
পাবনার ভাঙ্গুরা উপজেলার ৬টি ইউনিয়নসহ চলনবিলের বিস্তীর্ণ এলাকার মাঠে কাঁচা-পাকা ইরি ধান আকস্মিক বর্ষা ও ঢলের পানিতে ডুবে যায়। চলনবিল অঞ্চলের কৃষকের কয়েক হাজার বিঘা জমির ধান তলিয়ে যায় বলে এলাকাবাসী জানান।
সরেজমিন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও স্কিম মালিকদের সঙ্গে কথা বললে তারা দৈনিক জনকণ্ঠের প্রতিনিধিকে জানান, তাদের সারা বছরের পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখের গম হারাম হয়ে গেছে এবং মহাজনের ঋণের টাকা সহ স্কিম মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত টাকা-পয়সা দেওয়ার মতো শক্তি-সামর্থ্য তাদের আর নেই। তারা এখন নিঃস্ব হয়ে গেছে, ভবিষ্যতে তারা কী করবেন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। দিনের স্বপ্নের ফসল পাকা ইরি ধান কেটে সংরক্ষণের নানাবিধ সমস্যার কথা তাদের কাছ থেকে উঠে এসেছে।
আকস্মিক বর্ষা ও ঢলের পানিতে তলিয়ে যাওয়া এলাকাগুলো হচ্ছে: উপজেলার ভাঙ্গুরা সদর (আংশিক) ও অষ্টমনিষা (আংশিক) ইউনিয়নের বাঁশবাড়িয়া, ডেঙ্গারপাড়া, জোঁকা ও গদাইরুপসী; দিলপাশার ইউনিয়নের (আংশিক) দিলপাশার, মাগুড়া, চকলক্ষ্মীকোল, তাড়াপুর, আদাবাড়িয়া, বাশুড়িয়া, পাটুল এবং খাদ্যভান্ডারখ্যাত বৃহত্তর খানমরিচ ইউনিয়নের শ্রীপুর, জয়রামপুর, রামানাথপুর, দুধবাড়িয়া, হেলেঞ্চা, পুকুরপাড়, সাতবাড়িয়া ও কয়ড়া মাঠ। এছাড়াও চাটমোহর ও বড়াইগ্রাম উপজেলার কয়েক হাজার হেক্টর জমির কাঁচা-পাকা ইরি ধান পানিতে ডুবে গেছে।
খানমরিচ ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামের কৃষক ও ৩টি স্কিম মালিক আজহার আলী, দুলাল মিয়া, মোকসেদ আলী এবং উপজেলার ভাঙ্গুরা ইউনিয়নের স্কিম মালিক আলী আহমেদ, সাইদুল ইসলাম, রুস্তম আলী, মতিউর রহমান খান, আমিনুল ইসলাম, শরীফ আহমেদ জানান, আমাদের স্কিমগুলো নিচু এলাকায় হওয়ায় আমাদের ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়েছে—প্রায় সব আবাদি জমির ধান তলিয়ে গেছে। তারা আরও জানান, মহাজনের কাছ থেকে ঋণ করে আমরা স্কিম পরিচালনা করে থাকি। এ বছরে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে মহাজনের টাকা পরিশোধ করা আমাদের জন্য কষ্টদায়ক হবে। পরিবার-পরিজন নিয়ে খেয়ে না-খেয়ে দিনযাপন করতে হবে। এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক ও স্কিম মালিকদের ক্ষতিপূরণের জন্য সরকারিভাবে এগিয়ে আসা বিশেষ প্রয়োজন বলে তারা আশা করেন।
স্কিম মালিকরা জানান, আকস্মিক বর্ষা ও ঢলের পানিতে শ্রীপুর, জয়রামপুর ও কয়ড়া গ্রামের মাঠের পাকা ইরি ধানের সব জমি তলিয়ে গেছে। তারা হতাশার সঙ্গে জানান, এলাকায় ধান কাটার কামলা সংকটের কারণে নিজস্ব জমি ও স্কিমের আওতাধীন প্রায় ২০০ একরের বেশি জমির পাকা ইরি ধান পানিতে ডুবে গেছে।
খাদ্যশস্য ভান্ডারখ্যাত খানমরিচ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ মনোয়ার হোসেন খান মিঠু জানান, আকস্মিক বর্ষা ও ঢলের পানিতে তার ইউনিয়নের কমপক্ষে ২০-২৫টি গ্রামের মাঠে লাগানো শতাধিক একর জমির পাকা ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। বর্তমানে এলাকায় তীব্র কামলা সংকটের কারণে কৃষকরা জমির পাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে দুর্ভোগে পড়েছেন। খানমরিচ ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ধান কাটার জন্য কৃষকদের মধ্যে পলিথিন পেপার (বায়ুবদ্ধ করে) ভাসমান নৌকার মতো তৈরি করে সরবরাহ করা হচ্ছে। বর্তমানে অধিকাংশ পাকা ইরি ধানের জমি ২-৩ ফুট পানির নিচে ডুবে আছে এবং ২-৩ দিন ধরে পানিতে থাকার কারণে পাকা ধান বিনষ্ট হওয়ার পথে।
এ বিষয়ে ভাঙ্গুরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোছাঃ শারমীন জাহানের পক্ষে এস.ও. রনজিত কুমার বর্মণ জানান, উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত গুমানী ও বড়াল নদীতে আকস্মিক বর্ষা ও ঢলের পানি বৃদ্ধি পেয়ে, রুপসীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ সুইচগেট, বামুনজান রেল ব্রিজ, দিলপাশার দহ রেল ব্রিজ ও বংকিরাট রেল ব্রিজের ক্যানেল নদী দিয়ে খাদ্যশস্য ভান্ডারখ্যাত খানমরিচ, দিলপাশার ও অষ্টমনিষা ইউনিয়নের নিম্ন এলাকায় আকস্মিকভাবে পানি প্রবেশ করে প্রায় ২০০ হেক্টরের বেশি জমির পাকা ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে ডুবে যাওয়া ধান দু-এক দিনের মধ্যে কৃষক কেটে ঘরে তুললে কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। তিনি জানান, উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ যৌথভাবে আকস্মিক বর্ষা ও বন্যা বিষয়ে সতর্কীকরণ বার্তা প্রচার করে অগ্রিম ধান কাটার নির্দেশনা দিয়েছিল। কিন্তু তীব্র কামলা সংকটের কারণে কৃষকরা ধান কেটে ঘরে তোলার আগেই জমিতে পানি প্রবেশ করেছে, ফলে দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে ভাঙ্গুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ নাজমুন নাহার জানান, উপজেলার খানমরিচ, দিলপাশারসহ কয়েকটি ইউনিয়নের নিচু এলাকায় বর্ষা ও ঢলের পানি প্রবেশ করায় পাকা ইরি ধানের জমি প্লাবিত হয়েছে। তিনি জানান, উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা কৃষি বিভাগ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ সতর্কীকরণ বিভাগের যৌথ প্রচেষ্টায় কৃষকদের মধ্যে অগ্রিম সতর্কীকরণ বার্তা জানানো হয়েছিল। ফলে কৃষকের পাকা ধানের উল্লেখযোগ্য ক্ষতির সম্ভাবনা নেই।
সানজানা