ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

স্কুল-মাদ্রাসা ১৪ বার ভাঙনের কবলে

টাঙ্গাইলে যমুনার ভাঙনের আশঙ্কায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পাঁচ শতাধিক পরিবার

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল ॥

প্রকাশিত: ১৭:১৩, ১৭ জুন ২০২৫

টাঙ্গাইলে যমুনার ভাঙনের আশঙ্কায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পাঁচ শতাধিক পরিবার

জ্যৈষ্ঠের মাঝামাঝি সময়ে যমুনায় বর্ষার পানি বাড়লেও আষাঢ়ে তা কমতে শুরু করেছে। যমুনার চিরায়ত রীতি অনুযায়ী ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ পাঁচ শতাধিক পরিবার। আতঙ্কিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে—কাকুয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ গয়লা হোসেন দাখিল মাদ্রাসা, ডেকিয়াবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ গয়লা হোসেন নুরানি মাদ্রাসা, দক্ষিণ গয়লা হোসেন জামে মসজিদ, দক্ষিণ গোলাশন কবরস্থান এবং আব্দুল মান্নান সেতু।

জানা যায়, যমুনায় পানি বাড়লেও ভাঙে এবং কমলেও তীরে ভাঙন শুরু হয়। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাকুয়া ইউনিয়নের ঝাউগাড়া থেকে ওমরপুর দক্ষিণপাড়া পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যমুনার ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে অনেকেই তাদের বসতবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় ৫৩ বছর আগে মরহুমা খায়রুন নেছা নামে এক মহিয়সী নারী দক্ষিণ গয়লা হোসেন দাখিল মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। তখন থেকে এটি ১৪ বার যমুনার ভাঙনের শিকার হয়ে স্থান পরিবর্তন করেছে। বর্তমানে মাদ্রাসাটি ওমরপুর গ্রামে অবস্থিত। সেখানেও রয়েছে ভাঙনের আতঙ্ক। একই এলাকার শিক্ষানুরাগী মৃত হাছেন হাজী প্রতিষ্ঠা করেন ডেকিয়াবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেটিও ১৫-১৬ বার যমুনা নদীর গর্ভে বিলীন হয়েছে। বর্তমানে এটি ওমরপুরে অবস্থিত এবং একইভাবে অনিশ্চয়তায় রয়েছে।

প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে যমুনার বাম তীরে ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙন প্রতিরোধে স্থানীয়রা শুকনো মৌসুমে মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি পালন করে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। কিন্তু প্রশাসনের দিক থেকে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয় না বলে অভিযোগ তাদের।

৯০ বছর বয়সী স্থানীয় বাসিন্দা আমিরুল ইসলাম জানান, তিনি নিজে পাঁচবার নদীভাঙনের শিকার হয়েছেন। এখন ওমরপুর গ্রামে একজনের জমি লিজ নিয়ে বসবাস করছেন। এবারও সে বাড়িটি ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। নতুন করে বাড়ি তৈরির জায়গা বা অর্থ নেই তার।

স্থানীয় আবুল হোসেন বলেন, তিনি এবং তার বাবা মিলে ১৩ বার নদীভাঙনের শিকার হয়েছেন। জমিজমা হারিয়ে বর্তমানে তিনি অন্যের জমি লিজ নিয়ে বসবাস করেন। যমুনার পাশে বাদাম চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

দক্ষিণ গয়লা হোসেন গ্রামের আব্দুল বাতেন বলেন, তার নানার পরিবার ১৪-১৫ বার ভাঙনের শিকার হয়ে এখন টাঙ্গাইল শহরে গিয়ে বাড়ি করেছে। আগে শত শত বিঘা জমি ছিল তাদের, সবই যমুনায় চলে গেছে।

ওমরপুর গ্রামের আইয়ুব আলী বলেন, পানাকুড়া, কেশবমাইজাল, চরপৌলি, উত্তর চরপৌলি, নয়াপাড়া, দশাখা, তেঁতুলিয়া, মাকরখোল, রশিদপুর, চকগোপাল, বারবালা—এমন প্রায় ৩০-৩৫টি গ্রাম মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে যমুনার ভাঙনে। ১৯৮৮ সাল থেকে তিনি যমুনার ভয়াবহ রূপ দেখে আসছেন। নিজের বাড়ি সাতবার সরিয়েছেন।

কাকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন বলেন, তার ইউনিয়নের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ প্রায় ৫০০ পরিবার ভাঙনের আতঙ্কে রয়েছে। ফসলি জমিও নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দ্রুত ভাঙন প্রতিরোধে জিওব্যাগ ফেলার দাবি জানান তিনি।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা আক্তার বলেন, যেসব ইউনিয়নে ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে, সেগুলোর প্রতি বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মতিউর রহমান বলেন, কাকুয়া ইউনিয়নের যেসব এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে, সেখানে প্রতিরোধমূলক কাজের চেষ্টা চলছে। চাহিদা অনেক আগেই পাঠানো হয়েছে, বরাদ্দ অনুমোদনের অপেক্ষায় আছেন তারা। আশা করা যাচ্ছে, ১৫-২০ দিনের মধ্যে বরাদ্দ পাওয়া যাবে।

সজিব

×