ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বিক্রমপুরের বাহারি ইফতার

মীর নাসির উদ্দিন উজ্জ্বল

প্রকাশিত: ০১:১৮, ২৯ মার্চ ২০২৪

বিক্রমপুরের বাহারি ইফতার

বিক্রমপুরের বাহারি ইফতার

বিক্রমপুর তথা মুন্সীগঞ্জ শৌখিনদের এলাকা হিসেবে পরিচিত। এই অঞ্চলে মানুষ জমিদারের মতন উদার। এরা দেশের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, ধনাঢ্য পরিবারগুলো দুই হাতে টাকা খরচ করেন। দেশজুড়ে বিক্রমপুরীদের ব্যাপারে এটা একটি প্রতিষ্ঠিত প্রবাদ বা ধারণা। তবে প্রবাদ বা ধারণা যাই হোক এর সত্যতা দেখা যায় তখনই যখন বিক্রমপুরের কোনো পণ্য বা বিশেষ বস্তুর প্রতি অন্য জেলার লোকদের বাড়তি ঝোঁক তৈরি হয়। তখন বিক্রমপুরের ওই জিনিস না হলেই নয়।
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার অন্যতম ঐতিহাসিক স্থান মিরকাদিম। এখন যেটা পৌরসভা। এক সময়ের বাণিজ্য কেন্দ্র, হিন্দু-মুসলিম-খ্রিস্টান সখ্যর নিদর্শন, ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে জীবন্ত সাক্ষী মিরকাদিমের ইফতার বাজারের সুনাম এখন মুন্সীগঞ্জ ভেদ করে দেশজুড়েই। সোজা কথায়, সহজ ভাষায় অনেকেই ‘পুরান ঢাকা’র ইফতার বাজারও বলে মিরকাদিমকে।

আর চাওর হওয়া এই খবরে সরেজমিনে মিরকাদিম ইফতার বাজারে গিয়ে ক্রেতার ভিড়ে ঠিকমতো দাঁড়ানোই যায় না। দোকানির ব্যস্ততার মাঝেই হাতে ঢোঙা নিয়ে দুই দিকে দুজন ক্রেতার চাহিদা জানতে চেয়ে এবার এদিকে খেয়াল করে শুনাতে থাকলেন অভিজাত এই ইফতার বাজারের ভেতরের কথা। দোকানদার আব্দুল লতিফ মিরকাদিমে ব্যবসা করেন ২৩ বছর ধরে। মিরকাদিম বন্দর থাকা অবস্থায় তাদের এই দোকান।

তখন দক্ষিণাঞ্চল থেকে নদীপথে জাহাজ যোগে যে পণ্যগুলো আসত তাই আবার মিরকাদিমে বিক্রমপুরের ব্যবসায়ীরা পুরাতন ঢাকার সদরঘাটে ব্যবসায়ীদের কাছে পাঠাতেন। আর পুরান ঢাকার যে সকল ব্যবসায়ীরা তখন ব্যবসার প্রয়োজনে নিয়মিত মিরকাদিমে যাতায়াত করতেন, তখন তাদের চাহিদা মেটাতেই মিরকাদিমের ব্যবসায়ীরা তাদের পছন্দ অনুযায়ী খাবার তৈরি করতেন। এরই ধারাবাহিকতায় যখন রমজান আসত তখন তাদের পছন্দমতো ইফতার আইটেম বানানো হতো। আর সেই থেকেই এই প্রচলন।

মুন্সীগঞ্জের অন্য এলাকার ব্যবসায়ী যারা আবার যেত মিরকাদিমে তারাও অভ্যস্ত হয়ে যান। এভাবেই আজ অব্দি তারাও ধরে রেখেছেন ক্রেতার চাহিদা। আর এই চাহিদার মাত্রাও কম নয়! এক একটি দোকানে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার ইফতার বিক্রি হয়। অনেক সময় ক্রেতার চাপে বাড়তি লোক নিয়োগ দিতে হয়। অনেকে পুরান ঢাকা থেকে মিরকাদিমের ইফতারকে বেশি স্বাদের মনে করছেন। তারা খাঁটিভাবে সবকিছু করেন বলে সুখ্যাতি।

আর এখানকার গাভীর দুধের ছানা এবং মাঠা ও দইয়ের কদরও অনেক বেশি। তাই রাজধানীর অনেক পরিবার এখানকার পছন্দের ইফতার আইডেট অর্ডার করে নিচ্ছেন। মিরকাদিমের পৌরসভার গোপপাড়া গ্রাম এখন মাঠার গ্রামে সুপরিচিতি পেয়েছে। ছোট এই গ্রামটির ৫০ পরিবারই মাঠা বিক্রির সঙ্গে জড়িত। গ্রামটির জনপ্রিয় মাঠা বিক্রেতা বিদ ভঞ্জন ঘোষ বলেন, অনেক স্থানে মাঠা তৈরি এখন হয়। তবে মিরকাদিমের গোপপাড়া মাঠার একটা বিশেষ ঐতিহ্য আছে। স্বাদেও আলাদা। তাই কদর বেশি।

বেতকা থেকে ছানার পোলাও কিনতে এসেছেন সজল। সপ্তাহে ২-৩ দিন নিয়মিত এখান থেকে ইফতার কিনে নিয়ে যান তিনি। সজল বললেন, মিরকাদিমের ইফতারে আভিজাত্যের একটা ছোয়া আছে। আর তাছাড়া তিনি খুব ছোটবেলা থেকেই মিরকাদিমের ইফতারের সঙ্গে পরিচিত। তিনি যখন ছোট তার বাবা তখনও মিরকাদিমে গরুর দুধ বিক্রি করতে আসতেন, আর রমজানের সময় পরিবারের জন্য মিরকাদিম থেকে ইফতার কিনে নিয়ে যেতেন।
মীর নাসির উদ্দিন উজ্জ্বল, মুন্সীগঞ্জ

×