সঙ্গে রণাঙ্গনে লড়াই করে সাহসিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম সখিনা বেগম। তাঁর সাহসিকতার কথা এখনো স্থানীয় বাসিন্দাদের মুখে মুখে ফেরে। ১৯৭১ সালে সখিনার ভাগনে মতিউর রহমান সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়ে হানাদার পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের হাতে শহীদ হন। ওই সময় তিনি গুরুই এলাকায় ‘বসু বাহিনীর’ নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে রাঁধুনির কাজ করতেন। কাজের ফাঁকে রাজাকারদের গতিবিধির বিভিন্ন খবর সংগ্রহ করে মুক্তিযোদ্ধাদের জানাতেন। একপর্যায়ে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। পরে কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে আসেন। আসার সময় সেখান থেকে তিনি একটি ধারালো রামদা নিয়ে আসেন। পরে সেই রামদা দিয়ে নিকলীর ৫ রাজাকারকে তিনি একাই কুপিয়ে মারেন। সেই রামদা বর্তমানে ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে এবং নামফলকে সখিনা বেগমের নাম উল্লেখ রয়েছে।

একাত্তরের সাহসিকতা ও বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ সখিনা বেগম ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’র খেতাব পান।

ইমরান

×